বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে হলে আত্মাটা অনেক বড় হতে হয়
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, উত্তরপত্র মূল্যায়ন এবং ভর্তি পরীক্ষার দিন পরীক্ষার হলে পরিদর্শকের কাজ করে শিক্ষকদের এনভেলপ মানি নেওয়া ঠিক না। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে হলে আত্মাটা অনেক বড় হতে হয়।
পৃথিবীর দিকে তাকান। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অনেক কাজ করে যার জন্য কোন বাড়তি টাকা নেন না। এরমধ্যে অন্যতম কাজ হলো জার্নালের রেফারি হয়ে কাজ করা। এই কাজে প্রচুর পড়াশুনা করতে হয়, প্রচুর সময় দিতে হয়। অথচ এই কাজের কোন পারিশ্রমিক আমরা নেই না এবং সেজন্যই এইটাকে পিয়ার রিভিউ বলে।
একই কারণে পিয়ারদের নিয়োগ বোর্ডে থেকে এনভেলপ মানি নেওয়াটাও অনৈতিক। এই কারণে আমি কোন নিয়োগ বোর্ডে থাকলে তার জন্য কোন এনভেলপ মানি নেই না। তবে কখনো কখনো বোর্ডে এমন আরো সদস্য যিনি আমার শিক্ষক। তিনি যখন নেন তখন উনার সামনে আমার না নেওয়াটা দৃষ্টিকটু বিধায় কখনো নিয়েছি। কিন্তু in principle নেওয়া উচিত না এবং আমি বেশ কয়েক জায়গায় নেইনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ। নবীন এবং আর্থিকভাবে বাবা মায়ের উপর নির্ভরশীল ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য পরীক্ষা দেবে আর সেই পরীক্ষার হলে পরিদর্শক হয়ে এনভেলপ মানি নেব? কয়টা টাকা? এই টাকাটা না নিলে কি হয়? আসলে এই রাষ্ট্র শিক্ষকদের এত আভাইত্যা হিসাবে রেখেছে যে দিন যত যাচ্ছে শিক্ষকরা তত বেশি করে অর্থ উপার্জনের নানা ছুতানাতা বের করছে।
এসব করে আমাদের নৈতিকতার মানদন্ড নেমে যাচ্ছে। যার দীর্ঘমেয়াদি কুফল গোটা দেশের উপর পরে এবং পড়ছে। শিক্ষকদের এমন বেতন দেওয়া হয় যে তারা বাধ্য হয়ে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতে, কনসাল্টিং করতে।
এইসব কাজ একবার শুরু করলে লাগামটানা মুশকিল। সরকারের উচিত শিক্ষকদের এমন বেতন দেওয়া যেন এক দিকে ভালো মানের শিক্ষার্থীরা শিক্ষকতা পেশায় আসে এবং অন্য দিকে তাদের সৎভাবে চলার পথ থাকে। শিক্ষকরা যাতে সম্মান অর্জন করতে পারে তার ব্যবস্থা করতে রাষ্ট্রেরও দায়িত্ব আছে। আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন মানুষই পারে সত্যিকারের শিক্ষা দানের মাধ্যমে যোগ্য নাগরিক তৈরী করতে।
লেখক: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়