বিসিএসের সোনার হরিণ ধরতে!

লেখক
লেখক  © টিডিসি ফটো

বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে (বিসিএস) বিভিন্ন ক্যাডারের শূন্য পদগুলো পূরণ করা হয় বিসিএস প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইভা পরীক্ষার মাধ্যমে। বিসিএসের সাধারণ ক্যাডার হিসেবে পররাষ্ট্র, প্রশাসন, পুলিশ, কর, শুল্ক, নিরীক্ষা ও হিসাব ইত্যাদিকে গণ্য করা হয় এবং কারিগরি ক্যাডারগুলো মূলত বিশেষায়িত (Specialized) চাকরি। এর মধ্যে প্রকৌশলী, কৃষিবিদ, চিকিৎসক সহ সরকারি কলেজের সব বিষয়ের শিক্ষক অন্তর্ভূক্ত।

বিসিএস সিলেবাসে সবার জন্য ২০০ নম্বরের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা রয়েছে। ৪১তম বিসিএসে আবেদন করেছিলেন ৪ লাখ ৭৫ হাজার জন, যা রেকর্ড। এবং উক্ত প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় করোনা সংকটের মধ্যে প্রায় ৭৫% প্রার্থী অংশগ্রহণ করেছিলেন। সাধারণত ৫ শতাংশের কম টেকেন লিখিত পরীক্ষার জন্য। দুই ঘণ্টার ২০০ নম্বরের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় ২০০টি প্রশ্ন থাকবে। প্রার্থী প্রতিটি শুদ্ধ উত্তরের জন্য ১ নম্বর পাবেন। তবে ভুল উত্তর দিলে প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য প্রাপ্ত মোট নম্বর থেকে শূন্য দশমিক ৫০ (শূন্য দশমিক পাঁচ শূন্য) নম্বর কাটা যাবে।

লিখিত পরীক্ষায় প্রতিটি বিষয়ে পাস মার্ক হচ্ছে — শতকরা ৫০। এক বা একাধিক বিষয়ে ৫০ শতাংশের কম নম্বর পেলেও সব বিষয়ে গড়ে ৫০ শতাংশ নম্বর পেলেই পাস। অর্থাৎ মোট ৯০০ নম্বরের মধ্যে অন্তত ৪৫০ পেতে হবে। তবে কোনো বিষয়ে শতকরা ৩০ ভাগের কম নম্বর পেলে তা মোট নম্বরের সঙ্গে যোগ হবে না। 

লিখিত পরীক্ষায় ৪৫০-৫০০ নম্বর পেয়ে ভাইভা বোর্ড পর্যন্ত গেলেও বিসিএস ক্যাডার পদে সুপারিশ পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। ক্যাডার পদে সুপারিশ পেতে হলে অত্যাবশ্যক  — সুনির্দিষ্ট টার্গেট ও সঠিক পথে কঠোর পরিশ্রম।

লিখিত পরীক্ষায় যত ভালো করতে পারবেন, ক্যাডার পাওয়ার দৌড়ে তত এগিয়ে থাকবেন। অগোছালোভাবে সারা দিন পড়াশোনা করে লিখিত পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়া সম্ভব নয়। জেনে-বুঝে পরিকল্পিতভাবে পড়তে হবে।

বাংলা-২০০ নম্বরের মধ্যে ব্যাকরণভিত্তিক প্রশ্ন, ভাবসম্প্রসারণ, সারাংশ বা সারমর্ম ও সাহিত্য বিষয়ে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন থাকে। বিসিএস পরীক্ষার্থীদের জন্য এই বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাহিত্য, শুদ্ধিকরণসহ ব্যাকরণভিত্তিক প্রশ্নগুলো নির্ভুল উত্তর করতে পারলে এই অংশে ৭৫ থেকে ৯০ নম্বর পাওয়া যায়। বাংলায় বড় রচনা ধরণের লেখাগুলো সঠিক তথ্যবহুল ও উপস্থাপনা সুন্দর হলে ৭০-৭৫ নম্বর পাওয়া যায়। বানান ও বাক্য শুদ্ধ হওয়া আবশ্যক।

ইংরেজিতে কমবেশি সকলেরই দুর্বলতা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে গ্রামার, ট্রান্সলেশন, লেটার রাইটিং অংশগুলো ভালো করতে পারলে প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র মিলে ১১০-১২০ নম্বর পাওয়া যায়।

বাংলাদেশ বিষয়াবলি ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিসহ অন্যান্য বিষয়ে ভালো নম্বর পেতে করণীয় সম্পর্কে নিম্নে আলোকপাত করছি।

ক. বিসিএস প্রস্তুতিতে যা করণীয় —

১) যারা অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ছে, তাদের উচিত নিজ একাডেমিক বিষয়কে অবহেলা না করে ও অপ্রয়োজনীয় কাজে সময় নষ্ট না করে প্রস্তুতি শুরু করা। তবে যারা অন্যান্ন বর্ষে পড়ছে, তাদের অবশ্যই অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হবে। প্রবাদ আছে, ‘সময়ের এক ফোঁড় অসময়ের দশ ফোঁড়”।  প্রথমেই বিসিএসের প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষার সিলেবাসটা খুব ভালো করে পড়ে প্রস্তুতি শুরু করতে হবে।

২) গাইডকে কম গুরুত্ব দিয়ে বিসিএস সিলেবাস সংশ্লিস্ট বেসিক বইগুলো বিভাগের একাডেমিক পড়ার পাশাপাশি পড়াটা গুরুত্বপূর্ণ। যেমন নির্বাচন করে ক্লাস সিক্স টু ক্লাস টেন এর বোর্ডের বই সহ এইচএসসি এর পৌরনীতি এবং  তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বই মনোযোগ সহকারে পড়াটা আবশ্যক।

Note: গত কয়েক বছরের বিসিএস এর প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রশ্নগুলো, আমি জেএসসি এর বাংলা ব্যকরণ, ইংরেজি গ্রামার, গণিত, বিজ্ঞান ও এসএসসি এর বাংলা ব্যকরণ, ইংরেজি গ্রামার, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং এইচএসসি এর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, পৌরনীতি প্রশ্নের সাথে যথেষ্ট মিল খুঁজে পেয়েছি।

৩) কোচিং সেন্টারে বা টিউশনে ইংরেজি, গণিত বা বিজ্ঞান পড়ালে তা বিসিএস প্রস্তুতিতে  নিজেরও কাজে লাগবে এবং একই সাথে বিসিএস ভাইভায় কথা বলার আড়ষ্টতা কাটবে।

৪) স্নাতক অনার্স প্রথম বর্ষে ভর্তির শুরু থেকে বা স্নাতক অনার্স ভর্তির যত শীঘ্র সম্ভব ভালো মানের বাংলা ও ইংরেজি দৈনিক পত্রিকা নিয়মিত মনোযোগ সহকারে পড়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য খাতায় নোট রাখলে বাংলাদেশ বিষয়াবলী ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী প্রস্তুতিতে ভিত (Base) তৈরি করতে সহায়ক হবে। পাশাপাশি বিবিসি বাংলা খবর ও বিবিসির বিশ্লেষণধর্মী আন্তর্জাতিক নিউজ এই প্রস্তুতিতে কাজে লাগবে।

৫) বিসিএস সিলেবাস অনুযায়ী ইংরেজি গ্রামার ও লিটারেচার প্র্যাকটিসের পাশাপাশি ইংরেজি vocabulary (শব্দভাণ্ডার) নিয়মিত বৃদ্ধি করাটা জরুরী। ইংরেজি পত্রিকা থেকে  প্রতিদিন অন্তত ৫টি Words (প্রত্যেকটির Synonyms and Antonyms সহ) মেমোরাইজ করে নোট খাতায় লিখে রাখতে হবে এবং শেখা Words পরে পুনরায় প্র্যাকটিস করতে হবে।

৬ ) বাংলা সাহিত্য ও ইংরেজি লিটারেচারের কবি ও সাহিত্যিকদের পরিচিতি ও বইগুলোর নাম ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংগ্রহ করে নোট খাতায় লিখে বারবার চর্চা করতে হবে।

খ. বিসিএস প্রস্তুতিতে সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বইগুলো—

বিসিএস প্রস্তুতিতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বই আছে। যেমন- ১।  অসমাপ্ত আত্মজীবনী (শেখ মুজিবুর রহমান) ২।  কারাগারের রোজনামচা (শেখ মুজিবুর রহমান)  ৩। লাল নীল দীপাবলি (ড. হুমায়ুন আজাদ) ৪। বিদ্যাকোষ; বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি (ড আবুল কালাম মনজুর মোরশেদ) ৫। Applied English Grammar and Composition (P. C. Das; ভুল এড়ানোর জন্য ভারতের অরিজিন্যাল বইটি বেশী উপকারী) ৬। A Passage to the English Language (S. M. Zakir Hussain) ৭। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস (মুনতাসীর মামুন ও মো. মাহবুবুর রহমান) ৮। বাংলাদেশের ইতিহাস (১৯০৫-১৯৭১) লেখক ড. আবু মো. দেলোয়ার হোসেন ৯। নয়া বিশ্বব্যবস্থা ও সমকালীন আন্তর্জাতিক রাজনীতি (ড. তারেক শামসুর রেহমান ১০।  বিশ্বরাজনীতির ১০০ বছর (ড. তারেক শামসুর রেহমান) ১১। জীবনের বালুকাবেলায় (ফারুক চৌধুরী) ১২। আজব ও জবর-আজব অর্থনীতি (আকবর আলি খান) ইত্যাদি।

