টুপিওয়ালা উঁচু মাথাটি যেন, হারিয়ে যাওয়া পর্বতের স্মৃতি
‘টুপিওয়ালা উঁচু মাথাটি যেন, এক হারিয়ে যাওয়া পর্বতের স্মৃতি’ কবি আল মাহমুদের একটি বিখ্যাত কবিতার লাইন। এই টুপিওয়ালা উঁচু মাথাটি আফ্রো-এশিয়ার নিপীড়িত মানুষের বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর। ১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর মহান মানুষটি চিরতরে পাড়ি দিয়েছিলেন পরপারে। বিংশ শতকে ব্রিটিশ ভারতে গণআন্দোলনের নায়ক, যার হাত ধরে ১৯৪৭-এ পাকিস্তান সৃষ্টি; ১৯৭১-এ প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম স্বপ্নদ্রষ্টা- মানুষটির মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তাঁকে জানতে পড়ুন এবং জানুন।
জন্ম-পরিচয়: ১৯৭৩ সালের সর্বশেষ পাসপোর্ট অনুযায়ী মওলানা ভাসানীর জন্ম ১২ ডিসেম্বর, ১৮৮০। জন্মস্থান সিরাজগঞ্জের সয়া-ধানগড়া গ্রামে। পিতার নাম হাজী শরাফত আলী খাঁ, মাতার নাম মজিরন বিবি। ডাক নাম চেগা মিয়া। শিশু বয়সেই মারা যান তার বাবা। এর কিছুদিন পর মহামারীতে মা। এরপর কালের অগ্রযাত্রায় চেগা মিয়াই একদিন ইতিহাসের নক্ষত্র হয়ে উঠে।
সাদা-সিদে জীবন: ভাসানীর জীবন-যাপন কেমন ছিল তা একটা ঘটনার বর্ণনায় ফুটে উঠে। সৈয়দ আবুল মকসুদ লিখেছেন, মওলানা ট্রেনে সফরসঙ্গীদের নিয়ে রওনা হন চট্টগ্রামের উদ্দেশে। তাঁর সঙ্গে একই কম্পার্টমেন্টে ছিলেন আবদুল হক, ডা. টি. আলী প্রমুখ। আখাউড়া জংশনে ট্রেন বদল করতে হবে। আখাউড়ার ন্যাপ নেতাকর্মীদের সংবাদ দেওয়া হয়েছিল, মওলানা সেখানে ট্রেন বদলাবেন। ওখানকার দুয়েকজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাঁর লাগেজ ঠিকমতো চট্টগ্রামের ট্রেনে তালার। মওলানা স্টেশনে নেমে রেলওয়ের কর্মচারী ও জনতার সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলে দ্রুত গিয়ে চট্টগ্রামমুখী ট্রেনে ওঠেন। তাঁর সঙ্গে একজন দলীয় কর্মী একটি ছোট বালিশ নিয়ে তাঁর পিছে পিছে কম্পার্টমেন্টে ঢোকেন।
এর মধ্যে আখাউড়ার যাদের ওপর মওলানার লাগেজ চট্টগ্রামের ট্রেনে তোলার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল তারা হন্তদন্ত হয়ে এসে বলেন, ওই ট্রেনের কামরায় হুজুরের লাগেজ পাওয়া যাচ্ছে না। মওলানার এক সহচর বললেন, কিসের লাগেজ? ‘হুজুরের জিনিসপত্র। ব্যাগট্যাগ।’ সহচর বালিশটি দেখিয়ে বললেন, হুজুরের সঙ্গে তো শুধু এই বালিশ আর একটা গামছা। ওনার একটা লুঙ্গি আমার কাপড়ের ব্যাগটায় আছে। আর তো কোনো জিনিস নাই। এইগুলোই তো লাগেজ। কর্মীরা লজ্জিত ও বিস্মিত হয়ে দ্রুত ট্রেনের কামরা থেকে নেমে যান। [মওলানার লাগেজ কোথায়, সৈয়দ আবুল মকসুদ]।
ধর্মচিন্তায় ভাসানী: মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী মুসলমানের ঈমান-আকিদার কর্তব্য হিসেবে কেন এবং কীভাবে মজলুমের পক্ষে দাঁড়াতে হবে তার একটি পথ দেখিয়েছেন। তিনি এক শতাব্দী ব্যাপৃত যে সংগ্রাম চালিয়ে গিয়েছিলেন তার মূল লক্ষ্য ছিল শোষণমুক্ত সমাজ। এরই প্রাসঙ্গিক অংশ হিসেবে তিনি একটি ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। ১৯৭০ সালে তিনি ১৪টি দেশের সাথে যোগাযোগ করেন। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে তা আর হয়ে উঠেনি।
