এক-দেড় মাসের মধ্যে করোনার নতুন ঢেউ আসতে পারে
করোনা মহামারি শেষ হয়নি। এক-দেড় মাসের মধ্যে আমরা আবারও নতুন করে করোনা সংক্রমণ দেখতে পাব। এ আশঙ্কা করছি, কারণ যারা করোনায় সংক্রমিত হয়ে সুস্থ হয়, তাদের শরীরে এই রোগের যে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়, তা তিন থেকে ছয় মাস পর্যন্ত থাকে। এরপর ক্রমে প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকে।
টিকা নিলেও একই অবস্থা তৈরি হয়। প্রায় দুই মাস আগে আমাদের দেশে করোনা সংক্রমণের ব্যাপকতা কমেছে। এ ধরনের সংক্রমণের ব্যাপকতা কমে যাওয়ার পর তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে আরেকটি ঢেউ আসার আশঙ্কা থাকে। সে জন্য আগামী এক-দেড় মাসের মধ্যে আবারও সংক্রমণ বাড়তে পারে ।
আর করোনার নতুন ধরন এলেও তার আগেই এ ঢেউ আসতে পারে। তবে করোনার নতুন ধরনের কথা এখনো শোনা যায়নি। দু-এক জায়গায় মিশ্র ধরন দেখা যাচ্ছে। এসব কারণে নজরদারি খুব ভালো থাকতে হবে। নতুন করে আবারও করোনা সংক্রমণ বাড়লে তা ঠেকানোর জন্য সবাইকে সজাগ ও সতর্ক হতে হবে। ঘরের বাইরে গেলে মাস্ক পরা, সাবান দিয়ে হাত ধোয়া এসব স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে শিথিলতা চলবে না।
বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্রে যেখানে মানুষের ভিড় বেশি, সেখানে বাতাস চলাচল যেন বাধাগ্রস্ত না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। বাতাস চলাচল স্বাভাবিক থাকলে সেখানে করোনাভাইরাসের ঘনত্ব কমে যায়। সে কারণে এলাকা অনুপাতে সংক্রমণও কম হয়।
অফিস-আদালতে সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে হবে। শহরে যেসব এলাকায় নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাস, সেসব এলাকায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য প্রচারণা চালানো দরকার। ঈদের আগেই এসব বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন ছিল। কোথাও নতুন করে সংক্রমণ বাড়ার তথ্য পাওয়া গেলে সে এলাকায় নজরদারি জোরদার করতে হবে।
আরও পড়ুন : এ কেমন সরকার যে কেবল উন্নয়ন বলতে ভবন নির্মাণ বোঝে!
আর যারা এখনো করোনার টিকা নেয়নি, তাদের টিকা নিতে হবে। টিকায় সংক্রমণ ঠেকানো না গেলেও যারা টিকা নিয়েছে, তারা গুরুতর অসুস্থ হওয়া থেকে রক্ষা পাবে। এই বিষয়গুলো ভালোভাবে প্রচার করতে হবে। সবাইকে জানাতে হবে। দেশে হঠাৎ করে স্বাস্থ্যবিধি না মানার যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তা প্রত্যাশিত নয়।
ঈদ যাত্রাও এবার করোনার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। কাজের কারণে যারা পরিবার ছাড়া শহরে অবস্থান করছেন, কিংবা যারা ছোট পরিবার নিয়ে শহরে থাকেন, তাঁরা ঈদে গ্রামের বাড়ি যেতে চাইবেন, পরিবারের অন্য সব সদস্যের সঙ্গে মিলিত হতে চাইবেন, এটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু তাঁদের ঈদ যাত্রাটা নিরাপদ করতে হবে। যানবাহনের সংখ্যা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। আমাদের জনসংখ্যা বেড়েছে। সে অনুপাতে রাস্তার সংখ্যা বাড়েনি। এটাও একটা সমস্যা। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে বলছি, যাঁদের খুব প্রয়োজন নেই, তাঁরা যেন ভ্রমণ না করেন।
লেখক : সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নির্ণয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা।