২২ মে ২০২১, ২২:১৯

ভর্তিযুদ্ধ: রাবিতে চান্স মানেই অন্যরকম অনুভূতি!

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়  © ফাইল ছবি

উত্তরবঙ্গের নিলাভূমি মতিহারের সবুজ চত্বরে প্রতিষ্ঠিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স মানেই এক অন্যরকম অনুভূতি। পড়াশোনার পাশাপাশি দিন-রাত হৈ-হুল্লোড়, হাসি-তামাশা ও খুনসুটির মাঝে ৭৫৩ একরের প্রাকৃতিক নৈসর্গ জুড়ে শুধুই ভালো লাগা ও ভালোবাসা।

দেশের স্বায়ত্বশাসিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে শিক্ষা কার্যক্রম, গবেষণা-প্রযুক্তি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ নীলাভূমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। প্রতিবছর দেশের প্রাচীন এই বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে হাজারো ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর এক অন্যরকম চাওয়া। কেননা, প্রতিনিয়ত মুক্ত বিহঙ্গের মতো প্রাণ খুলে বিচরণের স্বপ্ন দেখে থাকে তারা। তাই হাজারো প্রতিযোগীর মাঝে নিজের একটুখানি জায়গা করে নিতে প্রবল আত্মবিশ্বাস ও ব্যতিক্রম প্রস্তুতিই মূখ্য ভূমিকা রাখতে সক্ষম।

শিক্ষার্থীরা প্রাকৃতিক নৈসর্গের নীলাভূমিতে যা পাবে

৭৫৩ একরের এই ক্যাম্পাস জুড়ে শিক্ষার্থীরা বিচরণকালে দেখতে পাবে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্যের হাতছানি। যা বিভিন্ন মৌসুম জুড়ে ফুলে-ফলে-গন্ধে শিক্ষার্থীদের রুক্ষ প্রাণে ছড়ায় কোমল সজীবতা। প্রকৃতির এই নৈসর্গিকতায় শোভা বর্ধন করতে রয়েছে হাজারো শিক্ষার্থীর আবেগ-অনুভূতির তীর্থস্থান প্যারিস রোড। হাসি-তামাশা-খুনসুটির চিরচেনা টুকিটাকি চত্বর ও পরিবহন মার্কেট। প্রেমিক যুগলদের প্রাণের স্পন্দন ইবলিশ চত্বর। উৎসব-অনুষ্ঠানের মুখরিত চিত্র চারুকলা, প্যারিস রোড ও শহীদ মিনার চত্বর।

এছাড়া শিক্ষার্থীদের সংস্কৃতি, বিজ্ঞান ও ক্যারিয়ার সচেতনতায় রয়েছে বিভিন্ন সংগঠন। যেগুলো পড়াশোনা পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের এক্সট্রা কারিকুলামের মাধ্যমে ব্যতিক্রম মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।

যদি গান গাইতে চাও, তবে তোমার জন্য রয়েছে গানের সংগঠন বাংলাদেশ গণশিল্পী সংস্থা, উদীচী, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, অরণী সাংস্কৃতিক সংসদ। নৃত্য-নাটক করতে ভালবাস, তবে মন চাইলেই আসতে পারো অনুশীলন নাট্যদল, সমকাল নাট্যচক্র, রাজশাহী ইউনিভার্সিটি ড্রামা এসোসিয়েশন (রুডা), তীর্থক নাটক, বিশ্ববিদ্যালয় থিয়েটার রাজশাহী, অ্যাসোসিয়েশন ফর কালচার অ্যান্ড এডুকেশন (এস্) এবং বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্টি রাবি সংসদ।

কবিতার আবৃত্তি করতে মন চায়, তবে তোমার প্রতীক্ষায় কবিতার সংগঠন স্বনন ও ঐকতান।
সাহিত্য চর্চায় আগ্রহী, তবে তোমার জন্য রয়েছে সাহিত্য বিষয়ক সংগঠন চিহ্ন ও স্নান এবং চলচ্চিত্র বিষয়ক সংগঠন ম্যাজিক লণ্ঠন ও রাবি ফিল্ম সোসাইটি।