১৯৭৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর তাঁর সাথে দেখা করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘মওলানা ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়’-এর প্রস্তাব করেছিলেন। কিন্তু ভাসানী সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন, ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা আসলে আদর্শ প্রতিষ্ঠার লড়াই। এতে মওলানা ভাসানীর নাম যুক্ত করা মানে বিসমিল্লায় গলদ। রবুবিয়াতের বরখেলাপ নাফসানিয়াত কায়েম করে দেয়।’ [জানা অজানা মওলানা ভাসানী। পৃষ্ঠা: ১৪৪]
কেমন মওলানা: জীবনে অনেকেই তাঁকে জিজ্ঞেস করেছেন তার নামের আগে মওলানা কেন, ব্যক্তি বুঝে তিনি জবাব দিতেন। একবার মাদ্রাসা থেকে ডিগ্রি প্রাপ্ত একজন মওলানা তাকে জিজ্ঞেস করলেন, হুজুর, আপনিও মওলানা, আমরাও মওলানা; আমাদের মধ্যে পার্থক্য কোথায়? তিনি মুহূর্তের মধ্যে বললেন, ‘তোমরা সেই মওলানা যারা দূরে শয়তান দেখলে ‘লা হাওলা ওলা’ পড়, আমরা সেই মওলানা যারা শয়তানকে আগে কাছে ডাকি তারপর শয়তানের ঘাড়ের ওপর সওয়ার হয়ে শয়তানকে দিয়ে আমাদের কাজ করায়ে নেই।’
কখন থেকে তিনি ভাসানী: আবদুল হামিদ খান যে গ্রামে বাস করতেন সে গ্রামের নাম ছিল ভাসানের চর। দশ সহস্রাধিক অধিবাসী সংবলিত এ গ্রামের সবাই ছিলেন মওলানার ভক্ত তথা মুরীদান। গ্রামবাসী দিন দিন মওলানা সাহেবের সুনাম, যশ ও ব্যাপক পরিচিতি লক্ষ্য করে গর্বিত হতে থাকে, কারণ মওলানা তাদেরই গ্রামের বাসিন্দা। এরপরে ১৯২৯ সালে আসামের ধুবড়ি জেলার ভাসান চরে এক কৃষক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেদিনই গ্রামের সবাই মিলে মওলানাকে ধরে বসেন এই বলে যে, তার নামের সঙ্গে গ্রামের নামটি জুড়ে দিতে হবে। তখন থেকে তাঁর নামের সাথে যুক্ত হয়ে যায় ‘ভাসানী’। [জানা অজানা মওলানা ভাসানী। আবদুল হাই শিকদার]।
ভাসানীর রাজনৈতিক ধারা: ভাসানীর রাজনৈতিক ধারা তাঁর নিজস্ব। উপমহাদেশের কোনো প্রধান রাজনৈতিক ধারা থেকেই তিনি প্রেরণা নেননি। রাজনৈতিক জীবনের বেশিরভাগ সময়ই তিনি মাওপন্থী কম্যুনিস্ট রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। তাঁর অনুসারীদের অনেকে এজন্য তাঁকে ‘লাল মওলানা’ নামেও ডাকতেন। তিনি ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন , খেলাফতে আন্দোলন এবং অসহযোগ আন্দোলনে সরাসরি যুক্ত ছিলেন।
তবে ১৯২৬ সালে আসামে প্রথম কৃষক প্রজা পার্টি আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটানোর মধ্য দিয়ে কৃষক নেতা হিসেবে তার আবির্ভাব ঘটে। তাঁর রাজনৈতিক জীবনে দেওবন্দের প্রভাবও ছিল। যার কারণে আমরা তাঁর রাজনৈতিক ধারায় কমিউনিজম ও ইসলামকে একসঙ্গে দেখেছি। তিনি একদিকে কমিউনিস্টদের সঙ্গে দীর্ঘদিন রাজনীতি করেছেন; অন্যদিকে নিজের ঈমান-আকিদার সঙ্গে একতিলও আপস করেননি। তিনি নিজের চিন্তার মধ্যে এই আত্মীকরণ ঘটিয়েছিলেন।
