শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা করুন

প্রতীকী
প্রতীকী  © টিডিসি ফটো

বাংলা সাহিত্যের একজন নীতিবান লেখক ডাক্তার লুৎফর রহমান তার ‘যুবক জীবন’ গ্রন্থে লিখেছেন -“যুবক বয়সে কাজ নাই কর্ম নাই দিনরাত শুয়ে বসে থাকিলে মাথায় তরল চিন্তা ঢুকে। মাথায় তরল চিন্তা ঢুকেছে তো আর রক্ষা নাই।”

দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আমাদের শিক্ষার্থীদের অবস্থা অনেকটা তাই। অনলাইন পত্রিকা দৈনিক ক্যাম্পাসের মাধ্যমে আমরা এক ভয়ঙ্কর তথ্য পেয়েছি। গত একবছরে বিভিন্ন ভার্সিটি এবং মেডিকেলের ৪০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা করেছে। মাদকাসক্ত ও প্রযুক্তিতে আসক্ত হয়ে নিজেদেরকে তিলে তিলে শেষ করেছে কতজন তার কোনো পরিসংখ্যান নেই। এভাবে দিন যত গড়াবে ভয়াবহ অবস্থা তত বৃদ্ধি পাবে। তাই এদেরকে দ্রুত প্রতিষ্ঠানে ফিরে আনতে হবে এবং পড়ালেখা ও পরীক্ষায় ব্যস্ত রাখতে হবে। দিন যাচ্ছে সেশন জট বাড়ছে চাকরি বয়স পার হচ্ছে। পাশাপাশি পরিবারের পক্ষ থেকেও কিছু একটা করার চাপ বাড়ছে। ফলে হতাশা বাড়ছে, বাড়ছে অস্থিরতা চিন্তা, ঝুঁকছে নানা রকমের আসক্তিতে। ক্ষতির বিবেচনায় শিক্ষার্থীদের দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

১. যাদের শিক্ষার ক্ষতি হলেও সময়ের ক্ষতি হয়নি। যেমন প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীবৃন্দ।

২. পড়ালেখার ক্ষতির পাশাপাশি সময়ের ও অর্থের ক্ষতি হয়েছে। যেমন দশম শ্রেণি থেকে স্নাতকোত্তর শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীবৃন্দ। এদের কেউ কেউ টিউশনি করে জীবন-জীবিকা পরিচালনা করত। টিউশনি বন্ধ হয়ে গেছে।

হতাশা ও অস্থিরতার কারণে তারা নানারকম অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। তাদের এই মানসিক সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরছি-

১. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দ্রুত খুলে দিতে হবে, শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় ব্যস্ত রাখতে হবে তবে চাপে রাখা যাবে না।
২. সেশন জট দূর করার জন্য ৫ বছর মেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে, এজন্য নয় মাসে শিক্ষাবর্ষ নির্ধারণ করতে হবে।
৩. স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সকল শিক্ষার্থীকে সাধারণ বৃত্তি প্রদান করতে হবে যাতে তাদের আর্থিক চাপ না থাকে।
৪. স্নাতকোত্তর সকল শিক্ষার্থীকে পাশ করার পর এক বছর বেকার ভাতা প্রদান করতে হবে।
৫. সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়াতে হবে।
৬. মনোবিজ্ঞানীদের দ্বারা শিক্ষার্থীদের কে কাউন্সেলিং করতে হবে।
৭. সংক্ষিপ্তভাবে দ্রুত পরীক্ষা নিতে হবে এবং দ্রুত ফলাফল ঘোষণা করতে হবে।
৮. স্বাস্থ্যবিধি মেনে হল খুলে দিতে হবে এবং স্বাভাবিক চলাফেরা সুযোগ করে দিতে হবে।
৯. সুস্থ বিনোদনের ব্যবস্থা করতে হবে।
১০. কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে।

শিক্ষাকে যদি জাতির মেরুদণ্ড ধরা হয় শিক্ষার্থীদেরকে ধরতে হবে জাতির হৃদপিণ্ড। মেরুদণ্ড ছাড়াও কোন কোন প্রাণী বাঁচতে পারে কিন্তু হৃদপিণ্ড বন্ধ হয়ে গেলে কোন প্রাণীই বাঁচতে পারে না। তাই আমাদের উচিত শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেয়া।

লেখক: সহকারি অধ্যাপক, কাদিরদী ডিগ্রী কলেজ, বোয়ালমারী ফরিদপুর


সর্বশেষ সংবাদ