বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য রাষ্ট্রে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা নয়
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য রাষ্ট্রে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা নয়। কাজেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় কি কি ভূমিকা রেখেছে শতবর্ষ পূর্তিতে সেসব আলোচনা করে আত্মতুষ্টিতে ভোগার কোন কারণ দেখিনা। এ কন্ট্রিবিউশনকে বড়জোর বিশ্ববিদ্যালয়টির সোশ্যাল কিংবা পলিটিক্যাল রেসপন্সসিবিলিটি হিসাবে কন্সিডার করা যেতে পারে। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার থিমেটিক উদ্দেশ্য কোন রাষ্ট্রে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, অভিজাততন্ত্র, ধনিকতন্ত্র, রাজতন্ত্র কিংবা স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা নয়।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য রিসার্স হাইফ্লায়ার তৈরি করা, নলেজ সোর্স তৈরি করা, নলেজ সার্স করা, নলেজ ক্রিয়েট করা, স্কিল রিসোর্স তৈরি করা ইত্যাদি। একটি বিশ্ববিদ্যালয় তাও বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় বড়জোর রাষ্ট্র পরিচালনায় যেসব ম্যানেজারিয়াল সিস্টেম রয়েছে সেসব তত্ত্বকে ডেভলপ কিংবা নতুন কোন তত্ত্বের আইডিয়া বা কনসেপ্ট উদ্ভাবনে কন্ট্রিবিউট করতে পারে। কিন্তু সেটি রাষ্ট্রে ইমপ্লিমেন্ট করার দায়িত্ব ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়।
তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু একটি সার্বজনীন কিংবা বিশ্বজনীন অথবা ব্রক্ষান্ড ধারণা সেক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন শুধুমাত্র গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবে? তাহলে তার সার্বজনীনতা থাকে কই? রাষ্ট্রের অন্যান্য ম্যানেজারিয়াল সিস্টেম কেন সে উপেক্ষা করবে? কেন সে নীলক্ষেতের মোড়ে শুধুমাত্র গণতন্ত্র তোরণ নির্মাণ করবে? তাহলে সমাজতন্ত্র, রাজতন্ত্র কিংবা অভিজাততন্ত্রসহ অন্যান্য তোরণ কেন সে নির্মাণ করবে না? গণতন্ত্রের নামে তোরণ নির্মাণ বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ একাডেমিক বায়াসনেস।
উপরন্ত এটি ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানের পরিপন্থী। ১৯৭২ সালের সংবিধানে রাষ্ট্রপরিচালনার যে চারটি মূলনীতি রয়েছে তার সাথে সাংঘর্ষিক। কারণ সেখানে যেমন গণতন্ত্রের কথা আছে তেমনি সমাজতন্ত্রের কথাও আছে। শুধু যে আছে তা নয় গণতন্ত্রের বরং আগে সমাজতন্ত্রের কথা বলা আছে।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়