টিউশন ফি বাকি, কৃষ্ণ সেজে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে প্রসেনজিৎ
স্কুলে দু’মাসের টিউশন ফি বাকি ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীর। আর সে টাকা পরিশোধ করতেই বহুরূপীর সাজে কৃষ্ণ সেজে পুজার মণ্ডপে-মণ্ডপে ঘুরছে ওই ছাত্র। তার নাম প্রসেনজিৎ দেবনাথ। থাকেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান দাইহাটের ন-পাড়ায়। তার দিদার বাড়িতে।
প্রসেনজিতের মা মারা গিয়েছে ছোটবেলায়। তাদের বাবা ছেড়ে চলে গিয়েছেন অন্য কোথাও। ভরসা বলতে এখন কেবলই দিদা। দিদার বাড়িতে মামা, মামির সঙ্গে বসবাস দুই ভাই-বোনের। অন্য দিন প্রসেনজিৎ দিদার সঙ্গে বহুরূপী সেজে কাজে বের হলে তার বোন জয়া থাকে মামির কাছে।
ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র প্রসেনজিৎ স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। কিছু টাকা রোজগার হলে তা দিয়ে স্কুলের সকল পাওনা পরিশোধের আশায় মানুষের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছে এই কিশোর। তার বহুরূপী সাজার জিনিসগুলো গুছিয়ে দেয় তার দিদা। আর তার ছোট বোন জয়াও থাকে তার সঙ্গে। তাকে সাজিয়েও দেয় তার দিদা। প্রসেনজিতের দিদা রাধারানি রায় চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের মায়ের বাড়ির দিকে সবাই বহুরূপী সাজত। আমিও ছোটবেলায় কৃষ্ণ সেজেছি।’
আরও পড়ুন: স্কলারশিপ নিয়ে স্নাতকোত্তর করুন নেদারল্যান্ডে
অন্যদিকে, পুজোর সময়টায় বহুরূপী সেজে রোজগার করতে গিয়ে পড়াশোনায় ভাটা পড়ছে প্রসেনজিতের। টিউশনেও যাওয়া হয় না নিয়মিত। কিশোরের দিদা বলেন, ‘দিদিমণি বড় ভাল। বলেছি জগদ্ধাত্রী পুজোয় ঘুরে এসে যা রোজগার হবে, তা দিয়ে স্কুলের ফি মিটিয়ে দেব।’
সেজন্য শনি-রবি কৃষ্ণ সেজে আশপাশের গ্রামে ঘোরে প্রসেনজিৎ। সঙ্গে থাকেন রাধারানি। কিন্তু গ্রামের দিকে চাল, ডাল, আলুর বেশি খুব কিছু জোটে না। টাকা মেলে পুজো-পার্বণে শহরে গেলে। কৃষ্ণনগরে জগদ্ধাত্রী পুজো বুধবার। তার আগে সোমবার এক বার ঘুরে গিয়েছেন রাধারানি আর কৃষ্ণরূপী কিশোর। সারা দিনে যা রোজগার হয়েছে, তা থেকে পঞ্চাশ টাকার একটা জ্যামিতি বক্সও কিনেছে প্রসেনজিৎ।
বয়স্ক ভাতার টাকায় কৃষ্ণের সাজ কলকাতা থেকে কিনে এনেছিলেন রাধারানি। সেই দিয়েই চলছে। সারা দিনে কেউ প্রণাম করে। কেউ সেলফি তোলে। যার ভাল লাগে, সে কিছু অর্থসাহায্য করে। রাধারানি বলেন, ‘আসলে ভগবান সাজে তো। অনেকে প্রণামও করেন কৃষ্ণকে। তাই খালি পায়েই ঘুরতে হয়।’
কৃষ্ণ দিনের শেষে ফাটা পায়ে যখন ফেরার বাসে ওঠে, তখন তার ছোট্ট দু’পা অবশ হয় ধুলোমাখা ব্যথায়।
তথ্য: আনন্দবাজার পত্রিকা