আওয়ামী লীগ গঠন: ১৯৪৭ সালে মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী আসাম থেকে পূর্ব বাংলায় চলে আসেন। প্রথমে তিনি পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ ও পরে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করেন। আওয়ামী লীগ গঠিত হওয়ার পর প্রথম সবচেয়ে বড় জনসভাটি অনুষ্ঠিত হয় ১৯৪৯ সালের অক্টোবরে ঢাকার আরমানিটোলা মাঠে। সেই জনসভা প্রতিহত করতে তৎকালীন সরকার ১৪৪ ধারা জারি করার উদ্যোগ নিলেও পরবর্তীতে সভা পন্ড করে দেওয়ার পদক্ষেপ নেয়। সরকারের সেই পদক্ষেপের অংশ হিসেবে জনতার ভেতর থেকে একদল লোক হৈ চৈ শুরু করে। তখন সভাপতির আসন থেকে উঠে এসে মওলানা ভাসানী মাইকের সামনে দাঁড়ান।
বলেন, ভাইয়ো, সরকার আমাদের সভা পণ্ড করতে চায়। এ অবস্থায় আমরা সভা করব না। আপনারা শান্ত হয়ে যার যার জায়গায় দাঁড়ান। আমরা আল্লাহ তায়ালার দরবারে ফরিয়াদ জানিয়ে মোনাজাতের মাধ্যমে সভা শেষ করব। এই কথা বলেই মওলানা ‘আল্লাহুম্মা আমিন’ বলে মোনাজাত শুরু করলেন। সভার সব শ্রোতাও হাত তুলে ‘আল্লাহুম্মা আমিন’ বলে দাঁড়িয়ে যায়। মোনাজাতকারীদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ হিন্দু এবং কমিউনিস্ট ছিল। মওলানা আরবিতে দুয়েকটি মোনাজাতের দোয়া পাঠ করেই বলতে থাকেন: ‘হে দীন দুনিয়ার মালিক পরওয়ারদেগার, জালেমের অত্যাচার থেকে তুমি মজলুমকে রক্ষা করো।’ মোনাজাতে পরকালের কোনো কথা ছিল না। ছিল সরকারের অন্যায়-অবিচার ও জুলুমের কথা। তা থেকে মুক্তির জন্য জেহাদ ঘোষণার কথা। মাঝে মাঝেই শ্রোতা-মোনাজাতকারীরা ‘আল্লাহুম্মা আমিন’ বলতে থাকেন। কিন্তু মোনাজাত আর শেষ হয় না।
মোনাজাতের মধ্যেই পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পটভূমি ও ইতিহাস বর্ণনা করা হয়। পাকিস্তানের দুই বছরের অন্যায়-অত্যাচারের ফিরিস্তি দেওয়া হয়। অন্যায়ের প্রতিবাদ করা ইসলামের শিক্ষা-তাও বলা হয়। এক ঘণ্টার বেশি সময় ধওে মোনাজাত চলে। সমাবেশে তাঁর রাজনৈতিক বক্তৃতায় মওলানা যা বলতেন, মোনাজাতে সে কথাগুলোই বললেন। মোনাজাতে গোয়েন্দা বিভাগ ও পুলিশের বিশেষ শাখার লোকেরা হাত তুলে অংশ নেওয়ায় সেদিন তারাও ভাসানীর ‘বক্তৃতা’র কোনো নোট নিতে পারেননি। [ভাসানী কাহিনী (এক ঘণ্টার মোনাজাত) সৈয়দ আবুল মকসুদ]
ভাষা আন্দোলনে মওলানা: ১৯৪৮ সালের নভেম্বর মাসে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান ঢাকা সফরে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিকে ‘অশোভন’ আখ্যা দিয়ে সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার মীমাংসা হইয়া গিয়াছে।’ মওলানা ভাসানী প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের রাষ্ট্রভাষা সংক্রান্ত মন্তব্য ও পূর্ব বাংলাবিরোধী বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেন।
এভাবে বিরোধিতার মধ্য দিয়েই তাঁর সরকারবিরোধী ভূমিকার শুরু হয়েছিল। ১৯৪৯ সালের অক্টোবরে লিয়াকত আলী খান আবারও বাংলা ভাষা ও প্রাদেশিকতার সমালোচনা করলে প্রতিবাদে মওলানা ভাসানী বিক্ষোভ মিছিলে নেতৃত্ব দেন। ১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত জনসভায় খাজা নাজিমউদ্দিন মওলানা ভাসানীকে ‘ভারতের চর’ হিসেবে চিহ্নিত করে বলেছিলেন, তাঁর উদ্দেশ্য পাকিস্তানের সংহতি নষ্ট করা।
