বাংলাদেশে সুফি সংস্কৃতির গুরুত্ব কতখানি?
Spiritual traditions cannot be abolished or defeated. পৃথিবীর যেকোনো স্পিরিচুয়াল ট্রেডিশনকে সহজেই রোধ করা যায় না, মুছে ফেলা যায় না। কেননা, স্বত্ত্বাগত ভাবেই মানুষ স্পিরিচুয়াল বা আধ্যাত্মিক চেতনাধারী। যদিও ট্রেডিশনগুলোর মধ্যে ধর্মতাত্ত্বিক, দর্শনভিত্তিক বা ব্যবহারিক ভিন্নতা আছে। তবে সামগ্রিকভাবে বলা যায়, এই বৃত্তের বাইরে যারা যাবে, তারা উগ্র, মনুষ্যত্বহীন হতে বাধ্য সেটা যেদিক থেকেই বিবেচনা করা হোক না কেন। এর পেছনে যুক্তি হল স্পিরিচুয়াল ট্রেডিশনগুলো সবসময় সদগুণাবলীর চর্চা করে, শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করে। এগুলোর ভিত্তিই হচ্ছে মানুষের আত্ম উন্নয়নকে কেন্দ্র করে কিছু ব্যতিক্রম বাদে।
আরও পড়ুন: রাজনীতির মহাকবির মহাকাব্যিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন
গতকালকে আমার একটি ফাইনাল পরীক্ষা ছিল। State, Religion and International Relations-এই কোর্সের জন্য একটি চাইনিজ স্পিরিচুয়াল ট্রেডিশন বা new religious movement নিয়ে পড়তে হয়েছিল। সেটার নাম Falun Gong বা Falun Dafa (ধর্মচক্র অনুশীলন)। এটি ১৯৯২ সালে এটি প্রথম জনসম্মুখে আসে। এরপর মাত্র ৭ বছরের মাথায় এর অনুসারী সংখ্যা হয় সাত কোটিরও বেশি!
মূলত তিনটি নীতির (principle) উপর এটি পরিচালিত হয়-
১) সত্যবাদীতা
২) সমবেদনা
৩) সহনশীলতা
অতি দ্রুত সময়ে চাইনিজদের মধ্যে প্রচার-প্রসার হওয়ার ফলে এই স্পিরিচুয়াল ট্রেডিশনটিকে চাইনিজ সরকার তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ভাবতে শুরু করে। এরপর থেকে হাজার হাজার অনুসারীকে হত্যা, নির্যাতন ও অত্যাচার করা হয়। ২২ বছর পার হলেও লক্ষ লক্ষ মানুষ রিস্ক নিয়ে এখনও এই ট্রেডিশনকে ধরে আছে। শুধু তাই না আন্তর্জাতিকভাবে ১০০টির বেশি দেশে এটার প্রচলন শুরু হয়ে গেছে।
আরও পড়ুন: একদল কাওয়ালি শুনলেই তেড়ে আসে, আরেকদল হিন্দি
খ্রীশ্চান মোনাসটিসিজম, জুয়িশ কাব্বালিক ট্রেডিশন, ইসলামিক সূফী ট্রেডিশন নানান বাধা-বিপত্তির পরেও যুগ যুগ ধরে টিকে আছে। যত বেশি র্যাডিক্যাল, এক্সট্রিম আইডিওলজি বা রাজনীতির প্রভাব বাড়ুক না কেন, এগুলোর আবেদন মানুষদের হৃদয়ে আছে, থাকবে। এইসকল ট্রেডিশনের উপাদনগুলোকে সমাজ, সংস্কৃতি ভেদে প্রোমোট না করলে উগ্রতা দিন দিন বাড়বে, সমাজ অস্থিতিশীল হয়ে পড়বে।
সুফিজম তথা ইসলামের জন্ম বর্তমানের সৌদি আরবে হলেও সুফিজমের ধারা সারা বিশ্বে ক্রমান্বয়ে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। তবে সৌদিতে দুইশ' বছর আগে ওয়াহহাবিজম, সালাফিজমের দাপটে সূফীজমের গতিপথ ব্যাপকহারে রোধ করা গেলেও মুসলিম বিশ্বে এর গতিপথ কিন্তু রোধ করা যায় নি, যাবে না। ভারতীয় উপমহাদেশে সুফিজমের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। এ অঞ্চলে সুফিজমের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন করা মানে মুর্খের স্বর্গে বাস করা। সুফি সংস্কৃতি উপমহাদেশীয় সংস্কৃতিতে এক অনন্য মেলবন্ধন সৃষ্টি করেছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি: সাত দশকের গৌরবময় অগ্রযাত্রা
বাংলাদেশে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় সুফিবাদের ভূমিকা নিয়ে সম্প্রতি আমার বিভাগে একটি রিসার্চ মনোগ্রাফ করেছি। তাতে ওঠে এসেছে উগ্র, সাম্প্রদায়িক কিংবা সহিংস মতাদর্শ দূরীকরণে সুফিবাদ সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করতে পারে। কাজেই ধর্মীয় সম্প্রতি সর্বাবস্থায় সমুন্নত রাখতে হলে সুফিবাদের ধারা প্রসার করতে হবে। মনে রাখতে হবে, সুফি চিন্তা-ধারা কিংবা সুফি সংস্কৃতির উপর আঘাত মানেই বাংলাদেশের ধর্মীয় ভারসাম্যতা নষ্ট করা, উগ্রতাকে প্রশ্রয় দেয়া।
লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়