শুধু কি তাই? বিজ্ঞান চর্চায় তোমার জন্য রয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সায়েন্স ক্লাব, বিজ্ঞান আন্দোলন মঞ্চ ও এগ্রিকালচারাল ক্লাব। নিজেকে শ্রেষ্ঠ বিতার্কিকের কাতারে যদি দেখতে চাও, তবে তোমার স্বপ্ন পূরণে রয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং ফোরাম (আরইউডিএফ), গ্রুপ অব লিবারেল ডিবেটরস (গোল্ড বাংলাদেশ), ক্রিডেন্স, রেটোরিক অন্যতম। মুটিংয়ের জন্য রয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় মুট কোর্ট সোসাইটি এবং শিল্পচর্চা জন্য রয়েছে শিল্পযাত্রা, বরেন্দ্র আর্ট সোসাইটি ও জলটল।

লেখালেখি কিংবা সাংবাদিকতা চর্চায় মনোনিবেশ করতে চাও, তবে তোমার জন্য রয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার্স ইউনিটি (রুরু), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (রাবিসাস)। দরিদ্র-অসহায় ও পথশিশুদের জন্য মন কাঁদে! তাদের জন্য কিছু করতে চাও, তবে তোমার পাশে রয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নবজাগরণ ও ইচ্ছে। যারা দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করে।

নিজেকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলার পাশাপাশি ক্যারিয়ার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য রয়েছে রোভার স্কাউট গ্রুপ, রাবি পাঠক ফোরাম, রাবি ক্যারিয়ার ক্লাব, জাতিসংঘ ভিত্তিক সংগঠন আরইউমুনা ও রাবি হায়ার স্টাডি ক্লাব, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি), রোটারি ক্লাব। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্টের কথা চিন্তা করে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্বাবধানে গড়ে উঠেছে রাবি ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সেন্টার।

নাচে-গানে, তর্কে-বিতর্কে, বক্তৃতা-দক্ষতা-গবেষণায় নিজেকে সকলের মাঝে উন্মুক্ত করে তুলে ধরতে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চ, কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনসহ সমগ্র ৭৫৩ একরের বুক। তাছাড়াও বাঙ্গালীর সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত করতে ক্যাম্পাসে রয়েছে সাবাস বাংলাদেশ ভাস্কর্য, স্ফুলিংঙ্গ, শহীদ জোহা চত্বর, বুদ্ধিজীবী চত্বর ও বদ্ধভূমির মতো স্থাপত্যশিল্প। যেগুলো সর্বদা অন্যায়ের বিরুদ্ধে মননে আনবে শক্তি-সাহস ও তেজ।

এখানেই শেষ নয়! বিশ্বিবদ্যালয়ের নীল-সাদা বাসে উঠে জানালার ফাঁক দিয়ে প্রিয়তমার বাড়িয়ে দেয়া হাতে ফুল দেয়া কিংবা বৃষ্টির মাঝে প্রিয়জনের হাত ধরে প্যারিস রোডে হাঁটার মূহুর্তগুলো ফ্রেমবন্দি করে ফোনের হোম স্ক্রিনে সেট করার পাশাপাশি ফেইসবুকে ডে কিংবা পোস্ট দেয়ার সুযোগ তোমাকে হাতছানি দিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের দীর্ঘ এই পথ অতিক্রম কালে যদি হতাশ কিংবা পথ হারিয়ে ফেলতে বসো, তবে স্বার্থহীনভাবে তোমার পাশে দাঁড়াতে প্রস্তুত সহৃদয় শিক্ষক, সিনিয়র ও বন্ধুবান্ধব। এই চলার পথে তারা যেন তোমার সুখ-দুঃখের এক চির সাথী।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার তারিখ পিছিয়েছে আরো দু'মাস। হাতে রয়েছে এখনো অনেক সময়। চির সবুজ প্রাঙ্গন তোমায় হাতছানি দিচ্ছে।

একমাত্র তুমিই পারো সেখানে চান্স নিয়ে তোমার কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন পূরণ করতে। আর সেজন্য তোমার একটি দৃঢ় প্রতিজ্ঞা এবং ব্যতিক্রম প্রস্তুতিই যথেষ্ট। যেটা ৭৫৩ একরের প্রাকৃতিক নৈসর্গ জুড়ে সর্বদা তোমাকে দিবে অন্যরকম এক অনুভূতি। যা আর কোথাও পাওয়া অসম্ভব?

লেখক: শিক্ষার্থী ও সংবাদকর্মী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়