প্রভাবশালী আলেম শায়খ ইউসুফ আল কারজাভি মারা গেছেন
বিশ্বখ্যাত আলেম শায়খ আল্লামা ইউসুফ আল কারজাভি ইন্তেকাল করেছেন। সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় দুপুরে কাতারের রাজধানী দোহায় তার ইন্তেকাল হয়। মৃত্যুকালে কারজাভির বয়স হয়েছিল ৯৬ বছর। তার ইন্তেকালের বিষয়টি নিশ্চিত করে শায়খ কারজাভির ছেলে কবি আব্দুর রহমান ইউসুফ।
শায়খ কারজাভির ছেলে কবি রূপক টুইট বার্তায় আব্দুর রহমান ইউসুফ জানান, ‘ঘোড়সওয়ার ঘোড়া থেকে নেমে গেলেন।’
শায়খের কারজাভির পেজে লেখা হয়, ‘ইমাম শায়খ ইউসুফ কারজাভি ইন্তেকাল করেছেন। যিনি তার গোটা জীবন ইসলামী বিধান প্রতিষ্ঠায় উৎসর্গ করেছেন।’
তিনি মিসরভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডের উপদেষ্টা ছিলেন শায়খ ইউসুফ আবদুল্লাহ আল কারজাভি। তিনি মিসরীয় বংশোদ্ভূত একজন প্রভাবশালী গবেষক আলেম।
মিসরীয় জাতিসত্ত্বার অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও শায়খ কারজাভি বসবাস করতেন কাতারে। তিনি কয়েকবার কারাবরণ করেন এবং সবশেষ মাতৃভূমি ত্যাগ করে কাতারে স্থায়ী হন মুসলিম ব্রাদারহুডের সাথে সম্পর্ক থাকার কারণে। মিসরের একটি আদালত তার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ জারি করে ২০১৫ সালে।
শায়খ কারজাভি মুসলিমদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি সংগঠনের সাথে সক্রিয়ভাবে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছিলেন। তিনি মুসলিম ধর্মতাত্ত্বিকদের অভিজাত সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব মুসলিম স্কলার্সের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন ২০০৪ সাল পর্যন্ত।
আরও পড়ুন: বৃত্তি নিয়ে পড়ুন যুক্তরাষ্ট্রের হবার্ট অ্যান্ড উইলিয়াম স্মিথ কলেজে
তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন জর্ডানের রয়্যাল অ্যাকাডেমি ফর ইসলামিক কালচারাল অ্যান্ড রিসার্স ইসলামী সম্মেলন সংস্থা (OIC), রাবেতা আল-আলম আল-ইসলামী এবং ইসলামিক স্টাডিজ সেন্টার, অক্সফোর্ড এর সম্মানিত সদস্য হিসেবে। তিনি আয়ারল্যান্ডভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ইউরোপিয়ান কাউন্সিল ফর ফাতওয়া অ্যান্ড রিসার্স’র প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন শায়খ কারজাভি।
তিনি আধুনিক উদ্ভূত নানা জটিল সমস্যার সাবলীল ও গভীর ইজতিহাদভিত্তিক সমাধানমূলক শতাধিক গবেষণা-গ্রন্থের রচয়িতা। তার গ্রন্থগুলো প্রকাশের পরপরই পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়ে জ্ঞানী, গবেষক, বোদ্ধামহল ও সাধারণ মানুষের কাছে সেগুলো ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পায়।
এই মনীষীর জন্ম ১৯২৬ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর, মিসরের উত্তর নীলনদের তীরবর্তী সাফাত তোরাব গ্রামে। দুই বছর বয়সে বাবা ইন্তেকাল করলে চাচা তার লালন-পালন করেন। তিনি সম্পূর্ণ কুরআন হিফজ করেন দশ বছর বয়সে।
শায়খ কারজাভি হিফজ সম্পন্ন করে আল-আজহার কারিকুলামে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা করেন। উচ্চ মাধ্যমিকে জাতীয় মেধায় দ্বিতীয় হন। প্রাচীন ইসলামী বিদ্যাপীঠ আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উসুলুদ দ্বীন অনুষদ থেকে অনার্স, আরবি ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা এবং পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।
শায়খ ইউসুফ কারজাভি মিসরের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিদর্শক হিসেবে কর্মজীবনে পদার্পণ করেন। কিছুদিন তিনি আওকাফ মন্ত্রণালয়ের এ কর্মরত ছিলেন। তিনি কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ে শরীয়াহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদের প্রতিষ্ঠাকালীন ডীন নিযুক্ত হন ১৯৭৭ সালে। ১৯৯০ পর্যন্ত তিনি এখানে কর্মরত থাকেন এবং একই বছর তার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় সীরাত ও সুন্নাহ গবেষণা কেন্দ্র।
শায়খ ইউসুফ কারাজাভি ইসলামী অর্থনীতিতে অবদান রাখায় ব্যাংক ফয়সল পুরস্কার লাভ করেন ১৪১১ হিজরিতে। ইসলামী শিক্ষায় অবদানের জন্য ১৪১৩ হিজরিতে মুসলিম বিশ্বের নোবেল খ্যাত কিং ফয়সাল অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন শায়খ ইউসুফ কারাজাভি। ব্রুনাই সরকার তাকে ‘হাসান বাকলি’ পুরস্কারে ভূষিত করে ১৯৯৭ সালে।
এছাড়াও তার বৈচিত্র্যময় পাণ্ডিত্যের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি নানা পদক ও সম্মাননায় ভূষিত হন কারাজাভি। তিনি কিং ফয়সাল ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় পদক, মালয়েশিয়া, আন্তর্জাতিক পবিত্র কুরআন সম্মাননা পুরস্কার, দুবাই, সুলতান হাসান আল বলকিয়াহ সম্মাননা, ব্রুনাই, আল-ওয়াইস পদক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্ডানের মেডেল অব ইন্ডিপেন্ডেন্সহ পদক ও সম্মাননায় ভূষিত হন।