এবারের ঈদ ঘিরে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা
ঈদ যেন মুসলিম বিশ্বে সকল গ্লানি ভেদাভেদ মুছে দেয়ার এক পবিত্র বার্তা নিয়ে আসে। ঈদের আনন্দ, পবিত্রতা ও মহিমা যেন পৃথিবীকে ঢেকে দেয় ভালবাসার চাঁদরে। গত দুই বছর করোনা মহামারীর রেশ কাটিয়ে এবার মুসলিমগণ উদযাপন করছে এক ভিন্ন রকম ঈদ। গত কয়েক বছরে যারা প্রিয়জনদের সাথে ঈদ আনন্দ ভাগ করে নিতেন তাদের অনেককেই হারিয়ে এবারের ঈদ যেন কিছুটা ফ্যাকাশে। এবারের সেই ভিন্নধর্মী ঈদ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের কথা তুলে ধরেছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস ডিআইইউ প্রতিনিধি সাদিয়া তানজিলা-
এবছর পরিপূর্ণ প্রফুল্লচিত্তে ঈদ পালন করতে পারব ইন শা আল্লাহ
নাহিদ হাসান তারেক,দর্শন বিভাগ,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রতিবছর ঈদকে ঘিরে আমাদের মাঝে প্রফুল্লতা বিরাজ করে। ঈদে বাড়ি যাওয়া, ছোটবেলার বন্ধুরা মিলে আড্ডা দেওয়া, একসাথে ঈদের নামাজ আদায় সব মিলিয়ে আনন্দঘন পরিবেশেই ঈদ উদযাপন করা হয়। যেহেতু গতবার করোনার প্রাদুর্ভাবের জন্য একটা সীমাবদ্ধতা ছিল, আশা করি এবছর পরিপূর্ণ প্রফুল্লচিত্তে ঈদ পালন করতে পারব ইনশাআল্লাহ। এক মাস সিয়াম সাধনার পর ঈদের দিন একসাথে সালাত আদায়, একে অপরের বাড়িতে যাওয়া সব মিলিয়ে সকল শ্রেণি পেশার মানুষের মাঝে সিয়াম সাধনার মূল চিত্র মহিমান্বিতরূপে ফুটে উঠবে এই আশা করি।
নাহিদ হাসান তারেক, দর্শন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
স্বপ্ন দেখি সমাজের প্রতিটি মানুষের মুখে হাসি ফুটবে
ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের সবচেয়ে বড় আনন্দের উৎসব ঈদ। মহামারীর সময় কাটিয়ে প্রায় দু বছর পর হতে যাচ্ছে একটি স্বস্তিপূর্ণ ও আনন্দময় ঈদ।কিন্তু সমাজের সবার আনন্দ ছাড়া ঈদ পরিপূর্ণ হয় কি? পরিবারহীন মানুষদের কাছে ঈদ বা উৎসব মানেই এক যন্ত্রণাদায়ক কষ্টের নাম। সবাই যেখানে পরিবার নিয়ে আনন্দেমেতে উঠে, সেখানে তারা একা নিজেদের কষ্ট লুকায় সবার আড়ালে। দরিদ্র অসহায় মানুষদের জীবনেও ঈদ তেমন কোনো ভালো প্রভাব ফেলতে পারেনা। তাদের অনেকেরই হয়তো অর্ধাহারে-অনাহারে বা অতি সাধারণভাবে কেটে যায় ঈদের দিনটিও।ডাক্তার,পুলিশ, সংবাদকর্মী, নিরাপত্তাকর্মীসহ বেশকিছু পেশার মানুষও ঈদের আনন্দ ত্যাগ করে নিয়োজিত থাকে সাধারণ মানুষের সেবায়।
শুধু নিজ হাসি-আনন্দের কথা না ভেবে আমাদেরও উচিত এসব মানুষের পাশে এসে দাঁড়ানো।একটি সুন্দর ঈদের স্বপ্ন দেখি, যেই ঈদে সমাজের প্রতিটি মানুষের মুখে হাসি ফুটবে। পরিবার-পরিজনদের সাথে আনন্দে কাটবে তাদের ঈদ।
তাসনিয়া মাসিয়াত, স্থাপত্য বিভাগ, চুয়েট।
সবাই ঘরে ফিরুক সুস্থভাবে
