সংস্কৃতি ও ক্রীড়ার মিলনে প্রাণবন্ত নারী কাবাডি বিশ্বকাপের উদ্বোধন
এগারো দেশের খেলোয়াড়, কোচ ও প্রতিনিধিদের রঙিন উপস্থিতি, ছাত্র-ছাত্রীর উচ্ছ্বাসে মুখরিত গ্যালারি—সব মিলিয়ে যেন এক উৎসবমুখর কাবাডি মঞ্চ। মিরপুর শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়াম মোড়ানো বিশ্বকাপের আয়োজনের পোস্টার, বিলবোর্ডে, নানা স্লোগানে। ‘খেল খেল খেল কাবাডি’—গানের তালে মেতে উঠল গ্যালারি। অতিথিরা বক্তব্য দেওয়ার সময় গ্যালারিতে আসা সমর্থকরা করতালিতে ভরিয়ে রাখলেন চারপাশ।
সবমিলিয়ে ২০১২ সালের পর ১৩ বছর কেটে গেছে, এবার আবারও বিশ্বকাপের মহা আয়োজনে উচ্ছ্বাসে ভেসে উঠেছে ক্রীড়াঙ্গন। বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো আয়োজন করছে বৈশ্বিক নারী কাবাডি বিশ্বকাপ—এটি যেন দেশের ক্রীড়াজগতের এক নতুন দিগন্ত। আয়োজন ও প্রস্তুতির নিখুঁততা দেখে অভ্যাগতরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন, আর এই মুহূর্ত যেন কেবল খেলা নয়, এক প্রতিজ্ঞা, এক উল্লাস, এক ঐক্যের প্রতীক
প্রধান অতিথি যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, ‘কাবাডি আমাদের কাছে একটি খেলার চেয়েও বেশি কিছু। এটি আমাদের সাহস, আমাদের ঐতিহ্য এবং আমাদের জাতীয় চেতনার প্রতীক। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বাংলাদেশিরা এই খেলার সাথে বেড়ে উঠেছে এবং এখন বিশ্বমঞ্চে। বাংলাদেশে এটি আয়োজন করা একটি স্বপ্ন পূরণের মতো।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজ বাংলাদেশের জন্য এটি একটি গর্বের এবং ঐতিহাসিক মুহূর্ত। আমরা এখানে দ্বিতীয় নারী কাবাডি বিশ্বকাপ-২০২৫ উদ্বোধন করতে এসেছি। উপস্থিত সকলকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আমাদের প্রিয় ঢাকায় প্রথমবারের মতো এই বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট আয়োজন করা কেবল একটি সম্মানের বিষয় নয়, এটি ক্রীড়া জগতে বাংলাদেশের সক্ষমতা এবং দৃঢ়তার প্রমাণ।’
আন্তর্জাতিক কাবাডি ফেডারেশনে সভাপতি বিনোদ কুমার তিওয়ারি বলেন, ‘প্রতিটি দলের খেলোয়াড়, কোচ, কর্মকর্তা সবাইকে ঢাকায় স্বাগতম। কাবাডি মানুষের মধ্যে বন্ধন দৃঢ় করবে, আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করবে বলে আমি আশা করি। আসুন এই প্রতিযোগিতাকে আমরা স্মরণীয় করে তুলি।’
বক্তব্য পর্বের পর স্টেডিয়ামের আলো নিভে যায়, আর শুরু হয় মনোমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক আয়োজন। আলো-আধারীর খেলা, ছায়ার নীরব ছোঁয়া—সব মিলিয়ে নৃত্যশিল্পীরা আদিবাসী ও আধুনিক গানের ছন্দে ফুটিয়ে তুললেন বাংলাদেশের আবহমান ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির রূপকথা। ঢাক-ঢোলের মৃদু ধ্বনি, বিভু ও সমতল নৃত্যের ছন্দ, পাহাড়ি আন্দোলনের রূপ—সব মিলিয়ে গ্যালারিতে উপস্থিত সমর্থকেরা উপভোগ করেন এক অনন্য কাব্যিক পরিবেশ। বাংলাদেশের মাঠের লড়াই শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত, এই সুর-নৃত্যের মিলন যেন প্রত্যেক দর্শকের মনে রেখে গেল ছোঁয়া-সিক্ত স্মৃতি।