চাঁদের জমি কারা বিক্রি করেন?
বাংলাদেশে রীতিমতো চাঁদের জমি কিনা নিয়ে হিড়িক পড়ে গেছে সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে। বিদেশিদের কাছে অনলাইনে জমি কিনে আবার অনলাইনেই দলিল পাচ্ছেন চাঁদের জমির মালিকেরা।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে তাদের মূল মালিক কে? চাঁদতো পৃথিবীর জন্য একটি। তাহলে চাঁদের নেতৃত্ব দিবে কোন দেশ বা জাতি? এরকম একটি প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
সাধারণ মানুষের প্রশ্ন এখন, চাঁদ কি তাহলে দখল হয়ে গেছে? কোন দেশ দখল করেছে?
আচ্ছা এবার আসা যাক কিছু তথ্য নিয়ে,
চাঁদ পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ এবং সৌর জগতের পঞ্চম বৃহত্তম উপগ্রহ। পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে চাঁদের কেন্দ্রের গড় দূরত্ব হচ্ছে ৩৮৪,৩৯৯ কিলোমিটার (প্রায় ২৩৮,৮৫৫ মাইল) যা পৃথিবীর ব্যাসের প্রায় ৩০ গুণ। চাঁদের ব্যাস ৩,৪৭৪.২০৬ কিলোমিটার (২,১৫৯ মাইল) যা পৃথিবীর ব্যাসের এক-চতুর্থাংশের চেয়ে সামান্য বেশি। এর অর্থ দাড়াচ্ছে, চাঁদের আয়তন পৃথিবীর আয়তনের ৫০ ভাগের ১ ভাগ। এর পৃষ্ঠে অভিকর্ষ বল পৃথিবী পৃষ্ঠে অভিকর্ষ বলের এক-ষষ্ঠাংশ। পৃথিবী পৃষ্ঠে কারও ওজন যদি ১২০ পাউন্ড হয় তা হলে চাঁদের পৃষ্ঠে তার ওজন হবে মাত্র ২০ পাউন্ড। এটি প্রতি ২৭.৩২১ দিনে পৃথিবীর চারদিকে একটি পূর্ণ আবর্তন সম্পন্ন করে। প্রতি ২৯.৫ দিন পরপর চন্দ্র কলা ফিরে আসে অর্থাৎ একই কার্যক্রম আবার ঘটে। পৃথিবী-চাঁদ-সূর্য তন্ত্রের জ্যামিতিতে পর্যায়ক্রমিক পরিবর্তনের কারণেই চন্দ্র কলার এই পর্যানুক্রমিক আবর্তন ঘটে থাকে।
এখন প্রশ্ন হতেই পারে, সূর্যের তাপ চাপ চাঁদে বেশি নাকি পৃথিবীতে বেশি?
চাঁদ সূর্যের থেকে প্রায় ১৫০ মিলিয়ন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
উপর দিকে পৃথিবী থেকে সূর্যের গড় দূরত্ব ১৫ কোটি কিলোমিটার।
এখানে উভয়ই দূরত্ব সমান। কিন্তু মজার বিষয় এই যে, পৃথিবীতে গাছপালা এবং পানি আছে। অক্সিজেন আছে পর্যাপ্ত। কিন্তু চাঁদ একদমই ভিন্ন। কিন্তু নাসা নিশ্চিত করেছে যে পৃথিবী থেকে আমরা চাঁদের যে দিকটা দেখতে পাই-তার উপরিতলে (সারফেস) পানি অণুর অস্তিত্ব আছে। পানির অণুতে দুটি হাইড্রোজেন ও একটি অক্সিজেনের পরমাণু আছে।
চাঁদের মাটিতে যে পানি আছে তা 'সুস্পষ্টভাবে' নিশ্চিত করেছে মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা। ( আমার এখানে কোন ভাবেই নাসা নিয়ে কোনোরকম মন্তব্য করতে চাই না)।
কিন্তু আমরা জানতে চাই চাঁদের জমি কারা বিক্রি করেন? তাছাড়া চাঁদ কাদের দখলে আছে?