খাজা নাজিমউদ্দিনের রাষ্ট্রভাষা সংক্রান্ত ঘোষণার প্রতিবাদে ১৯৫২ সালের ৩১ জানুয়ারি গঠিত ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’। ৪০ সদস্যবিশিষ্ট সেই কমিটির এক নম্বর সদস্য ছিলেন মওলানা ভাসানী। মওলানা ভাসানী ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রদেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য সফরে ছিলেন। ২১ ফেব্রুয়ারি গুলিবর্ষণ ও ছাত্রহত্যার খবর জেনেই তিনি ঢাকায় চলে আসেন এবং পরদিন ২২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত গায়েবি জানাজায় অংশ নেন।
ভাষা আন্দোলনের প্রধান সমর্থক সাপ্তাহিক ‘সৈনিক’ লিখেছে, ‘মেডিকেল কলেজের সম্মুখে তিনি লক্ষ লোকের একটি গায়েবি জানাজায় নেতৃত্ব করেন।’ [ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস। পৃষ্ঠা: ৩৭৪।] এভাবেই বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার সংগ্রামে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন ভাসানী।
স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম স্বপ্নদ্রষ্টা: ভাসানীই প্রথম তাঁর বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাংলাদেশের স্বায়ত্তশাসন, এমনকি স্বাধীনতার ইস্যুকে বারবার সামনে নিয়ে এসেছেন। যেমন, তিনি ১৯৪৮ সালের ১৯ মার্চ ভাষার অধিকার প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘আমরা কি সেন্ট্রাল গভর্নমেন্টের গোলাম? ব্রিটিশ গর্ভনেেমন্টর গোলামী করি নাই। ন্যায়সঙ্গত অধিকারের জন্য চিরকাল লড়াই করেছি, আজও করব।’ [বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ। দলিলপত্র: প্রথম খন্ড। পৃষ্ঠা: ৭৫]।
পকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের কোন জননায়কের এটাই প্রথম চ্যালেঞ্জ। তিনি ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের আগে যে ২১ দফা ঘোষণা করেছেন, সেখানে ১৯ দফায় তিনি বলেছেন, ‘লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে পূর্ববঙ্গকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন প্রদান ও সার্বভৌমিক করা হইবে এবং দেশরক্ষা, পররাষ্ট্র ও মুদ্রা ব্যতীত আর সমস্ত বিষয় পূর্ববঙ্গ সরকারের হাতে আনয়ন করা হইবে।’ ১৯৫৭ সালের ‘কাগমারী সম্মেলনে’ গুরুত্ব দিয়ে তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় স্বাধীনতার কথা বলেছিলেন।
তখনই তিনি পাকিস্তানের প্রতি বিদায়ী বচন ‘আসসালামু আলাইকুম’ উচ্চারণ করেছিলেন। সুবিশাল জনসভায় মওলানা ভাসানী বলেছিলেন, ‘যদি পূর্ব বাংলায় তোমরা তোমাদের শোষণ চালিয়ে যাও, যদি পূর্ব বাংলার পূর্ণ স্বায়ত্ত্বশাসনের অধিকার স্বীকৃত না হয়- তাহলে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী, তোমরা আমাদের কাছ থেকে একটি কথাই শুনে রাখ, আসসালামু আলাইকুম, তুমি তোমার পথে যাও, আমরা আমাদের পথে যাবো।’ [কিশোর মওলানা ভাসানী। পৃষ্ঠা: ৩৯]। এ কারণেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, কাগমারী সম্মেলনে স্বাধীন বাংলাদেশ অভ্যুদয়ের বীজমন্ত্র নিহিত ছিল।
