১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১১:০৬

কত শত শিক্ষার্থীর জীবনের স্বপ্নকে ধুলোয় মিশিয়ে দিচ্ছি?

  © টিডিসি ফটো

অনেকদিন যাবৎ আমাদের শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববদিয়ালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগের দাবি জানিয়ে আসছে কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তা কর্ণপাত করছে না।

অতি সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী এই বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্যের পর পরই আমাদের ইউজিসিসহ কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা শিক্ষার্থীদের দাবিকে যৌক্তিক মনে করছে যদিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ এখনো সুস্পষ্ট কোন মন্তব্য করেনি। অথচ শিক্ষকরাইতো আমাদের শিক্ষার্থীদের অভিবাবক। আমাদেরইতো উচিত তাদের ভালোমন্দ তাদের চেয়ে আমাদের বেশি করে বোঝা এবং ভাবা।

উচ্চ মাধ্যমিক করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাওয়া শিক্ষার্থীদের বয়স কত? প্রথমবার ভর্তি পরীক্ষায় কোন কারণে ভালো করতে না পারলে সেই অল্প বয়সের শিক্ষার্থীদের কি পরিমান চাপ পরে বুঝতে পারছেন? পৃথিবীতে এমন আরেকটি দেশের নাম বলতে পারবেন যারা এই অল্প বয়সের শিক্ষার্থীদেকে এমন চাপে রাখে? কত কারণ থাকতে পারে যার জন্য অনেকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণই করতে পারেনা। কত কারণ থাকতে পারে যে কেউ কেউ শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে পরীক্ষা দিতে হয়েছে। তারাতো করুনা বা কৃপা চাচ্ছে না। ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে যোগ্যতা প্রমান সাপেক্ষেই ভর্তি হতে চায়।

শিক্ষকদের অনেকেই যেই যুক্তি দেন সেটা হলো অনেকেই ভর্তি হয়ে দ্বিতীয়বারের সুযোগ থাকলে আবার পরীক্ষা দিয়ে অন্য কোথাও ভর্তি হয়ে যায় ফলে সিটটা ফাঁকা থাকে। এটি একটি সমস্যা বটে। কিন্তু এটি আমাদের সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানের নামে তাদেরকে ভিক্টিম বানাতে পারিনা। কত শত শিক্ষার্থীর জীবনের স্বপ্নকে আমরা ধুলোয় মিশিয়ে দিচ্ছি তা কি বুঝতে পারছি? শিক্ষকদের মধ্যে যারা প্রশাসনে আছে তাদের উচিত স্ব প্রণোদিত হয়ে বোঝা।

অথচ কি আশ্চর্য আমাদের শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষার্থীদের দাবির সাথে একমত হওয়ার সাথে সাথে অনেক শিক্ষক এই দাবির যৌক্তিকতা খুঁজে পেলেন। এর আগে পেলেন না কেন? আর অনেকে তো তারপরেও পাচ্ছে না। শিক্ষকরা কতটা অশিক্ষক সুলভ হলে পরে এমন হতে পারে? সিট ফাঁকা সংক্রান্ত সমস্যাগুলো সমাধানের দায়িত্ব আমাদের। নিশ্চই এর বিকল্প সমাধান আছে। মাথা ব্যথা আছে বলে মাথা কাটার মত সমাধান কতটা যৌক্তিক?

ইউরোপ আমেরিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে "গ্যাপ ইয়ার" বলে একটি শব্দ আছে। এই "গ্যাপ ইয়ার" মানেই হলো দ্বিতীয় বারের সুযোগ। তবে সেই ক্ষেত্রে তারা যা করে শিক্ষার্থীর কাছে তারা জানতে চায় এই "গ্যাপ ইয়ার" সে কিভাবে কাটিয়েছে। ইউরোপ আমেরিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি যে কতটা গুরুত্ব দেয় তা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। তারা প্রতিটা শিক্ষার্থীর কাছ থেকে একটি রচনা চায়। সেই রচনা হতে হবে নিজের জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে। সে কেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চায় সেটা নিয়ে একটি বিশদ ব্যাখ্যা চায়। "গ্যাপ ইয়ার"-এ কি করেছে, কত ভালোভাবে কাজে লাগিয়েছে সেটা জানতে চায়। তাছাড়া পরীক্ষার ফলাফল, এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিজতো আছেই। এর উপর অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ইন্টারভিউও নেয়।

এসব পুরো কাজে যুক্ত থাকে এডমিশন অফিসার, সিনিয়র শিক্ষার্থী বা এলামনাইরা। মানে একজন শিক্ষার্থী ভর্তিকে যতটা গুরুত্ব দেয় আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগেও অতটা গুরুত্ব দেই না। আমাদের উচিত আমাদের ভর্তি প্রক্রিয়াকে আরো যুগোপযোগী করা এবং অনতিবিলম্বে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ দেওয়া।

লেখক: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়