প্রতি বছর ঘুড়ে আসে এই ঈদ তাই আনন্দটাও অনেক বেশি। তবে এবারের ঈদ একটু বেশি আনন্দের। মেডিকেল লাইফে আসার পরে খুব বেশি সময় পরিবারকে দেয়া যায় না। বেশির ভাগ সময় কেটে যায় ক্যাম্পাস জীবনটায়। এই ঈদের ছুটিতেই একটু স্বস্তি নিয়ে পরিবারের সবার সাথে একটা সুন্দর সময় কাটানোর সুযোগ হয়। সারাদিন পরিবারের প্রিয় মুখগুলোর সাথে কথায় আড্ডা, ঘোরাঘুরি ও পুরোনো বন্ধু বান্ধবদের সাথেও দেখা হয়। সব মিলিয়ে প্রতি বছরের ন্যায় এবারো সুন্দর একটা ঈদ কাটাবো পরিবার পরিজন ও বন্ধু বান্ধবদের সাথে ইনশাআল্লাহ এতটুকুই আশা। ঈদের মহিমায় সবার জীবনে বয়ে আসুক অনাবিল সুখ, শান্তি ও ভালোবাসা। ভালোবাসায় সিক্ত হোক প্রতিটি পরিবার।সবাই ঘরে ফিরুক সুস্থভাবে এবং পরিবার প্রিয়জন ও বন্ধু বান্ধবকে উপহার দিক একটা সুন্দর আনন্দমুখর দিন।
আব্দুল্লাহ আল পাভেল, এমবিবিএস চতুর্থ বর্ষ, গণস্বাস্থ্য সমাজ ভিত্তিক মেডিকেল কলেজ, সাভার।
ঈদের আনন্দ আগের চেয়ে কমেছে কিন্তু দায়িত্ব বেড়েছে
ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ আসে ভুলিয়ে দিতে সকল বিভেদ দ্বন্দ্ব। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পরে আমাদের মাঝে ঈদ এসেছে। পরিবারের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়ার মজাই আলাদা। গত বছর ঈদে বাড়িতে আসা হয়নি। তাই এবার আগে ভাগেই বাড়িতে এসেছি। ঈদ মানেই বছরের নির্দিষ্ট সময়ে আত্নীয় স্বজনের বাড়িতে যাওয়া, তাদের খোঁজখবর নেওয়া। ঈদের আনন্দ আগের চেয়ে কমেছে কিন্তু দায়িত্ব বেড়েছে। ছোট থেকে বেড়ে ওঠা নিজের এলাকায় সবার সাথে আনন্দ ভাগাভাগি করার মাধ্যমে প্রকৃত ঈদের আনন্দ পাওয়া যায়।
আহসান হাবীব, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, রুয়েট।
ধনী-গরীবের বৈষম্য নিঃশেষ করার মধ্যে দিয়ে আত্নতৃপ্তি লাভ হোক
ঈদ মানে আনন্দ ঈদ মানে খুশি। একমাত্র ঈদে পরিবারের সবাই যে যেখানে থাকে সেখান থেকে নিজের শিকড়ে নাড়ির টানে পারি জমায়। গত দুই বছর ২০২০ থেকে ২০২১ পর্যন্ত একটি খুবই ভয়ঙ্কর সময় গেছে আমাদের সবার মাঝে। এর মধ্যে যে চারটি ঈদ গত হয়েছে, কেউই আমরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঈদগুলো পালন করতে পারিনি। পরিবেশ এখন অনুকূলে, করোনা নামক কালো মেঘ কেটে যাচ্ছে। তাই আশা করা যায় এবারের ঈদ আগের দুটি ঈদের চেয়ে ভালো কাটবে। সকলে মিলে হই হুল্লোড়ে জমে উঠেবে ঈদের আমেজ। পরিবারের সকলের ফের মিলবে মানসিক শান্তি। শেষ দুটি বছর সবাই আমরা সবার থেকে দূরে, তাই এই বছর সব আত্নীয় স্বজন সবার সাথে সুন্দর সময় গুলো কাটাতে চাই, কাটাতে চাই দুই বছর না করা আনন্দ গুলো, যে গুলো স্মৃতি হয়ে রয়ে যাবে আমাদের মাঝে। আমাদের সকলের উচিত ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে আপন শক্তিতে সকলে ভালোবাসা এবং ঈদ আনন্দ সবার সাথে ভাগাভাগি করে নেয়া। ধনী-গরীবের বৈষম্য নিঃশেষ করার মধ্যে দিয়ে আত্নতৃপ্তি লাভ হোক এই ঈদের প্রতাশা।
হুমায়রা আনজুম শ্যামসি, কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ডিআইইউ