৬৯’র গণঅভ্যূথান ও শেখ মুজিবের মুক্তি: ১৯৬৯ সালের প্রথম দিকে শুরু হওয়া গণঅভ্যূাথানের সূচনা করেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। ১৫ ফেব্রুয়ারি সার্জেন্ট জহুরুল হককে বন্দী অবস্থায় ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে গুলি করে হত্যা করা হলে পরদিন মওলানা ভাসানী পল্টনের বিশাল এক জনসভার ডাক দেন। তিনি সেখানে আইুয়ুব সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ডাক দেন।
বক্তৃতায় ঘোষণা করেন, ‘দুমাসের মধ্যে ১১ দফা কায়েম ও রাজবন্দীদের মুক্তি দেয়া নাহলে ট্যাক্স বন্ধ করে দেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন, প্রয়োজনে ফরাসী বিপ্লবের মত জেলখানা থেকে শেখ মুজিবকে ছিনিয়ে আনা হবে।’ [মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলি। পৃষ্ঠা: ৪৫]। মওলানার এই ভাষণের পর বিক্ষুদ্ধ জনতার ঢল রাস্তায় নেমে আসে এবং স্বাধিকারের দাবিতে বিদ্রোহ রচিত হয়। এমনই প্রেক্ষাপটে ২২ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামিরা মুক্তি লাভ করেন।
১৯৭০’র ঘূর্ণিঝড় ও ভাসানীর স্বাধীনতা ঘোষণা: ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর দেশের দক্ষিণ অঞ্চলে আঘাত হানে সবর্কালের নৃশংসতম ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস। এই ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে প্রাণ হারায় লক্ষ লক্ষ মানুষ। অসুস্থ শরীর নিয়ে মওলানা ভাসানী প্রলয়বিধ্বস্ত উপকূল এলাকা পরিদর্শনে যান। ঘূর্ণিঝেড়ে ক্ষয়ক্ষতি দেখে খুব মার্মাগত হন। সৈয়দ আবুুল মকসুদ তাঁর মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী গ্রন্থে লিখলেন, ‘২৩ নভেম্বর তড়িঘড়ি করে ভাসানী পল্টন ময়দান এক জনসভা করেন। জাতির ইতিহাসে সেটি ছিল এক ঐতিহাসিক জনসভা। ক্ষয়ক্ষতি বর্ণনার পরে সকলকে বিস্মিত করে তিনি সেই সভায় স্লোগান দেন: ‘স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান জিন্দাবাদ’।
কবি শামসুর রহমান এরপরেই লিখলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে প্রথম কবিতা ‘হায়, আজ একি মন্ত্র জপলেন মৌলানা ভাসানী’। তাঁর সেই অবিস্মরণীয় ভাষণ দেশেবিদেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
১৯৭০ সালের ৪ ডিসেম্বর তিনি ফের ঘোষণা পুর্নব্যক্ত করলে যশোর থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক মাতৃভূমি লিখলেন, “...এশিয়া, আফ্রিকা ও লাটিন আমেরিকার সংগ্রামী জনগণের মহান নেতা মওলানা ভাসানী গতকাল শুক্রবার ঢাকার পল্টন ময়দানের অনুষ্ঠিত এক বিশাল জনসমুদ্রের দাঁড়িয়ে ‘সার্বভৌম পূর্ব পাকিস্তান’ প্রতিষ্ঠার মরণপণ সংগ্রামের দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা করিয়াছেন।’
ওরা কেউ আসেনি: ১৯৭০ সালের প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়ে নিহত-আহত লোকদের দেখতে কেউ যায়নি। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে একজন মন্ত্রীও আসেনি, বাঙ্গালি মন্ত্রীরাও নয়। এই বিষয়টি ভাসানী বেশ জোর দিয়ে ২৩ নভেম্বরের সমাবেশে উল্লেখ করেন। পরদিন দৈনিক পাকিস্তান এক চমৎকার ছবি ছাপায়। এক পাশে বক্তৃতারত ভাসানী। অপরপাশে পাকিস্তানের মন্ত্রীসভার ৫ জন বাঙ্গালি মন্ত্রীর ছবি। নিচে ছবির ক্যাপশন ছিল ‘ওরা কেউ আসেনি’। ভাসানীর বক্তৃতা থেকে উদ্ধৃত একটি বাক্য।
মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে মওলানা: ২৫ মার্চ, ১৯৭১; মজলুম জননেতা ছিলেন সন্তোষে। ৩ এপ্রিল সন্তোষে পাকিস্তানি বাহিনী প্রবেশ করে জ্বালিয়ে দিল মওলানার মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু। ১৭ এপ্রিল প্রবাসী সরকার গঠিত হলে মওলানা পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে, সারাবিশ্বের কাছে আকুল আবেদন জানালেন এ সরকারকে স্বীকৃতি দেয়ার জন্য। ২৫ এপ্রিল তিনি সোভিয়েত রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের কাছে পাকিস্তান বাংলাদেশের জনগণের ওপর যে বর্বরোচিত অত্যাচার চালাচ্ছে তার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেন। প্রবাসী সরকার গঠনের পর অন্তঃকোন্দল চরম আকার ধারণ করলে ‘সেই দুঃসময়ে তাজউদ্দীন ধরণা দিয়ে পড়লেন নজরবন্দী মওলানার দেরাদুনের আবাসস্থলে। পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করে তিনি ৩১ মে প্রচারিত এক বিবৃতিতে বললেন, ‘আমাদের সামনে মাত্র দুটো পথ- হয় পূর্ণ স্বাধীনতা, নয় মৃত্যু!’ [জানা অজানা মওলানা ভাসানী। পৃষ্ঠা: ২৯]।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় মূলত মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ভারত সরকারের নজরবন্দী ছিলেন। ১৯৭১ সালের জুন মাসের প্রথম দিকে কমিউনিস্ট আদর্শের অনুসারীরা ভিন্নভাবে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামকে পরিচালনা করার জন্য তাঁকে প্রধান করে ‘বাংলাদেশ জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি’ করলে তিনি ভারত সরকারের আরো বেশি নজরদারিতে থাকেন। ৯ সেপ্টেম্বর গঠিত মুজিবনগর সরকারের ৮ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদের সভাপতি ছিলেন তিনি।
মওলানাকে নিয়ে প্রচলিত গল্পকাহিনী: এক. ১৯৪৭ সালে মওলানা ভাসানী গেছেন টাঙ্গাইলের জমিদার গোপেশ্বর সাহা রায় চৌধুরীর বাড়ি। জমিদার গোপেশ্বর রায় প্রজা বৎসল ছিলেন। গরীব-দুঃখীর সাহয্য ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে আলোপ আলোচনা করছিলেন। মাগরিবের সময় হলে তিনি গোপেশ্বর রায় চৌধুরীর কাছে নামাজের জায়গা চাইলেন।
গোপেশ্বর বাবু হেসে বললেন, ‘হিন্দু বাড়িতে নামাজ পড়লে নামাজ হবে কী মওলানা সাহেব?’ গোপেশ্বর বাবুর কথা শুনে মওলানা জবাব দিলেন, ‘আল্লাহ সব জায়গায় বিরাজমান, তবে কি হিন্দু বাড়িতে থাকে না?’ মওলানার জবাব শুনে গোপেশ্বর বাবু ‘থ’ হয়ে গেলেন, উচ্চারণ করে বললেন, ‘হুজুর, আপনার মত উদার মনের মানুষ যদি সবাই হতো তাহলে কেউ সম্প্রদায়িকতার আগুনে জ্বলতো না।’
