সব সূচকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এগিয়ে জামিয়া মিলিয়া
ভারতে একটি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। নাম শুনলে অনেকে মাদ্রাসা মনে করতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম হলো জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। ওয়ার্ল্ড র্যাঙ্কিংটা জানুন। কিউএস ওয়ার্ল্ড র্যাঙ্কিং হলো ৭৫১-৮০০। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হলো ৮০১-১০০০ এর মধ্যে। আর টাইমস হাইয়ার এডুকেশন বা টিএইচই-এর রেঙ্কিং-এ জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার র্যাঙ্কিং হলো ৬০১-৮০০। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হলো ৮০১-১০০০ এর মধ্যে।
তার মানে সব ইন্ডেক্সেই জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেটার। এইবার শুনুন কারা জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া থেকে পড়াশুনা করে বিখ্যাত হয়েছে। নোটেবল অ্যালামনাইদের মধ্যে আছে শাহরুখ খান, ভিরেন্দার শেহবাগ, প্রখ্যাত সাংবাদিক বারখা দত্ত, আখলাকুর রহমান কুদাই ছাড়াও অনেকেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে, বাইরে অন্দরে অন্দরে তা নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করে এই বিশ্ববিদ্যালয় এখন পিচ্ছিল পথে খাদের দিকে প্রবাহমান। কল্পনা করা যায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে ছাত্ররা এখন দাবি করে যে, ‘ছোট পোশাক পরে বিপরীত লিঙ্গকে সিডিউস করা বন্ধ করুন।’ এখানে বিপরীত লিঙ্গদের সিডিউস মানে কেবল পুরুষদের সিডিউসের কথা বলা হয়েছে। যে দাবি করেছে তাকেই দেখা গেছে পশ্চিমা দেশের শর্টস পরা অবস্থায়।
আমাদের মেয়েরা কি পরবে এটা নিয়ে ছেলেদের এত মাথা ব্যথা কেন? আর কি সাংঘাতিক কথা যে, মেয়েদের ছোট পোশাক দেখলে ছেলেরা সিডিউসড হয়ে যায়। এদেরতো চিকিৎসা প্রয়োজন। এরা যদি ইউরোপ আমেরিকায় যায়, ওখানে গিয়ে ওরা কি করবে? তাহলে শুনুন একটা ঘটনা।
আমি তখন জার্মানিতে। আমার বড় কন্যার বয়স তখনো এক বছর হয়নি। কন্যাকে নিয়ে প্রায়ই পার্কে ঘুরতে যেতাম। বিশাল বড় পার্ক। একবার ঘুরতে ঘুরতে পার্কের অন্য প্রান্তের কাছাকাছি চলে গিয়েছিলাম। জানতাম না যে এটি একটি এক্সক্লুসিভ এরিয়া। ওখানে দেখি পরিবারের বাবা মা সন্তানেরা মিলে একদম উলঙ্গ হয়ে কেউ ভলিবল খেলছে, কেউ এমনি ছুটাছুটি করছে ইত্যাদি। আমরাতো কন্যার পুশ চেয়ার ঠেলে যাচ্ছি।
আরো পড়ুন: বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো ব্যারাকে পরিণত হলো কীভাবে
পথে পথে দেখি আশ্চর্য দৃশ্য। আমার স্বজাতি ভাইয়েরা ঝোপ ঝড়ের আড়ালে বসে এইসব দৃশ্য দেখছে। সেদিন আমি আমার স্ত্রীর কাছে ভীষণ লজ্জা পেয়েছিলাম। এই হলো ছোট পোশাক দেখলে বিপরীত লিঙ্গের সিডিউসড হওয়ার উদাহরণ। যে মানুষগুলো তাদের পরিবার নিয়ে উলঙ্গ হয়ে খেলছে তাদের হিজাব চোখে আর মনে, শরীরে না। মানুষের মন সবচেয়ে শক্তিশালী।
এই পরিবারগুলো অশিক্ষিত বর্বর? তারা কি তাদের সন্তানদের ভালোবাসে না? যারা ওখানে ছিল তারা অত্যন্ত আলোকিত শিক্ষিত মানুষ। চোখে হিজাব পরা এত সহজ না। শুধু এইটা না। পশ্চিমা দেশের সমুদ্র সৈকতে মেয়েরা বিকিনি পরে সমুদ্র স্নান করে। কিছু কিছু জোন আছে যেখানে টপলেসও থাকে। সেখানকার ছেলেরা কি সিডিউসড কোন অঘটন ঘটায়? আমরা যত বেশি শিক্ষিত হবো আমাদের লজ্জা তত শরীর থেকে চোখে যাবে।
পশ্চিমা দেশ কেন? পৃথিবীর অনেক আদিবাসী মানুষ আছে যেখানে নারীরা ছোট পোশাক এমনকি টপলেসও থাকে। ওখানকার ছেলেরাও কিন্তু সিডিউসড হয় না। এইসব দাবি যেই ছেলেরা করে এরা ডেঞ্জারাস। এরা বিদেশে গেলে অঘটন ঘটিয়ে ফেলবে। তারা এমন হচ্ছে কেন? এই হওয়াটাই প্রমান করে আমরা প্রপার শিক্ষা দিতে পারছি না। শিক্ষার মান নিম্নগামী। শিক্ষার মান যে নিম্নগামী এইটা বোঝার মানুষ না থাকাও প্রমান করে অশিক্ষা আজ নেতৃত্ব পর্যন্ত ছেয়ে গেছে।
লেখক: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়