আমি কেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পক্ষে
মাননীয় সরকারের কাছে আমার বিনীত অনুরোধ, স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্তে অন্তত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হোক। এটা চালু করা কঠিন ব্যাপার নয়। যারা এটা মানবেন না সেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, যে ছাত্র মানবে না, তাকে বের করে দেওয়া হবে।
বৃহত্তর স্বার্থে কঠিন হওয়া ছাড়া উপায় নেই। দরকার হলে রোস্টার করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করা যায় কিনা তা ভেবে দেখা যায়। আজ প্রথম বর্ষের হলো তো কাল অন্য বর্ষ। রবিবার এক ফ্যাকাল্টি , সোমবার আরেকটি।
আমি কেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পক্ষে-
১) দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বাচ্চাদের রুটিন ওলট-পালট হয়ে যাচ্ছে। আবার পুরানো শৃংখলায় ফিরে যেতে তাদের খুব কষ্ট হবে এবং আমরা জানি, 'ডিসিপ্লিন ইজ দ্যা মাদার অব সাকসেস'। এই মাকে আমরা হত্যা করছি না তো?
২) অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা হচ্ছে না। এতে যে সেশন জ্যাম হচ্ছে তার কারণে শিক্ষার্থীরা চাকুরির বয়স হারাচ্ছেন। আবার অনেকে ক্যাম্পাসে থেকে টুকটাক কাজ করে আয় করতেন তা বন্ধ হয়ে গেছে।
৩) কোথাও কোথাও অনলাইন ক্লাশ হচ্ছে, এটা খুব একটা কাজের না। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট সুবিধা না থাকায় অনেকে অনলাইন ক্লাশে যোগ দিতে পারছেন না। আবার যোগ দিতে পারলেও অনেক সমস্যা হচ্ছে। বড়ো বড়ো শহরে নেটের যে স্পিড থাকে, তা গ্রামে থাকে না৷ তাই স্বাভাবিক কারণেই অনলাইন শিক্ষায় সবার সমান সুযোগ থাকছে না। স্লো নেটের কারণে গ্রামে অবস্থানরত মেধাবীরা বঞ্চিত হচ্ছেন।
৪) দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এরা তীব্র হতাশায় ভুগছে, আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে। হতাশাগ্রস্থ তারুণ্য কিন্তু শত সহস্র টাইম বোমার জন্ম দেয়। হতাশার মতো গুণনাশিনী আর কিছু নেই।
৫) করোনার সময় যে পরিমাণ কিশোর/তরুণ মাদক, পর্ন, ধুমপান এবং ভিডিও গেইমে আসক্ত হয়েছেন তা অন্য যেকোনো সময়কে ছাড়িয়ে গেছে বলে আমার ধারণা।
৬) করোনা সহজে যাবে না, এটা অনেকদিন থাকবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। এটাকে মেনে নিয়েই আমাদের চলতে হবে, তাই অসীম সময়ের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা ঠিক হবে না। তা করা হলে জ্ঞানহীন, বিশৃংখল, নির্জীব একটি প্রজন্ম তৈরি হবে।
৭) বাংলাদেশের মেরুদণ্ড মাত্র সোজা হতে শুরু করেছে। এসময়ে এটাকে শক্ত করার জন্য দরকার বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন। শিক্ষাই হচ্ছে একটি দেশের মেরুদণ্ড শক্ত করার সবচে শক্তিশালী ভিটামিন।
আমরা যেন ভুলে না যাই, বঙ্গবন্ধু শুধু সুজলা-সুফলা বাংলাদেশ চাননি, তিনি শিক্ষা সুফলা বাংলাদেশও চেয়েছিলেন।
লেখক: কবি, লেখক ও সমাজ সেবক ও সরকারি কর্মকর্তা