লাখ লাখ শিক্ষার্থীর অনার্স-মাস্টার্স সার্টিফিকেটের কি মূল্য আছে?
যখন ফুলটা ফুটে প্রস্ফুটিত না হয় তখন তার বেড়ে উঠার পরিবেশকে ঠিক করার ব্যর্থতার দায় মালির, ফুলের নয়। ঠিক তেমনি আমাদের অসংখ্য সন্তানের পোটেনশিয়াল প্রস্ফুটিত হতে পারছে না তার জন্য আমাদের সন্তানেরা দায়ী না। দায়ী হলো সমাজ বা দেশ ঠিক করার জন্য যারা দায়িত্বে সেই সরকার।
এই যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে লাখ লাখ ছেলেমেয়ে ৪ বছরের অনার্স আর ১ বছরের মাস্টার্স সার্টিফিকেট পাচ্ছে এর কি মূল্য আছে? আমার গ্রামের বাড়ির পরিচিত বা আত্মীয় স্বজনরা ফোন করে বলে তার ছেলে বা মেয়ের জন্য যদি একটা চাকরি জোগাড় করে দিতে পারতাম। শিক্ষাগত যোগ্যতার কথা জিজ্ঞেস করলে গর্বের সাথে বলে মাস্টার্স। পরে যখন সন্তানের সাথে কথা বলি মনে হয় যেন হে খোদা একি হচ্ছে? কথার মধ্যেই অশিক্ষিতের ছাপ। অর্থাৎ উচ্চ মাধ্যমিক পাশ শিক্ষার্থীরাও অনেক সুন্দর করে কথা বলতে পারে।
এদের আসলে ৫ বছর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে চিন্তা-চেতনা লো হয়ে গেছে। অনেকদিন লো থাকলে মানুষের জ্ঞান বুদ্ধি লোপ পায়। এরা পড়ে কিন্তু স্বপ্নহীন থাকে। ভবিষ্যৎ নিয়ে বড় কোন স্বপ্ন থাকে না। কারণ যেখানে পড়ে সেখানে অনার্স পড়ানোর মত যেমন শিক্ষক নাই তেমনি পরিবেশও নাই। আর মাস্টার্স? আমি ভেবে পাই না একটা রাষ্ট্র কি করে তার নিজ দেশের লাখ লাখ শিক্ষার্থীদের এমনভাবে প্রতারণা করে? তাদের জীবনের মূল্যবান সময়ের কি সাংঘাতিক অপচয়!
এই ৪+১=৫ বছরের বদলে উচিত হলো ২ বছরের বিএ, বিএসসি এবং বিকম ডিগ্রি চালু করা। এতে তাদের মূল্যবান সময়ের অপচয় রোধ হবে। ২ বছরের ডিগ্রী পড়ানোর জন্য মানসম্পন্ন ভালো শিক্ষক দিয়ে ভরপুর। এই শিক্ষকদের দিয়ে ২ বছরের খুব ভালো মানের ডিগ্রি দেওয়া সম্ভব। এই দুই বছরের ডিগ্রি পাশ করে এরা প্রাথমিক এবং উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতে পারবে। তাছাড়া এই দুই বছরের ডিগ্রীতে যারা খুব ভালো ফলাফল করবে তাদের পরবর্তীতে অনার্সে ভর্তির সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। সেখানে ভালো করলে এরা মাস্টার্স এবং পরবর্তীতে পিএইচডি ও উচ্চশিক্ষাও গ্রহণ করতে পারবে।
আমরা কখনো শিক্ষা ক্ষেত্রে ভালো মালি পাইনি। ফলে এরা শিক্ষার গুরুত্ব বুঝেনি বা ইচ্ছে করে বুঝতে চায়নি। তারা শিক্ষায় বাজেট বরাদ্দ দেয় যৎসামান্য। শিক্ষকদের বেতন গোটা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্ন। সরকারি স্কুলগুলোর অবকাঠামো থেকে শুরু করে কোন কিছুই শিক্ষাবান্ধব নয়। একজন শিক্ষামন্ত্রী কি করে বলে মানসম্মত শিক্ষা দেয়ার যোগ্যতা শিক্ষকদের থাকতে হবে। যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ না দিলে যোগ্যতা কি আসমান ফাইরা আসবে? আপনারাতো এমন ব্যবস্থাই করেছেন যেন যোগ্য শিক্ষকরা শিক্ষক হতে না চায় বা না পারে।
প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকদের রাষ্ট্রের তৃতীয় শ্রেণির মর্যাদা দিয়ে এইসব কথা বলে কি বোঝাতে চাইছেন? শিক্ষক নিয়োগে রাজনীতি ঢুকিয়ে কি মানসম্মত শিক্ষা দেয়ার যোগ্যতা শিক্ষক পাবেন? শিক্ষকদের ট্রেনিং না দিয়ে আমলাদের ট্রেনিং এর জন্য বিদেশ পাঠাবেন। শিক্ষকদের পিএইচডি করতে না পাঠিয়ে আমলাদের পাঠাবেন। মানসম্মত শিক্ষা দেওয়ার জন্য যোগ্য শিক্ষক কথাথেকে আসবে?
তাই দরকার পরিবেশ পরিবর্তনের। তাতে অসংখ্য পোটেনশিয়াল ফুল প্রস্ফুটিত হয়ে দেশকে সুন্দর করবে।
লেখক: অধ্যাপক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়