দুই. মওলানা ভাসানীর পানি পড়ার খুব সুনাম ছিল। অনেকের বিশ্বাস তাঁর পানি পড়া, তেল পড়া, কালিজিরা পড়া, ঝাড় ফুকের বেশুমার বরকত। এই জন্য অনেকেই তার পানি পড়া নেয়ার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়তো। একবার মওলানা সাহেব এক বাড়িতে রাতে ছিলেন এবং ভোরে উঠেই সেখান থেকে চলে যান। সকাল বেলা পানি পড়ার জন্য লোকজন এসে ভিড় করতে লাগল। কিন্তু মওলানা তো নেই। ঐ বাড়ির একজন রসিকতা করে বলল, এই ইন্দারায় মওলানা সাহেব এক গ্লাস পানি পড়ে ঢেলে দিয়ে গেছে। এখান থেকে পানি নিয়ে খেলেই কাজ হবে। যেই না বলা অমনি সবাই ইন্দারার পানি তুলে নেয়া শুরু করল। কিছুক্ষণের মধ্যেই ইন্দারার পানি শুকিয়ে তলায় কাদা বের হলো। লোকজন কাদাও তুলে নিতে লাগল। বাড়িওয়ালা অবস্থা বেগতিক দেখে হাতজোড় করে কাকুতি মিনতি করতে লাগল, দোহাই আল্লাহর, আপনাদের হাত পা ধরে অনুরোধ করি, আমার ইন্দারা রক্ষা করেন। এভাবে কাদা উঠালে আমার ইন্দারা ভেঙে যাবে।
তিন. একবার যমুনা নদীর পাড়ের অদূরে মওলানা ভাসানীর আগমনে ইসলামী অনুষ্ঠানের আয়োজন চলছিল। সেই অনুষ্ঠানে খাওয়া দাওয়ার আয়োজনও ছিল। রান্নার চাল, ডাল, লবন, মসলা যোগাড় হলেও মরিচের অভাবে বাবুর্চিরা রান্না শুরু করতে পারছিল না। এই খবরটি মওলানার কাছে দেয়া হলে তিনি উপস্থিত কয়েকজনকে লক্ষ্য করে বললেন, দেখ তো- নদীর ঘাটে মরিচের নৌকা দেখা যায় কিনা। লোকজন দৌড়ে নদীর ঘাটে গিয়ে দেখে সত্যিই নৌকা বোঝাই মরিচ নিয়ে কয়েকজন ঘাটে ভিড়তেছে। এই ঘটনায় মুহুর্তেই পুরো এলাকায় খবর রটে গেল যে, হুজুরের সাথে জ্বীন আছে। জ্বীনেরা হুজুরের কথামত অনেক কিছু যোগাড় করে দেয়।
ফারাক্কা লং মার্চ-জলদেবতার যুদ্ধের ডাক: ফারাক্কা লং মার্চ নিয়ে আহমদ ছফা লিখলেন, ‘মওলানা সাহেবকে ১৯৭৬ সালে যখন পিজি হাসপাতাল থেকে উঠিয়ে নেয়া হয় তখন তাঁর শরীরে ছিল আগুনের মত জ্বর। তাঁকে যখন রাজশাহী পর্যন্ত নেয়া হল। দেখা গেল তাঁর শারীরিক অবস্থার ভয়ংকর রকম অবনতি ঘটেছে। অনেকে মনে করলেন তাঁকে নিয়ে আর টানা হেঁচড়া করা ঠিক হবে না। সকলের মধ্যে একটা দোদুল্যমান মনোভাব দেখা দিল। তাঁর শরীরের এই অবস্থা, তার ওপর তুমুল বৃষ্টি।
এই ধরনের আবহাওয়ায় মাওলানাকে সীমানা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। তাই সকলে গড়িমসি করছিলেন। মাওলানা সাহেবকে ব্যাপারটি জানানো হলে তিনি সেই প্রকান্ড হুঙ্কারটি ঝেড়ে দিলেন- ‘কি মনে কর মিঞা, তোমাগো শরীরে মানুষের রক্ত নি আছে! চল, সামনে চল।’ অতএব আবার লং মার্চ শুরু হল। যেতে যেতে যখন সীমার্ন্তের নিকটবর্তী কানসাট গ্রামটিতে মিছিল এসে থামল মাওলানার অবস্থা তখন সঙ্গিন। ....এরকম সংজ্ঞালুপ্ত অবস্থায় তিনি দুজনের কাঁধে ভর দিয়ে কানসাটের জনসভাটিতে বজ্র কঠোর কন্ঠে গুরুগম্ভীর ভাষায় দেড় ঘন্টাব্যাপী জীবনের শেষ বক্তৃতাটি কিভাবে তাঁর পক্ষে দেওয়া সম্ভব হয়েছিল, লং মার্চের অংশগ্রহণকারীরা এটাকে একটা আশ্চর্য ঘটনা বলে মনে করেন।
মাওলানা তাঁর বক্তৃতায় বলেন, ‘গঙ্গার পানি আমাদের ন্যায্য হিস্যা, এটা আমাদের প্রাকৃতিক অধিকার, এই অধিকার মানুষের একার নয়, পশু-পাখি, গাছপালা, কীটপতঙ্গ প্রাণবান সবকিছুর একান্ত জন্মগত অধিকার। যারা এই অধিকার হরণ করছে তারা প্রাণের বিরুদ্ধে জুলুম করছে। ভারত একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করে এই অঞ্চলে প্রাণের বিকাশ প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিতে চাইছে। বাংলাদেশের প্রাণবান মানুষ এই জুলুম কিছুতেই মেনে নিতে পারে না এবং ভারত জুলুমবাজি করে শেষ পর্যন্ত কোনদিনই জয়যুক্ত হতে পারে না।’