ঈদের মধ্য দিয়েই মানুষ আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুক
এবারের ঈদকে ঘিরে বিশেষ কোনো পরিকল্পনা নেই। অনার্স শেষের দিকে হওয়ায় যমুনা টেলিভিশনে এরই মধ্যে আমার কর্মজীবন শুরু হয়েছে। তাই ঈদের দিনটিও অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকব। তবে অফিস শেষে পরিবারকে সময় দেব। হয়তো কোথাও ঘুরতে যাবো সবাই মিলে কিংবা বাড়িতেই সকলের সাথে উদযাপন করব। গত বছরের তুলনায় অবশ্যই এবারে ভালো ঈদ কাটবে। করোনার কারণে পরপর দু’টি ঈদে পরিবারের সাথে দেখা হয়নি। এবার আমার পরিবার আছে ঢাকায়। অফিসের ব্যস্ততা শেষেও ঈদের দিন বাড়িতে এসে অন্তত পরিবারের সবার মুখ দেখতে পাবো, এটাই আনন্দ। করোনা এরই মধ্যে আমাদের অনেক কিছু শিক্ষা দিয়েছে। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমেছে, দারিদ্র্যতাও বেড়েছে। তবে এরই মধ্যে যেহেতু করোনার প্রকোপ কমতে শুরু করেছে, তাই এই ঈদের মধ্য দিয়েই মানুষ আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুক, করোনার মধ্যে যে বাস্তবতার সাথে আমরা পরিচিত হয়েছি সেগুলোকে কাজে লাগিয়ে অসহায়দের পাশে এসে দাঁড়াক মানুষ, এটিই কাম্য।
সুমাইয়া জামান, জার্নালিজম কমিউনিকেশন অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ, স্টেট ইউনিভার্সিটি
যারা ঈদের দিনেও গোপনে কাঁদে তাদের মুখে হাসি ফোটাতে পারলেই ঈদ পূর্ণতা পাবে
এখন এই সময়ে এসে আমার ছোটবেলার ঈদের দিনগুলোর কথা ভীষণ মনে পড়ে। সেসময়ের মত এখন আর আনন্দ খুঁজে পাই না। যত বড় হচ্ছি তত মানুষের বেশি কাছাকাছি আসার সুযোগ পাচ্ছি। এতে মানুষের দুঃখ কষ্ট বেশি নজরে আসছে। ছোটবেলায় ঈদের দিনে মানুষের হাসি দেখে হয়তো সত্যিই আনন্দ পেতাম, এখন অনেকের হাসি দেখলেই বোঝা যায় - এ হাসি কতশত দুঃখকে চাপা দিয়েছে। প্রতিবার ঈদ এলে আমার মনে হয় - যদি দুঃখ ভারাক্রান্ত এসকল মানুষের দুঃখ লাঘবে একটু পাশে দাঁড়াতে পারতাম। যারা ঈদের দিনেও গোপনে কাঁদে তাদের মুখে হাসি ফোটাতে পারলেই ঈদ পূর্ণতা পাবে।
আহসান হাবীব, আইন ও বিচার বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
প্রিয়জনরা যেন অপেক্ষায় আছে প্রিয় মুখটি দেখার
করোনা মহামারীতে বিগত দু'বছর আমাদের অনেক কষ্টে কেটেছে। আমাদের মধ্যে অনেকেই আমাদের প্রিয়জনকে হারিয়েছি। বর্তমান পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হলেও এবারের ঈদ আনন্দে কিছুটা শূন্যতা রয়েছে। তবে আবার পরিবারের সাথে ঈদ করতে পেরে বেশ আনন্দই লাগছে। সকলে নিজ নিজ কর্মস্থল থেকে যেন আনন্দের ঝোলা নিয়ে বাড়ি ফিরছেন প্রিয়জনদের কাছে। প্রিয়জনরা যেন অপেক্ষায় আছে প্রিয় মুখটি দেখার। এবারের ঈদ মুছে দিক সকল দুঃখ-কষ্ট গ্লানি। সকলের জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল আনন্দ সেই কামনাই করি।
ইমরান হাসান, ইংরেজি বিভাগ, ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশ