করোনায় মডেল হাসপাতাল চাই

রাশেদ ইসলাম
রাশেদ ইসলাম  © ফাইল ছবি

আমাদের দেশে পদ্মা বহুমুখী সেতুর পর নিজস্ব অর্থায়নে সারা দেশে ৮ হাজার ৭২২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণে সরকারের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রকল্প।

প্রকল্প পরিচালকের দপ্তর ও ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নির্মিতব্য এসব মডেল মসজিদে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধাই থাকছে। নারী ও পুরুষদের জন্য পৃথক অজু ও নামাজ কক্ষ, ইসলামিক সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স পাঠাগার, গবেষণা কেন্দ্র, ইসলামিক বই বিক্রয়কেন্দ্র, পবিত্র হেফজ বিভাগ, শিশুশিক্ষা ছাড়াও অতিথিশালা, পর্যটকদের আবাসন, মৃতদেহ গোসলের ব্যবস্থা, জানাজার ব্যবস্থা, হজযাত্রীদের নিবন্ধন ও প্রশিক্ষণ, ইমামদের প্রশিক্ষণ, গণশিক্ষা কেন্দ্র, ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, অটিজম কর্নার, ই-কর্নারসহ একটি পূর্ণাঙ্গ কমপ্লেক্স মডেল মসজিদে সব সুবিধায় থাকছে।

মসজিদের অভাবে মানুষ নামাজ পড়তে পারছেনা, এমন অভিযোগ কোনো গণমাধ্যম প্রকাশ করেনি।  কিন্তু হাসপাতালে সিট না পেয়ে, চিকিৎসার অভাবে অনেক মানুষ মারা যায় এমন তথ্য অনেক সংবাদমাধ্যম ছাপিয়ে। শুক্রবার জুমার নামাজের আগে মসজিদে কিছুটা জায়গায় সংকট হয়। আর বাকিসময় অধিকাংশ মসজিদে তেমন লোকসমাগম থাকে না।

দেশে  মাদক, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, দখলদারিত্ব রেখে, শুধু মসজিদ নির্মাণ করে মনুষ্যত্বের মানুষ তৈরীর বিষয়টা কতটা যুক্তিসঙ্গত। সারাদিন অপরাধ করে এসে শুক্রবারে জুমার নামাজ পড়ে মুনাজাত করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলে সব ক্ষমা হবে।

স্বাস্থ্য খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেওয়া হয়নি। গেল অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে এবার ব্যয় বাড়ল ৪ শতাংশ। গত অর্থবছরের স্বাস্থ্য বরাদ্দের আকার ছিল মূল বাজেটের ৫ দশমিক ১ শতাংশ, এবার তা ৫ দশমিক ৪ শতাংশ হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে প্রতিবছর বাংলাদেশের ১ কোটি ১৪ লাখের বেশি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের ওপর এই চাপ বৃদ্ধির কারণ হচ্ছে স্বাস্থ্যের জন্য রাষ্ট্রীয় আর্থিক নিরাপত্তাব্যবস্থা দুর্বল। ডব্লিউএইচওর মতে, বাংলাদেশের প্রায় ২৫ শতাংশ মানুষকে ‘আকস্মিক স্বাস্থ্য ব্যয়ের’ চাপ সামলাতে হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে একটি পরিবার তার মোট ব্যয়ের ১০ শতাংশ ব্যয় করছে শুধু স্বাস্থ্যের পেছনে।

স্বাস্থ্য খাতে যে বেহাল দশা এই করোনা ভাইরাস উন্মোচন করেছে তা আজ সবার সামনে স্পষ্ট। পর্যাপ্ত আইসিইউ না থাকার ফলে এক জন ডাক্তারকে জীবন দিতে হয়। টেস্টিং যে পর্যাপ্ত না তার প্রমাণ একনজন জাতীয় অধ্যাপক মারা যাবার পর তার রির্পোটে করোনা পজিটিভ আসে।

এই ক্রান্তিলগ্নে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্র যদি সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে না পারে তাহলে  করোনা নামে এই দাবনকে মোকাবেলা কঠিন হয়ে যাবে।পৃথিবীর উন্নত রাষ্ট্রগুলো যেখানে জ্ঞান বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে। সেখানে শিক্ষায় এবং গবেষণায় গুরুত্ব না দিয়ে ধর্মের নামে মানুষের মন জয় করার রাজনীতিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছি। মানুষের মৌলিক অধিকার  শিক্ষা ও চিকিৎসাকে বাণিজ্যিকরণ না করে  মডেল হাসপাতাল, মডেল লাইব্রেরি,মডেল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং গবেষণাগার স্থাপন করা প্রয়োজন। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে তা না হলে  আমাদের কষ্টার্জিত স্বাধীনতার আর কোন অর্থ থাকবে না। 

লেখক:

সাংবাদিক ও শিক্ষার্থী

প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, জয়পুরহাট সরকারি কলেজ। 


সর্বশেষ সংবাদ