গ. বিসিএস প্রস্তুতিতে বাংলাদেশের সংবিধান গুরুত্বপূর্ণ—

বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের সঙ্গে কারা জড়িত ছিল, খসড়া রূপ, উপস্থাপন ও গৃহীত হওয়ার তারিখ,  সংবিধানে কারা স্বাক্ষর করেছেন ও করেন নাই, সংবিধানের কমিটি গঠনের নেপথ্য, অধ্যাদেশ জারি, মহিলা জড়িত ছিলেন কি না, কে হাতে লিখল, অঙ্গসজ্জাকারী কে, অন্য কোন দেশের সংবিধান অনুসরণ করা হয়েছে কিনা ইত্যাদি ভালোভাবে মনে রাখতে হবে। সংবিধানের সাতটি তফসিলের মধ্যে তৃতীয়, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম তফসিল অধিক গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশ সংবিধান এ পর্যন্ত কত বার সংশোধিত হয়েছে তা জানাটা আবশ্যক। এই সংশোধনীর কোনগুলো বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। কিছু বিষয় সংশোধন অযোগ্য কেন।  দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, অষ্টম, দ্বাদশ, ত্রয়োদশ, চতুর্দশ, পঞ্চদশ, ষোড়শ সংশোধনীর সাল ও মূল বিষয়বস্তু ভালো করে মনে রাখবেন।

সংবিধানের ১৫৩ অনুচ্ছেদের মধ্যে নিম্নোক্ত অনুচ্ছেদগুলো বিসিএসের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ —

২ (ক), ৩, ৪, ৪ (ক), ৫, ৬, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ১৭,১৮, ১৮ (ক) ১৯, ২০, ২১, ২২, ২৩, ২৩ (ক), ২৪, ২৫, ২৭, ২৮, ২৯, ৩০, ৩১, ৩২, ৩৩, ৩৪, ৩৫, ৩৬, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১, ৪২, ৪৩, ৪৯, ৫২, ৫৫, ৫৭, ৫৯, ৬০, ৬৪, ৬৫, ৬৬, ৬৭, ৭০, ৭৬, ৭৭, ৮১, ৮৭, ৯১, ৯৩, ৯৪, ১০২, ১০৬, ১০৮, ১১৭, ১১৮, ১২১, ১২২, ১২৩, ১২৭, ১৩৭, ১৩৮, ১৩৯, ১৪০, ১৪১, ১৪১ (ক), ১৪১ (খ), ১৪১ (গ), ১৪২, ১৪৮ ও ১৫৩।

সংবিধানের অধিক প্রচারিত বিষয়গুলো মনে রাখবেন । উদাহরণস্বরূপ ৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ প্রয়োজনীয় কিনা, রাষ্ট্রধর্ম সম্পর্কে আপনার অভিমত ইত্যাদি। কিছুক্ষেত্রে উচ্চ আদালত সংবিধানের বিভিন্ন অনুচ্ছেদ বা সংশোধনী নিয়ে মন্তব্য বা রায় দেন, তা জানা আবশ্যক।

ঘ) বিসিএস ভাইভা প্রস্তুতি—

২৭তম বিসিএস থেকে থেকে সিলেকশন বোর্ডের সামনে  লিখিত পরীক্ষার নম্বর থাকে না। অর্থাৎ, লিখিত পরীক্ষায় কী করেছেন বোর্ড তা দেখেন না। ভাইভাতে আপনাকে মূল্যায়ন করা হবে শুধু ২০০ নম্বরের ওপর। আপনি বোর্ড থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বোর্ডের চেয়ারম্যান সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে নম্বর দিয়ে দেন। এটিই আপনার ভাইভার চুড়ান্ত নম্বর।

বিসিএস ভাইভায় সচরাচর দুই ধরনের উপাদান সম্পর্কিত প্রশ্ন হয়ে থাকে। প্রথমটি হলো সুনির্দিষ্ট উপাদান, যেমন আপনার নাম, পিতামাতার নাম, পেশা, একাডেমিক রেজাল্ট ইত্যাদি। উদাহরণস্বরূপ, আপনার নাম যদি হয় ‘শামসুর রহমান’, তবে  বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি শামসুর রাহমান সম্পর্কে জানতে চাইতে পারে।

