ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: যেন সদ্য প্রেমে পড়া তরুণী

লেখক ও ঢাবি শতবর্ষের লোগো
লেখক ও ঢাবি শতবর্ষের লোগো  © শেখ শাকিল হোসেন

আজ হাজারো শিক্ষার্থীর পদচারণায় মুখরিত থাকতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। প্রাণের ক্যাম্পাস তার নিজ রূপে ঢঙে সেজে উঠতো সদ্য প্রেমে পড়া তরুণীর মতো। ক্যাম্পাসের আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়াতো কত শত শিক্ষার্থী, উদযাপন করতো শতবর্ষপূর্তি। কিন্তু করোনা মহামারীর থাবা যে খুব ভয়ানক!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার করা প্রথম ক্লাসে তাসনীম ম্যামের বলা কিছু কথা সবসময় মনে পড়ে। তিনি বলেছিলেন, তোমরা যে সোসাইটি, পরিবার বা প্রতিষ্ঠান থেকে এসেছো, সেসব জায়গার পরিচয় নির্ভর করবে তোমার উপর। অর্থাৎ তুমিই সবসময় ওই প্রতিষ্ঠানকে রিপ্রেজেন্ট করবে। আর তোমার পরিচয়েই গড়ে উঠবে সেই প্রতিষ্ঠানের পরিচয়। 

আমি কখনোই আমার কোনো প্রতিষ্ঠান নিয়ে গর্ব করিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়েও ঠিক তাই। ইদানিং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে চোখের সামনে অনেক ট্রলড হতে দেখি, বলা যায় ‘ইহা এখন হাসিতামাশার জায়গা হইয়া দাঁড়াইয়াছে’। কিন্তু এর গৌরবের কথা আমরা হয়তো অনেকেই জানি না বা জানার চেষ্টা করি না।

আহমদ ছফা ‘যদ্যপি আমার গুরু’ বইয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবময় ইতিহাস নিয়ে কিছু কথা বলেছিলেন। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি গৌরবময় ইতিহাসের একটি হলো পাকিস্তান আন্দোলনের মনস্তাত্ত্বিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিক ভিতটি তৈরি করা, দ্বিতীয় অবদান বাংলা ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্বদান এবং তৃতীয় অবদান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সংকল্প এবং কর্মপন্থার দিকনির্দেশনা। একটি দেশ গড়তে যে প্রতিষ্ঠান এতটা অবদান রাখতে পারে তার সফলতা নিয়ে প্রশ্ন তোলাটাও নেহাৎ বেকামি! কিন্তু বর্তমানেও কি আমরা সেই চিত্র দেখতে পাই? আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কি সেই চিরচেনা অতীত আর গৌরবময় সাফল্যকে ধরে রাখতে পেরেছে? নাকি নুইয়ে পড়ছে হাজারো ব্যর্থতার ভারে?

যাহোক, একটা কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, স্কুল কলেজে পড়া অবস্থায় বাংলাদেশের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর স্বপ্ন থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এই ক্যাম্পাসের স্বাদ নিতে চায় হাজারো শিক্ষার্থী। কিন্তু সবাই হয়তো সুযোগ পায় না, সেই সুযোগ হয়তো সৃষ্টিকর্তা সবাইকে দেন না। কারণ এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যে হাজারো শিক্ষার্থীর রাত জাগা স্বপ্নের আরেক নাম। কত শত শিক্ষার্থীর নির্ঘুম রাতের সাক্ষী হয় প্রিয় এই ক্যাম্পাস। এই ক্যাম্পাস এক ভালোবাসার নাম, যেখানে মিশে আছে হাজারো মানুষের হাজারো স্বপ্ন, আবেগ, ভালোবাসা আর উৎকন্ঠা। প্রিয় এই ক্যাম্পাসের নৈসর্গিক সৌন্দর্য যেনো আকৃষ্ট করে প্রতিটা স্তরের মানুষকে। 

আজ প্রিয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শত বছর পার করলো। গৌরবের ১০০ বছর পূর্ণ করে সমানে এগিয়ে যাচ্ছে প্রিয় এই প্রতিষ্ঠান। আজ হয়তো প্রিয় ক্যাম্পাস তার বর্ণিল রূপে সেজেছে, কিন্তু তার সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীরা আজ তার থেকে অনেক দূরে। করোনা মহামারীর জন্য ১০০ বছর উদযাপনকে ঘিরে কোনো উৎসব পালন করতে পারছে না হাজারো শিক্ষার্থী। কিন্তু তাই বলে তারা থেমে নেই। অনলাইনভিত্তিক বিভিন্ন কাজ তারা চালিয়ে যাচ্ছে, ক্যাম্পাসকে নিয়ে তাদের স্বপ্ন আর আবেগের কথা সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করছে। আসলে এই ক্যাম্পাস এক আবেগের জায়গা,ভালোবাসার জায়গা। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করি সবসময়। আমার ক্যাম্পাস শুধু দেশে না, দেশ পেরিয়ে গৌরবময় হয়ে উঠুক সমগ্র বিশ্বের সামনে। আর সেই দায়িত্ব অবশ্যই আমাদের মতো হাজারো শিক্ষার্থীর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের কি দিয়েছে বা দেয়নি সেটা যেমন মাথায় রাখতে হবে, সেইসাথে মাথায় রাখতে হবে আমরা কি দিয়েছি আমাদের প্রিয় ক্যাম্পাসকে। এখন সময় এসেছে প্রিয় ক্যাম্পাসের জন্য  লড়াই করার, এর সফলতা ধরে রাখার আর সমগ্র বিশ্বের সামনে মাথা তুলে দাঁড়াবার। শত বছরে এই হোক আমাদের প্রতিজ্ঞা।

আমরা আমাদের ক্যাম্পাসকে ভালোবাসি, আমাদের সফলতার উপরই নির্ভর করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সফলতা, নির্ভর করছে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়। আমরা চেষ্টা করবো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি যেনো কোনো রকম আঁচ না আসে, যুগের পর যুগ এর অস্তিত্ব টিকে থাকে সবার মাঝে। জয় হোক প্রিয় ক্যাম্পাসের,সকলের ভালোবাসায় সিক্ত হোক প্রিয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।

লেখক: শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