শতবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চাইনিজ কমিউনিস্ট পার্টি
শুভ জন্মদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চাইনিজ কমিউনিস্ট পার্টি। ১০০ বছর আগে ১৯২১ সালের ১ জুলাই দুটি প্রতিষ্ঠানের জন্ম। দুটি প্রতিষ্ঠানই তাদের দেশের আজকের অবস্থানে আসার পেছনের মূল কারিগর। বাংলাদেশের সাথে যেমন জড়িয়ে আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। আবার চীনের সাথে জড়িয়ে আছে কমিউনিস্ট পার্টির নাম।
একটি প্রতিষ্ঠান অবদান রেখেছে শিক্ষায়। আর অন্যটি রাজনীতিতে। তবে রাজনীতি ও শিক্ষার বিষয়গুলো একটি আরেকটির পরিপূরক। কেননা রাজনীতি যেমনিভাবে শিক্ষাকে প্রভাবিত করে, ঠিক তেমনিভাবে শিক্ষাও রাজনীতির উপর প্রভাব বিস্তার করে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো শিক্ষা ও রাজনীতির সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা ও উচ্চশিক্ষার সুযোগ থাকলেও আমাদের এখানে এ ধরনের গবেষণা তেমনটি দেখা যায়না। তবে দুটি বিষয়ের মধ্যে গভীর সম্পর্ক বিরাজমান।
শতবর্ষে এসে দুটি প্রতিষ্ঠানের নিজ নিজ ক্ষেত্রে অবদান মূল্যায়ন করা হলে দুটি ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। পূর্ব বাংলার অবহেলিত মুসলমান জনগোষ্ঠীকে উচ্চ শিক্ষার মাধ্যমে এগিয়ে নিতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯২১ সালে ১২টি বিভাগ, ৬০ জন শিক্ষক ও ৮৭৭ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু। প্রতিষ্ঠার ১০০ বছরে এসে এর কলেবর দাড়িয়েছে ৮৪টি বিভাগ, ১ হাজার ৯৯২ জন শিক্ষক ও ৩৭ হাজার ১৮ জন শিক্ষার্থীতে।
অন্যদিকে ১৯২১ সালে মার্ক্সিস্ট মতবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে মাও সে তুং-এর নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় চাইনিজ কমিউনিস্ট পার্টি। যা পৃথিবীর ২য় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। যারা ১৯৪৯ সাল থেকে চীনের রাষ্ট্র ক্ষমতায় আছে। যাদের নেতৃত্বে চীন আজ বিশ্বে সুপার পাওয়ায়। চীনের উন্নয়নের ক্ষেত্রে যাদের অবদানকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হচ্ছে। আর বাংলাদেশের অভ্যুদয় ও উন্নয়নের সাথে জড়িয়ে আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম।
পড়ুন: শতাব্দী পেরিয়ে ‘জাতির বাতিঘর’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সমালোচকরা মনে করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার চেয়ে দেশের রাজনীতিতেই বেশি অবদান রেখেছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার যতটা অবদান রাখার কথা তা ছাপিয়ে রাজনীতিতে এর অবদান মূখ্য হয়ে উঠেছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-ছাত্ররা কতটা গবেষণা করছে তা বিচার্য হয় না বরং কে কতটা রাজনীতিতে সক্রিয় এটাই বিবেচ্য। আর রাষ্ট্র হিসেবে চীন কমিউনিস্ট পার্টিতে বিলিন হয়ে গেছে।
১৯৪৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর কমিউনিস্ট পার্টিই এখানে শেষ কথা। তবে সি চিন পিং এর আমলে চীন অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষায়ও অনেক উন্নতি করছে। তাদের ছেলে-মেয়েরা ইউরোপ আমেরিকার শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা করছে। এসব মেধাবীদের দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিচ্ছে। কমিউনিস্ট পার্টি চীনের শিক্ষার উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দলীয় রাজনীতিতে কর্মী সরবরাহ করে ভূমিকা রাখছে।
গত দশকে চীন তাদের মেধাবীদের জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। যারা বিদেশে পড়াশুনা করতে ইচ্ছুক তাদের পাঠাতে সাহায্য করেছে। আর যারা ফিরতে ইচ্ছুক তাদের ফিরিয়ে আনতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ইনভেস্ট করেছে। মেধাবী গবেষকদের শিক্ষকতায় প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। বিশ্বের টপ র্যাংক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সমন্বয়ের গবেষণা সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছে। গবেষণা খাতে প্রচুর বরাদ্দ দিয়েছে। যার ফল তারা ইতোমধ্যে পেতে শুরু করেছে।
অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়েছে। দলীয় বিবেচনায় শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে মেধাবীদের বঞ্চিত করা হয়েছে। যেসব মেধাবীরা দেশে ফিরতে চায় তাদের জন্য কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের যেখানে মূল কাজ গবেষণা করা, সেখানে এবছর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে মাত্র ১১ কোটি টাকা। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে দেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ক্লাস পরীক্ষা গ্রহণ করে সমাবর্তনের আয়োজন করতে পারলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখনো পরীক্ষা নেয়ার পথ খুঁজছে।
মূলত ভালো নেতার নেতৃত্ব পেলে দল বা বিশ্ববিদ্যালয় সবই কাঙ্খিত লক্ষ্যে ছুটে চলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন একজন নেতা আসুক যা হাত ধরেই বদলে যাবে প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়। যার ফল পাবে আগামীর বাংলাদেশ। এটাই হোক জন্মদিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য শুভ কামনা।
লেখক: শিক্ষা গবেষক ও সাবেক শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়