‘মেধার তীব্র সংকটে দেশ এখন বলদদের স্বর্গরাজ্য’

ড. মো. কামরুল হাসান মামুন
ড. মো. কামরুল হাসান মামুন  © ফাইল ছবি
প্রতি বছর আমাদের দেশ থেকে হাজার হাজার শিক্ষার্থী আন্ডার গ্র্যাজুয়েট এবং পোস্ট গ্র্যাজুয়েট পড়ার জন্য বিদেশে যাচ্ছে। এদের বিরাট একটি অংশ স্কলারশিপ নিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট বা পিএইচডি করতে যারা যাচ্ছে তাদের সবাই স্কলারশিপ বা কোন না কোন ফান্ডিং পেয়ে যাচ্ছে। আন্ডার গ্র্যাজুয়েট লেভেলে স্কলারশিপ পাওয়া খুব কঠিন। এরমধ্যে ফুল স্কলারশিপ খুব খুব কম পায়। তবে ২০% থেকে ৮০% স্কলারশিপ অনেকেই পায়।
 
আবার সম্পূর্ণ নিজ খরচেও অনেকে যায়। যারা ২০% থেকে ৮০% স্কলারশিপ পায় তারা অত্যন্ত মেধাবী। আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয় বা লিবারেল কলেজগুলো মেধার ব্যাপারে কোন ছাড় দেয় না। এমনকি সম্পূর্ণ টিউশন ফী দিয়ে যারা যায় তাদের ব্যাপারেও না। স্কলারশিপ নির্ভর করে মেধা এবং পরিবারের আর্থিক সঙ্গতির উপরে। তারা নিশ্চিত করে যে মেধা থাকা সত্বেও অর্থের কারণে যেন কেউ suffar না করে।
 
এই দেশ থেকে বিশাল সংখ্যক মেধাবী বিদেশে যাচ্ছে তাদের কতজন ফিরে আসছে তার কি কোন গবেষণা আছে? তাদের কত শতাংশ ফিরে আসলে দেশে চাকুরী পাচ্ছে তার কি কোন গবেষণা আছে? ফিরে আসলে কোথায় কীভাবে তারা চাকুরীর মাধ্যমে accommodated হবে, তার কি কোন সিস্টেম আছে? তাদেরকে কিভাবে কাজে লাগানো যায় সেটা নিয়ে আমাদের সরকারের মধ্যে কি কোন ভাবনা আছে?
 
এদেরকে কিভাবে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি চাকরিতে নিয়োগ দেওয়া যায় সেটা নিয়ে কি কেউ ভাবে? এদের কাজে লাগানোর জন্য আমাদের পলিসি তৈরি করতে হবে। এদের মেধা এবং বৈশ্বিক অভিজ্ঞতাকে আমাদের কাজে লাগাতে হবে। এরা যখন দলে দলে দেশে ফিরে আসবে তখনই দেশ বদলে যাবে।
 
নিজ দেশে একটি ভালো মানের বিশ্ববিদ্যালয় নাই বলে পড়াশুনা করতে বিদেশে যাচ্ছে। যদি দেশে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় থাকতো তাহলে এদের অনেকেই এখানেই পড়তো। তারপর ফিরে আসলে চাকরি পাওয়ার ভালো সম্ভবনা থাকলে, ব্যবসা করার ভালো পরিবেশ পেলে এদের অনেকেই ফিরে আসতো।
 
 
চীন যে এখন অর্থনৈতিকভাবে এত ভালো তবুও তাদের দেশ থেকে যারা আমেরিকা বা ইউরোপে যায় একটি বড় অংশ থেকে যায়। কিন্তু increasingly বেশি হারে ফিরে যাচ্ছে যা প্রমান করে চীন উন্নত হচ্ছে। তাদের মেধাবীদের ফিরিয়ে নিতে চীন নানারকম প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে। এর একটি হলো সহস্র টেলেন্টস হান্ট প্রজেক্ট। আমাদের নীতিনির্ধারকরা কখনো কি এইসব নিয়ে ভেবেছে?
 
তারা ভাবে কীভাবে নানা হাস্যকর প্রজেক্ট বানিয়ে বিদেশে ট্রেনিং-এ যাওয়া যায়। শুধুই শিক্ষার্থীরা বিদেশমুখী? আমাদের অনেক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, জাতীয় খেলোয়াড়, সংগীত শিল্পী, অভিনেতা, এমনকি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদেরও অনেকেই গত ১৫ বছরে বিদেশে অর্থবিত্ত নিয়ে গিয়ে স্থায়ী হয়েছেন। এর ফলে মেধা ও অর্থ দুইয়েরই পাচার ঘটেছে। তাতে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি শূন্যতা বিরাজ করছে।
 
এইভাবে দেশ মেধা শূন্য হচ্ছে বলেই দেশে এখন মেধার তীব্র সংকট চলছে। মেধাবীরা নেই বলে দেশ এখন বলদদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। সকল ক্ষেত্রে এখন বলদ, দুর্নীতিবাজ, চতুর, ঘুষখোরদের দৌরাত্ব চলছে। নতুন প্রজন্ম এদেরকে দেখে এদেরকেই সফল ভাবছে। এদেরকেই আদর্শ মানছে।
 
শিক্ষার্থীদের যারা বিদেশে যাচ্ছে তাদের একটি অংশকে ফিরিয়ে আনতে দেশে উন্নতমানের প্রতিষ্ঠান তৈরী করতে হবে যেখানে থাকবে না দলান্ধতা এবং যেখানে তাদের মেধা যাচাই সাপেক্ষে নিয়োগ দেওয়া হবে। তাতে দেশ উপকৃত হবে।
 
লেখক: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সর্বশেষ সংবাদ