০২ জুন ২০২১, ১৫:১৪

হল খুলে দিন, না হয় ‘Take Home Exam’-এর ব্যবস্থা করেন

প্রতীকী  © সংগৃহীত

গত দেড় বছর যাবৎ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে করোনা মহামারির কারণে কোনো পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। অনলাইন ক্লাস হলেও ছাত্র-ছাত্রীর উপস্থিতি সন্তোষজনক নয়। অনলাইনে মিড, সেমিস্টার পরীক্ষা বা টার্ম পরীক্ষাগুলো নেয়া হলেও অনেক শিক্ষার্থী বৈষম্যের শিকার হয়েছেন ভালো নেট সুবিধা বা পর্যাপ্ত ডিভাইস না থাকার কারণে।

সম্প্রতি অনেক আলোচনার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক কাউন্সিল আগামী পহেলা জুলাই থেকে ‘হল না খোলার শর্তে’ সশরীরে চূড়ান্ত পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। তারও আগে ডিনস কমিটির বৈঠকের পরে শিক্ষক সমিতি বলেছিলেন, ‘অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয় কারণ তা বৈষম্য তৈরি করে এবং নানা কারিগরি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বেশ কিছুদিন যাবৎ হল খোলার দাবি তুলে আসছিলেন। কিন্তু এখন ‘হল না খোলার শর্তে’ পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্তে ইতোমধ্যে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। যারা ঢাকার বাইরে থাকেন তাদের জন্য এই স্বল্প সময়ে মেস বা বাসা খুঁজে বের করা অসম্ভব। আবার, কোভিডকালীন সময়ে আত্নীয়-স্বজনও বাসায় মেহমান রাখার ঝুঁকি নিতে চান না। ফলে এই সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন সংকট বয়ে আনবে।

তাছাড়া, টিকা না দিয়ে সশরীরে পরীক্ষার আয়োজন করা হলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর জীবন হুমকির মুখে পড়বে এবং কোভিড সংক্রমণের আশংকা থাকবে। এছাড়া বাড়তি হিসেবে থাকছে ভারত থেকে আসা ভয়ংকর ব্ল্যাক ফাঙ্গাস। তাই সশরীরে পরীক্ষা নেয়া তখনই যৌক্তিক হবে যখন টিকা নিশ্চিত হবে আর টিকা নিশ্চিত করা গেলে হল খুলতে আপত্তি থাকার কথা নয়।

পড়ুন: সশরীরে পরীক্ষা নেবে ঢাবি, শুরু ১৫ জুন

তাই, টিকা নিশ্চিত করে হল খুলে তবেই সশরীরে পরীক্ষা নিশ্চিত করা হোক- এটিই অধিকাংশ শিক্ষার্থীর দাবি। টিকা আসতে দুই-তিন মাস সময় লেগে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে বিকল্প হিসেবে অনলাইনে ‘টেক হোম এক্সাম’ আয়োজন করতে পারেন সম্মানিত শিক্ষকরা।

অনলাইন পরীক্ষার বিকল্প হতে পারে এই টেক হোম এক্সাম (Take Home Exam)। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড, হার্ভার্ড বা যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড, ক্যাম্ব্রিজ কিংবা লন্ডন স্কুল অফ ইকোনোমিকসের মতো বিশ্বের নামকরা বিশ্ববিদ্যালগুলোতে এই পদ্ধতি আগে থেকেই আছে।

টেক হোম এক্সামে শিক্ষার্থীদের কিছু বিশ্লেষণমূলক সমস্যা দেওয়া হয় এবং সেখানে সমস্যার ধরণের উপর ভিত্তি করে সময় নির্ধারণ করা থাকে। সাধারণত, শিক্ষার্থীরা ওপেন বুক পদ্ধতিতে বিভিন্ন বই, জার্নাল, নেট ঘেটে উত্তর তৈরি করে থাকেন। তাদের খাতা জমাদানের জন্য পর্যাপ্ত সময় দেয়া হয় (সাধারণত ৪৮ ঘন্টা বা সমস্যার ধরণ অনুসারে এর চেয়ে বেশি বা কম)।

আমাদের সম্মানিত শিক্ষকেরা যদি এই পদ্ধতি অনুসরণ করে কিছু সৃজনশীল, বিশ্লেষণমূলক প্রশ্ন তৈরি করেন এবং ৪৮ ঘন্টার মতো সময় দিয়ে দেন জমা দেয়ার জন্য, তাহলে সকল সমস্যার সুন্দর সমাধান হয়ে যায়। একদিকে, লাইভ অনলাইন পরীক্ষার বৈষম্য থাকবে না অন্যদিকে, শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকটেরও বিকল্প সমাধান হবে। যেহেতু টিকা পেতে দেরি হতে পারে তাই এই পদ্ধতিতেই পরীক্ষা নিয়ে নেয়া সম্ভব। আর প্রশাসন টিকাগ্রহণ প্রক্রিয়া চলমান রেখে ধীরে ধীরে হল খুলে দিতে পারেন যাতে নতুন বর্ষে উত্তীর্ণ হয়ে শিক্ষার্থীরা নতুন উদ্যমে হলে উঠতে পারে।

Take Home Assessment একটি অত্যন্ত কার্যকরী পদ্ধতি। এতে করে গ্রামে যাদের নেট সমস্যা কিংবা ডিভাইসের সংকট তারাও পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ পাবেন। অন্তত যারা পাহাড়ি অঞ্চলে থাকেন তারা উত্তর লেখা শেষ করে শহরে এসে জমা দিতে পারবেন, গ্রামাঞ্চলে অনেকের নেট সুবিধা নেই তাই দুই-তিন ঘন্টার পরীক্ষায় তারা সময়মতো উত্তরপত্র জমা দিতে পারেন না। অনেকের আবার প্রয়োজনীয় ডিভাইসটুকুও নেই।

এটি এসাইনমেন্ট পদ্ধতি নয় বরং ছাত্র-ছাত্রীরা উত্তরপত্র প্রস্তুত করে ক্যাম স্ক্যানারে ছবি তুলে পিডিএফ করে বর্ধিত সময়ে (৪৮ ঘন্টা) জমা দিতে পারবেন। এক্ষেত্রে সেরকম মানের প্রশ্ন তৈরি করা হবে যাতে শিক্ষার্থীদের চিন্তন দক্ষতা যাচাই হয়। কেস স্টাডি বা নতুন ধরণের প্রব্লেম কোশ্চেন প্রণয়ন করা যেতে পারে যাতে বই বা কোনো সোর্স থেকে হুবুহু লেখা না যায়। এসাইনমেন্ট পদ্ধতিতে খাতা দেখা সম্মানিত শিক্ষকদের জন্য কষ্টকর হয়ে যায়। তাই Take Home Exam হতে পারে একটি সহজ এবং সুন্দর সমাধান যাতে সবাই একই প্রশ্নে পরীক্ষা দেবেন কিন্তু জমা দেয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় পাবেন।

আশা করি, সম্মানিত শিক্ষকমন্ডলী এবং কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বিবেচনা করবেন এবং তাঁদের সিদ্ধান্ত পুনঃবিবেচনা করে শিক্ষার্থীদের সংকটের কথা মাথায় রেখে ‘টিকা নিশ্চিত করে হল খুলে সশরীরে পরীক্ষা’ নেয়ার কথা চিন্তা করবেন অন্যথায় অনলাইনেই ‘টেক হোম এক্সাম’ নেয়ার ব্যবস্থা করবেন।

লেখক: শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়