এইসকল উত্তরগুলো জানার আগে আমরা আরো কিছু বিষয় জেনে নেই।
সেই ১৯৬৯ সালে নিল আর্মস্ট্রং ও বাজ অলড্রিন চাঁদের বুকে অবতরণ করেন। চাঁদের বুকে সেবারই প্রথম মানুষের পদচিহ্ন পড়েছিল। তারপর ১৯৭২ সাল পর্যন্ত আরও কয়েকটি অভিযানে মানুষ চাঁদের বুকে অবতরণ করেছিল। কিন্তু ১৯৭২ সালের পর থেকে আর কোনো মানুষ চাঁদে অবতরণ করেনি। তবে সেই পরিস্থিতি বুঝি দ্রুতই শেষ হতে চলেছে। চীন বেশ কয়েক বছর ধরেই চাঁদের পানে হাত বাড়িয়ে চলেছে। ২০১৩, ২০১৯ এবং ২০২০ সালে চীন চাঁদে সফলভাবে বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করেছে। চাঁদের দিকে নজর আছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া ও জাপানেরও।
সেই স্নায়ুযুদ্ধের সময় থেকেই মহাকাশের বিভিন্ন গ্রহ-উপগ্রহ নিয়ে প্রভাবশালী দেশগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা যখন চাঁদের বুকে প্রথম মনুষ্যবাহী যান পাঠানোর পরিকল্পনা করছিল, তখন জাতিসংঘের উদ্যোগে ১৯৬৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্য ‘আউটার স্পেস ট্রিটি’ নামের এক চুক্তিতে স্বাক্ষর করে।
মজার ব্যাপার হলো ওই চুক্তিতে বলা হয়, কোনো নির্দিষ্ট দেশ চাঁদসহ মহাকাশের অন্যান্য গ্রহ-উপগ্রহের সার্বভৌমত্ব বা মালিকানা দাবি কিংবা কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ১১১টি দেশ এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে।
চুক্তিটিকে মহাকাশের ‘ম্যাগনাকার্টা’ হিসেবে অভিহিত করেন অনেকে। এই চুক্তির কারণেই চাঁদের বুকে পতাকা উড়িয়েই যে কেউ এর মালিকানা দাবি করতে পারে না। কিন্তু ১৯৬৭ সালের চুক্তিতে চাঁদের ভূমির ওপর ব্যক্তিগত ও করপোরেট অধিকার নিয়ে কিছু বলা হয়নি। ফলে আসলেই যদি ধনী কোনো ব্যক্তি চাঁদের বুকে একখণ্ড জমি কিনতে চায়, তার বেলায় কী হবে, সেটি অস্পষ্ট থেকে যায়। এখানে আইন বিশেষজ্ঞরা দুই রকম ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। কেউ কেউ বলছেন, সম্পত্তির অধিকার দাবি করতে হলে সেই সম্পত্তি হতে হবে কোনো নির্দিষ্ট দেশের সীমানার ভেতরে। আবার কেউ কেউ বলছেন, সম্পত্তির অধিকার এবং সার্বভৌমত্ব কোনো ভৌগোলিক সীমানার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। ( তথ্য: ইন্টারনেট গুগল )
২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র ‘কমার্শিয়াল স্পেস লঞ্চ কমপিটিটিভনেস অ্যাক্ট’ নামের এক আইন পাস করে। যার ফলে মার্কিন নাগরিকেরা মহাকাশের এমন যেকোনো কিছুর মালিকানা নিতে পারবে, যেখানে তারা পানি এবং অন্যান্য খনিজ সম্পদের জন্য খননকার্য পরিচালনা করতে পারবে।
কিন্তু এই চুক্তির দুর্বলতা হচ্ছে, মাত্র ১১টি দেশ এতে স্বাক্ষর করেছে। স্বাক্ষরকারী দেশের তালিকায় আছে ফ্রান্স এবং ভারত। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া ও চীনের মতো গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলো এই চুক্তিকে অনুমোদন দেয়নি।
প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে চাঁদের জমির টাকা কোন কোন দেশে যাচ্ছে। এখন কেউ কেউ বিভিন্নভাবে একটি প্রতারণা জাল বুনছেন। এই জালের মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছেন বিপুল পরিমাণের অর্থ।
সহজ-সরল সাধারণ বাঙালিরা বিষয়টি খুব আমলে নেয়। এবং চাঁদে জমি কেনার ক্ষেত্রে বেশ আগ্রহী। তারা মনে করে তারা সভ্যতায় পৌঁছে যাবে। বড় অদ্ভুত বিস্ময়কর যে তাদেরকে বড় ধরনের বোকা বানানো হচ্ছে সেই বিষয়ে কোনো ধারনাই নেই।
এতে করে তাদের শখ-আহ্লাদ পূরণ করতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন বটেই সেই সাথে দেশের টাকা চলে যাচ্ছে বিদেশে।
লেখক: ইসমাইল সরদার