আহমদ ছফা লিখল, ফারাক্কা লং মার্চ স্মৃতি উদযাপনের পোস্টারটিতে জীবনের অন্তিম ভাষণদানরত মওলানার ছবিটি দেখে কেন জানি আমার তাঁকে মনে হতে থাকল, ‘তিনি একজন জলদেবতা।’
মাও সে-তুঙকে ‘সবচেয়ে বড় সাম্যবাদী আমার নবী’: চীনের প্রেসিডেন্ট মাও সে-তুঙ-এর সঙ্গে আলোচনা করে দেশে ফেরার কিছুদিন পর শাহেদ আলী এবং অধ্যাপক আবদুল গফুর মওলানা ভাসানীর সঙ্গে দেখা করতে সন্তোষ যান। চীন মুগ্ধতায় তখন তিনি বিভোর। যাকে সামনে পেতেন তাকেই চীনের গল্প বলতেন। শাহেদ আলী ও আবদুল গফুরকেও বললেন: চীন তো সফর কইরা আসলাম। সেখানে আমি মাও সে-তুঙকে ছোটমুখে বড় কথা শোনাইয়া আসলাম। কী সেই কথা? মওলানা বললেন- সে-কথা হইল, আমি মাওকে বললাম, আপনি বর্তমান দুনিয়ার সবচেয়ে বড় সাম্যবাদী নেতা, কিন্তু আমি মনে করি, আমার নবী আপনার চেয়েও বড় সাম্যবাদী ছিলেন। [ভাসানী কাহিনী, সৈয়দ আবুল মকসুদ]।
বিখ্যাত উক্তি: তার বিখ্যাত উক্তির মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে- ‘আসাম আমার, পশ্চিমবঙ্গ আমার ত্রিপুরাও আমার। এগুলো ভারতের কবল থেকে ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মানচিত্র পূর্ণতা পাবে না।’
ভাসানীকে জানতে আরো পড়ুন: আবদুল হাই শিকদারের ‘জানা অজানা মওলানা ভাসানী’, ‘কিশোর মওলানা ভাসানী’, আবু জাফর মোস্তফা সাদেক-এর ‘মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী’; সৈয়দ ইরফানুল বারীর ‘নানান মাত্রায় : মওলানা ভাসানী’ এবং খোন্দকার মোহাম্মদ ইলিয়াসের ‘ভাসানী যখন ইউরোপে’।
পাকিস্তনে দুবার নিষিদ্ধ এক বই: মওলানা ভাসানীর আজীবন সাথী একটি মাত্র স্যুটকেস। দৈর্ঘ্য ১৬ ইঞ্চি। সম্পদ বলতে তার মধ্যে থাকে একটি গামছা, একটি লুঙ্গি, একটি খদ্দরের পাঞ্জাবি, মাথার একটি টুপি, কিছুটা তামাক পাতা আর চুনের একটা ডিবা। এই নিয়েই তিনি গেছেন ইউরোপ সফরে। ইউরোপে ভাসানীর সল্প সময়ের যাত্রার ঘটনাবহুল দিনগুলো নিয়ে লেখা বই ‘ভাসানী যখন ইউরোপে’। সারা বইজুড়ে পাকিস্তানের তৎকালীন সরকারের স্বরূপ জনগণের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলেন খোন্দকার মোহাম্মদ ইলিয়াস। এই বইকে পাকিস্তানের সামরিক সরকার দুবার নিষিদ্ধ করে। আইয়ুব খানের সময় ১৯৫৮ সালের ২৮ ডিসেম্বরে বইটি বাজেয়াপ্ত করা হয়। এই বইয়ের ইংরেজি অনুবাদের জন্য লেখক খোন্দকার মোহাম্মদ ইলিয়াসকে জরিমানাসহ সাজা দেয়। ১৯৬৫ সালে আবার নিষিদ্ধ করা হয় এই বই।
আর একজন মওলানা চাই: স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশ এবং স্বাধীন বাংলাদেশে এদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রশ্নে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার মানুষটিই ছিলেন মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী। আজ দেশের এই দুর্দিনে, আধিপাত্যবাদের থাবার মুখে আমাদের খুব প্রয়োজন আরেকজন মওলানা।
‘মওলানা ভাসানীর মতো আর একজন মওলানা চাই
আপস’ বা ওই জাতীয় শব্দের সাথে
যাঁর কখনো দেখা হবে না।’
লেখক: বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা), ৩৫তম বিসিএস (সুপারিশপ্রাপ্ত) ও সিনিয়র লেকচারার, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।