‘শিক্ষকদের এমন বেতন দিতে হবে যাতে কাউকে প্রাইভেট পড়াতে না হয়’
শিক্ষকদের বর্তমান অবস্থা নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন। তার মতে শিক্ষকদের সামাজিক মান উন্নয়ন ব্যতীত বাংলাদেশের সত্যিকারের উন্নয়ন সম্ভব নয়। এই বিষয়ে তিনি সোমবার তার ফেসবুক আইডিতে মতামত তুলে ধরেছেন।
তিনি লিখেছেন, 'যেদিন থেকে বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডার চাকুরী প্রত্যাশীদের কাছে সবচেয়ে পছন্দের চাকুরী হবে সেদিন থেকে বাংলাদেশের সত্যিকারের উন্নয়ন শুরু হবে। যেদিন থেকে প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক পর্যন্ত সবাই সমাজে মান মর্যাদা ও আত্মসম্মান নিয়ে বাঁচতে পারবে সেদিন থেকে বাংলাদেশের সত্যিকারের উন্নয়ন শুরু হবে। যেদিন থেকে শিক্ষার্থীরা দেখবে তাদের শিক্ষকরা অনেক জ্ঞানী, অনেক মানবিক, অনেক প্রতিবাদী সেদিন থেকে বাংলাদেশের সত্যিকারের উন্নয়ন শুরু হবে।
স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ এবং নিয়োগ পরবর্তী প্রমোশন নিয়ে যখন শিক্ষকদের কারো কাছে যেতে না হবে সেদিন থেকে বাংলাদেশের সত্যিকারের উন্নয়ন শুরু হবে। স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ এবং নিয়োগ পরবর্তী প্রমোশনগুলো যখন থেকে কেবল যোগ্যতা বলে একটি নিয়মের অধীনে হবে সেদিন থেকে বাংলাদেশের সত্যিকারের উন্নয়ন শুরু হবে।
বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডার যে পছন্দের তালিকার সর্বনিম্নে এটাই প্রমাণ করে আমাদের শিক্ষকরা সমাজে সবচেয়ে অবহেলিত। প্রাইমারি স্কুল বা মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষকদের দিকে একটু তাকিয়ে দেইখেন দেখবেন মনমরা একটা মৃতপ্রায় শরীর। তারা কিভাবে আমাদের আদরের সন্তানদের মধ্যে স্বপ্ন বীজ বপন করবে? বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দিকেই তাকিয়ে দেখুন না? তারা কোন অন্যায়ের প্রতিবাদতো করেই না উল্টো ক্ষমতাবানদের পিছে ছুটতে দেখি। পড়াশুনা নাই, গবেষণা নাই, শিক্ষার্থীদের সাথে ইন্টারঅ্যাকশন নাই। শিক্ষক আর শিক্ষার্থী যেন দুই ভুবনের দুই শ্রেণীর বাসিন্দা। টয়লেট বানাবে সেটাও শিক্ষক এবং ছাত্রদের জন্য আলাদা। ক্যাফেটেরিয়া বানাবে সেখানেও শিক্ষক ছাত্র আলাদা। লাইব্রেরিতেও শিক্ষক শিক্ষকর্থীদের জায়গা আলাদা। এমনতো পৃথিবীর কোন সভ্য দেশে নেই।
শিক্ষায় জিডিপির ন্যূনতম ৫% বরাদ্দ দিতে হবে। শিক্ষকদের জন্য একটি বিশেষ পে-স্কেল ঘোষণা করতে হবে যাতে অন্য কারো সাথে এর তুলনার প্রশ্ন না আসে।
শিক্ষকদের এমন বেতন দিতে হবে যাতে কোন শিক্ষককে পার্ট-টাইম বা প্রাইভেট পড়াতে না হয়। ঘুম এবং খাওয়া ব্যতীত একজন শিক্ষক বাকি পুরো সময়ের জন্য একজন সম্পূর্ণ শিক্ষক। শিক্ষকের বিশ্রামও কাজের অংশ কারণ ওই সময়েই সে কাজের পরিকল্পনা করে এবং গবেষণার আইডিয়া পায়। সরকারকে বুঝতে হবে একটি সুন্দর আগামীর বাংলাদেশ বানাতে হলে আজকের শিক্ষার্থীদেরকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করতে হবে। জিডিপির ২% শিক্ষায় বরাদ্দ দিয়ে কক্ষনো একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়া সম্ভব না।
সমস্যা হলো শিক্ষায় বিনিয়োগের ফল আসে এত দেরিতে যে যাপিত সরকার মনে করে ওই সময়ে তারা ক্ষমতায় নাও থাকতে পারে। তাদের বিনিয়োগের ফল অন্য সরকার কেন ভোগ করবে? ওই যে দলের আগে দেশকে ভাবতে এরা অক্ষম।'