ছিলেন স্কুলের টপার, দেহ ব্যবসায় না নামায় হত্যা?
কোলকাতার এক রিসোর্টে অঙ্কিতা নামে এক তরুণীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ওই রিসোর্টে রিসোর্টেই চাকরি করতেন তিনি। তার লাশ উদ্ধারের পর থেকে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। হত্যার সাথে জড়িত সন্দেহে এক বিজেপি নেতার ছেলেসহ তিনজনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
অঙ্কিতার পরিবারের বরাত দিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, অঙ্কিতা ভাণ্ডারীকে জোর করে যৌনপেশায় নামাতে চেয়েছিলেন উত্তরাখণ্ডের বিজেপি নেতার ছেলে পুলকিত। তবে তাতে রাজি ছিলেন না অঙ্কিতা। এ কারণেই তাকে হত্যা করা হয়েছে।
জানা গেছে, ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় দুর্দান্ত ছিলেন কোলকাতার পৌড়ী গঢ়বালের বাসিন্দা অঙ্কিতা ভান্ডারি। ছোট থেকেই পরিবারের দরিদ্রতা কাটানোর স্বপ্ন দেখতেন অঙ্কিতা। আর তাই স্কুলের ‘টপার’ হওয়া সত্ত্বেও উচ্চশিক্ষার বদলে রিসোর্টে চাকরি নেন তিনি।
অঙ্কিতার সহপাঠী বিবেক বলেন, ‘‘আমি অঙ্কিতার সঙ্গে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি। ২০২০-তে অঙ্কিতা আমাদের বিআর মডার্ন স্কুলে টপ করেছিল। সেরা ছাত্রীর পুরষ্কারও পেয়েছিল অঙ্কিতা। আমি কখনও ওঁকে গম্ভীর দেখিনি। সব সময় অন্যের প্রয়োজনে অঙ্কিতাকে দেখতে পেতাম। তাঁর এই পরিণতি বিশ্বাস করতে পারছি না।’’
এদিকে অঙ্কিতা হত্যার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এক বিজেপি নেতার ছেলে পুলকিত আর্য এবং তাঁর দুই বন্ধুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের তিন জনকেই ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
অঙ্কিতার বাবার দাবি, হোটেলে যে সব লোক আসতেন, তাঁদের শয্যাসঙ্গিনী হওয়ার জন্য চাপ দিতেন পুলকিত। কিন্তু অঙ্কিতা সেই প্রস্তাব বার বার প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। আর সেই আক্রোশেই তাঁদের মেয়েকে খুন করা হয়েছে বলে দাবি ।
রিসর্টের নিরাপত্তারক্ষীদের বরাত দিয়ে স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, খুন হওয়ার দিন অর্থাৎ গত ১৮ সেপ্টেম্বর অঙ্কিতা ফোনে কাঁদতে কাঁদতে তাঁর এক সহকর্মীর সঙ্গে কথা বলছিলেন। শুধু তাই নয়, রিসোর্ট মালিক পুলকিতের সঙ্গে কোনও একটি বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটিও হয়েছিল।
আটককৃতদের জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, ১৮ সেপ্টেম্বর রাতে তাঁরা চার জন হৃষিকেশে গিয়েছিলেন। ওই দিন রিসোর্টে অঙ্কিতা এবং পুলকিতের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। দুই সঙ্গীকে পুলকিত বলেন, ‘‘ওকে হৃষিকেশ নিয়ে যাওয়া উচিত। চলো আমরা সেখানে যাই।” তার পর তাঁরা সকলে এক সঙ্গে রিসোর্ট থেকে বেরিয়ে যান।
চারজন এক সঙ্গে রিসোর্ট ছাড়লেও তারা আলাদা আলাদা গাড়িতে গিয়েছিলেন। হৃষিকেশ ব্যারেজ হয়ে তাঁরা সকলে এমসের কাছে পৌঁছান। এরপর তাঁরা সেখান থেকে চিলা রোডে যান। খালের পাশেই এই রোড। খালের ধারে একটি অন্ধকার জায়গা বেছে নেন পুলকিতরা। পুলিশকে ধৃতরা জানিয়েছেন, খালের ধারে বসেও অঙ্কিতা সঙ্গে আর এক দফা কথা কাটাকাটি হয় পুলকিতের।
তবে এ বার পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। অঙ্কিতা পুলকিতকে ধমকি দেন, রিসোর্টে তাঁর সঙ্গে যা ঘটেছে, সব বলে দেবেন। তার পরই পুলকিতের ফোন খালে ছুড়ে ফেলে দেন অঙ্কিতা। তখন পুলকিতরা মত্ত অবস্থায় ছিলেন। ফোন খালে ফেলে দেওয়ার পরই অঙ্কিতাকে মারধর করেন তিনজন মিলে। তার পর খালের জলে ফেলে দেন। তার পর সেখানে বসে অভিযুক্তরা মোমো দিয়ে মদ পান করেন। অঙ্কিতা তখন খালের জলে ডুবে যাচ্ছিলেন। ডুবে যাওয়ার আগে বার দুয়েক বাঁচানোর জন্য আর্জিও জানিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে ডুবতে দেখেও গাড়ি নিয়ে সেখান থেকে রিসোর্টের উদ্দেশে রওনা দেন পুলকিতরা।
সূত্র: আনন্দবাজার