এশিয়ার সবচেয়ে বড় আরচ্যারী উৎসবের জন্য প্রস্তুত ঢাকা
আগামী ৮ নভেম্বর ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে শুরু হচ্ছে তীর ২৪তম এশিয়ান আরচ্যারী চ্যাম্পিয়নশিপস। এশিয়ান আরচ্যারীর এই বৃহৎ আসর শুরু হয়ে ১৪ নভেম্বর শেষ হবে। প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে দুই ভেন্যুতে, জাতীয় স্টেডিয়ামে ৮ থেকে ১২ নভেম্বর এবং আর্মি স্টেডিয়ামে ১৩ ও ১৪ নভেম্বর।
এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো আরচ্যারীর এই মর্যাদার ইভেন্ট আয়োজন হচ্ছে ঢাকায়। এর আগে, ২০১৭ ও ২০২১ সালে সফলভাবে এই আয়োজন সম্পন্ন করেছিল বাংলাদেশ আরচ্যারী ফেডারেশন।
২৪তম এশিয়ান আরচ্যারী চ্যাম্পিয়নশিপস’র পাশাপাশি ৮ নভেম্বরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে ওয়ার্ল্ড আরচ্যারী এশিয়া কংগ্রেস ও নির্বাচন। বাংলাদেশ আরচ্যারী ফেডারেশনের সদস্য কাজী রাজীব উদ্দীন আহমেদ চপল এশিয়ান আরচ্যারী ফেডারেশনের সভাপতি পদে নির্বাচন করছেন। ৩২টি দেশের প্রতিনিধিরা কংগ্রেসে অংশ নিবেন।
চ্যাম্পিয়নশিপস উপলক্ষে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে এশিয়ান আরচ্যারী চ্যাম্পিয়নশিপস এবং কংগ্রেস নিয়ে কথা বলেন বাংলাদেশ আরচ্যারী ফেডারেশনের সভাপতি ও সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান, সাধারণ সম্পাদক তানভীর আহমেদ, চ্যাম্পিয়নশিপসের লোকাল অর্গানাইজিং কমিটির চেয়ারম্যান কাজী রাজীব উদ্দীন আহমেদ চপল, পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের বিক্রয় ও বিপণন বিভাগের নির্বাহী পরিচালক জাফর উদ্দিন সিদ্দিকী।
এবারের আসরে ৩০টি দেশের আরচ্যাররা অংশ নিবেন। রিকার্ভ ও কম্পাউন্ড মিলিয়ে মোট ১০টি ইভেন্টে হবে পদকের লড়াই। সব মিলিয়ে ২০৯ জন প্রতিযোগী এবারের আসরে অংশ নিতে যাচ্ছে। এর মধ্যে ১১৯ পুরুষ ও ৯০ মহিলা আরচ্যার। রিকার্ভ ইভেন্টে ১১৭ (পুরুষ ৬৫ ও মহিলা ৫২) ও কম্পাউন্ড ইভেন্টে ৯২ জন (পুরুষ ৫৪ ও মহিলা ৩৮) আরচ্যার অংশ নিবেন।
ফেডারেশন সভাপতি ড. মো. মোখলেস-উর-রহমান বলেন, “এবার যে আরচ্যারীর কংগ্রেসে কাজী রাজীব উদ্দীন আহমেদ চপল সভাপতি পদপ্রার্থী। তিনি যদি নির্বাচিত হতে পারেন, তাহলে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে এশিয়ান আরচ্যারীর অফিস চার বছরের জন্য বাংলাদেশে আসবে। আমরা খুব আশাবাদী।”
এবারের আরচ্যারী চ্যাম্পিয়নশিপে ফিলিস্তিন, লেবাননের মত দেশগুলো অংশগ্রহণ করছে। ভারত-পাকিস্তান এসেছে, বন্ধু দেশ নেপাল ও আফগানিস্তান আসছে।
কাজী রাজীব উদ্দীন আহমেদ চপল বলেন, “ফিলিস্তিনের সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়টি সবাই জানে। অন অ্যারাইভাল ভিসার মাধ্যমে আনার ব্যবস্থা করছি তাদের। লেবানন, সিরিয়া আছে, ইয়েমেন আছে, আরও অনেক দেশ আছে তাদের এলওসির মাধ্যমে বিশেষ প্রনোদনা দিয়ে আনা হচ্ছে। এবার যদি আমাদের ভালো সাফল্য আসে, তাহলে আমরা আরেক ধাপ এগিয়ে যাব। আমরা চাই সুন্দর একটা চ্যাম্পিয়নশিপস আয়োজন করতে।
তিনি আরও বলেন, আমরা যখন ২০২৩ সালে ব্যংককে বিডে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল ভারত ও চীন। ভারত আমাদের ছেড়ে দিয়েছিল। চীন অনেক শক্তিশালী দেশ। কিন্তু ভোটে আমরা বেশি ১৪-১০ ভোট পেয়ে এই আসরের আয়োজক হবার স্বত্ব লাভ করি। এর আগে বিভিন্ন টুর্নামেন্টে আমরা অনেক পদক পেয়েছি। স্বর্ণ ৪২টি, রৌপ্য ৫১টি ও ব্রোঞ্জ ৫৪টির বেশি পেয়েছি। আমরা অবশ্যই চাইব এবার বাংলাদেশ সাফল্য পাক। সেমি-ফাইনাল টপকাতে পারলে আশা করি, ফাইনালেও ভালো করব। এবারের আসরে একটা চমক হচ্ছে, অনেক অলিম্পিয়ান আসছে ঢাকার মাঠে। শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ের জন্য প্রতিটি দেশই সেরা দল নিয়ে আসছে।’
এবারের আসরে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো হচ্ছে: ভূটান, চায়না, হংকং চায়না, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, ইরান, ইরাক, জর্ডান, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, দক্ষিণ কোরিয়া, সৌদি আরব, লেবানন, মালয়েশিয়া, নেপাল, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন, কাতার, সিরিয়া, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, তাজাকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, তিমুর লেস্তে, চাইনিজ তাইপে, সংযুক্ত আরব আমিরাত, উজবেকিস্তান, ভিয়েতনাম, ইয়েমেন ও স্বাগতিক বাংলাদেশ।
২০২১ সালের আসরে একটি রূপা ও দুটি ব্রোঞ্জ পেয়েছিল বাংলাদেশ; রিকার্ভ মিশ্র দ্বৈতে এসেছিল রূপা। ছেলে ও মেয়েদের দলগত রিকার্ভে বাংলাদেশ পেয়েছিল দলগত ব্রোঞ্জ।
এশিয়ান আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য বাংলাদেশ দল:
রিকার্ভ পুরুষ দল: আব্দুর রহমান আলিফ, মো. সাগর ইসলাম, মো. রাকিব মিয়া ও রামকৃষ্ণ সাহা।
রিকার্ভ মহিলা দল: সিমা আক্তার শিমু, ইতি খাতুন, সোনালি রায় ও মোসা. মনিরা আক্তার।
কম্পাউন্ড পুরুষ দল: মোহাম্মাদ আশিকুজ্জামান, হিমু বাছাড়, নেওয়াজ আহমেদ রাকিব ও মো. সোহেল রানা।
কম্পাউন্ড মহিলা দল: বন্যা আক্তার, পুষ্পিতা জামান, কুলসুম খাতুন ও মিথিলা আক্তার।
কোচ: মার্টিন ফ্রেডরিক (প্রধান কোচ), মো. নুরে আলম, মোহাম্মাদ হাসান ও রিনা চাকমা।
টিম ম্যানেজার: উইং কমান্ডার মোহাম্মাদ একরামুল হক।