০৮ জুন ২০২১, ১১:১১

বজ্রপাত বিষয়ে গণসচেতনতা বাড়ানো অতি জরুরি

রাশেদ ইসলাম  © ফাইল ছবি

বিশ্বজুড়ে পরিবেশগত পরিবর্তন একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়।  বিশেষ করে জলবায়ুগত পরিবর্তনের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন— বন্যা, খরা, সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি, নদী ভাঙন, ঘূর্ণিঝড়, অতিবৃষ্টি, বজ্রপাত ইত্যাদির প্রবণতা বৃদ্ধি।

বেশ কিছু দিন ধরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে  লক্ষ্য করা যায় যে, বজ্রপাতে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি অতীতের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বৃদ্ধি জলবায়ুগত এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদানের পরিবর্তনের জন্যই দায়ি।

আমাদের দেশে এপ্রিল-জুন মাসে বজ্রপাত বেশি হয়। বজ্রপাতে এবং করোনায় মৃত্যু উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরী হচ্ছে। 

দেশে বজ্রপাতে গত রবিবার এক দিনেই ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর গেল সাত দিনে অর্ধশতাধিক লোকের মৃত্যু হয়েছে।

জয়পুরহাট সরকারি কলেজে ব্যবস্থ্যাপনা বিভাগের  ছাত্র শাকিল আহম্মেদ  গরু ঘাস খাওয়ার জন্য মাঠে গিয়েছিল। বিকেলে প্রচন্ড ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে গরু নিতে যায় শাকিল। এসময় বজ্রপাতে তার ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। ছাত্র, কৃষক,শ্রমিক হাজারও মানুষের প্রাণ চলে যাচ্ছে বজ্রপাতে এমন মৃত্যুর খবর বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপানো হয়েছে। 

কয়েক দশকে বড় বড় গাছ কেটে ফেলার কারণে বনাঞ্চল ধ্বংসে বৈশ্বিক উষ্ণায়নে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন হলে বায়ুমণ্ডল বেশি জলীয়বাষ্প ধারণ করতে পারে, তাই বেশি বজ্রঝড় তৈরি হতে পারে। বনায়ন কমে গেলে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। কারণ হিসেবে বলা যায়, গ্রিন হাউস কার্বন-ডাই-অক্সাইডকে গাছপালার খাদ্য উৎপাদনে করে। 

গবেষণায় এসেছে, ২০১৩-২০২০ (জুন পর্যন্ত) দেশে মোট ১ হাজার ৮৭৮ জন বজ্রপাতে মারা গেছেন। বজ্রপাতে দেশে বছরে প্রাণহানি প্রতি ১০ লাখে ১ দশমিক ৬ জন।

প্রতিবছর বজ্রপাতে অস্বাভাবিক ভাবে মৃত্যুর দায় কি আমরা কপালতত্ত্বের উপর ছেড়ে দেব?  না কি এর প্রতিরোধের জন্য বৈজ্ঞানিকভাবে বিচার বিশ্লেষণ করব। দেশে বজ্রপাতে মারা যাওয়াদের প্রায় ৭০ শতাংশ কৃষক।

সুজলা-সুফলা শস্য শ্যামলা এই আমাদের বাংলাদেশ। মাঠের পর মাঠ ধানের ফসলি জমিতে ভরপুর। বেশির ভাগ ফসলি জমিতে বড় কোনো গাছ থাকে না বজ্রপাতের ধর্ম হচ্ছে, মাটিতে আঘাত হানার পূর্বেই সবচেয়ে উঁচু যে জায়গাটি পায় সেখানে গিয়ে পড়ে। বজ্রপাতের সময় কৃষকের শরীরই মাটির চেয়ে উঁচু থাকে তখন গায়ে পড়ে মৃত্যু ঘটে।

বজ্রপাত প্রতিরোধক দণ্ড স্থাপন না করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর সারা দেশে প্রায় ১৩ লাখ তালগাছ রোপণ করেছিল। বেশির ভাগ গাছ রাস্তার দুই পাশে রোপণ করা হয়েছিল। যদিও বজ্রপাত থেকে রক্ষার জন্য তালগাছ লাগানোর কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়, তবে তালগাছ বড় হতে অনেক সময় লাগে। কতগুলো গাছ বেঁচে আছে সেটার সঠিক তথ্য জানা নেই বজ্রপাতে মৃত্যু বেশি হয় খোলা মাঠে।

সময় ও এলাকাকে বিবেচনায় নিয়ে বজ্রপাত ব্যবস্থাপনায় বিশেষ কর্মসূচি নিতে হবে। প্রাণঘাতী, মানুষ ও প্রকৃতির জন্য সর্বনাশা বনায়ণ বিধ্বংসী বাণিজ্য প্রকল্প থেকে বাতিল করতে হবে।

বজ্রপাতে মৃত্যুর হার কমাতে সরকারি উদ্যোগে বজ্র নিরোধক দণ্ড স্থাপনে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ এবং এ বিষয়ে গণসচেতনতা বাড়ানো উদ্যোগ নিতে হবে। ঝড়-বৃষ্টির সময় বাইরে যাওয়া থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি বজ্রপাত প্রতিরোধের নিয়মগুলো মেনে চলতে হবে। বেশি করে বিভিন্ন গাছপালা লাগাতে হবে। তাহলে অনেকাংশে কমে আসবে বজ্রপাতে মৃত্যু।

লেখক:

শিক্ষার্থী, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, জয়পুরহাট সরকারি কলেজ। 

Email: rashedssf12@gmail.com