দ্বিতীয়টি হলো অনির্দিষ্ট উপাদান, যেগুলো আপনি একটি ভালো প্রস্তুতি নিয়ে ভালো নম্বর পেতে পারেন। যেমন আপনার একাডেমিক জ্ঞান, নিজ জেলার তথ্য, কমনসেন্স, সাধারণ জ্ঞান, অধ্যয়নের মাধ্যমে আপনার অর্জিত বুদ্ধিমত্তা ইত্যাদি। যেহেতু এই অংশের পরিধি অনেক বড়, ভালো করতে অনেক কিছু পড়তে হয়। In fact, ভাইভায় কোন ধরনের প্রশ্ন হবে, তার নির্দিষ্ট কোনো সিলেবাস নেই। এটি সম্পূর্ণরূপে সিলেকশন বোর্ডের ওপর নির্ভর করে। তবে যারা খুব ভালো প্রস্তুতি নেয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁরা সফল হয়।

বিসিএস ভাইভা প্রস্তুতিতে যা গুরুত্বপূর্ণ—

১) ভাইভায় সাধারণত পাঁচটি বিষয়ের ওপর প্রশ্ন করার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। যথা ক) নিজ জেলা, খ) নিজ পঠিত বিষয়, গ) মুক্তিযুদ্ধ  ঘ) সংবিধান, ঙ) সাম্প্রতিক বিষয়াবলি। এই বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে পড়বেন।

২) যদিও সিলেকশন বোর্ড কিছু প্রশ্ন বাংলায় করতে পারে, তবে অধিকাংশ প্রশ্ন ইংরেজিতে করার সম্ভাবনাই বেশি। ইংরেজি বলার জন্য এখন থেকেই অনুশীলন করতে হবে। ইংরেজি vocabulary (শব্দভাণ্ডার) নিয়মিত বৃদ্ধি করাটা জরুরী। ইংরেজি পত্রিকা থেকে প্রতিদিন অন্তত ৫টি Words (প্রত্যেকটির Synonyms and Antonyms সহ) মেমোরাইজ করে নোট খাতায় লিখে রাখতে হবে এবং শেখা Words পরে পুনরায় প্র্যাকটিস করতে হবে। ভুল হলেও ক্যারিয়ার সচেতন বন্ধুদের সঙ্গে ইংরেজিতে কথা বলার  চর্চা করতে হবে। যে কোন পেশায় প্রবেশে ও সফল হতে ইংরেজিতে দক্ষতা অপরিহার্য।

৩) ১০০% প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়। তবে সাধারণ বিষয়াবলী অর্থাৎ যা জানা উচিৎ, তা না পারলে ভাইভা বোর্ডে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। উত্তর জানা না থাকলে বিনীতভাবে সরি বা দুঃখিত বলবেন। নার্ভাস হয়ে চুপ করে থাকবেন না ও ভুল উত্তর দিবেন না।

৪) কিছু কমন প্রশ্ন নিজের মতো করে মনে ইংরেজিতে সাজিয়ে নেবেন। উদাহরণস্বরূপ, নিজ details পরিচয়, পরিবার, এলাকা/শহর, জেলা, বিসিএস দেওয়ার উদ্দ্যেশ্য, ১ম ও ২য় ক্যাডার পছন্দের কারণ, নিজ পঠিত বিষয় ও ১ম/২য় পছন্দের সম্পর্ক, বর্তমান অবস্থা বা পেশা, স্মৃতিবহুল ঘটনা, শখ (হবি) , শৈশব-কৈশোর,কলেজ/ বিশ্ববিদ্যালয় জীবন ইত্যাদি। আপনি যে সাবজেক্টে অনার্স ও মাস্টার্স করছেন, তার সঙ্গে আপনার পছন্দের ক্যাডারের কোনো সম্পর্ক আছে কি না বা কীভাবে আপনার একাডেমিক জ্ঞান পেশাগত কাজে লাগাবেন, তার একটা উত্তর সাজিয়ে নেবেন। ভাইভা বোর্ডে এগুলো বলার সময় মুখস্থের মত বলবেন না।

৫) নিজ জেলা সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে। যেমন, জেলার নামকরণের কারণ, আয়তন, প্রতিষ্ঠার তারিখ সহ সাল, উপজেলা ও থানার সংখ্যা, খ্যাতিমান ব্যক্তির জীবনবৃত্তান্ত, প্রধান কৃষিপণ্য, শিল্পকারখানা (যদি থাকে), নামকরা নদ-নদী ইত্যাদি।

৬) ব্রিটিশ শাসনের শেষ পর্যায়, ভাষা আন্দোলন,  ছয় দফা, এগার দফা, বঙ্গবন্ধ,  মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সম্পর্কে একটা স্বচ্ছ ধারণা থাকা অবশ্যই প্রয়োজন।

৭) সর্বশেষ বাজেট  সম্পর্কে একটা ধারণা রাখতে হবে; যেমন, মোট বাজেটের আকার, কোন খাতে কত বরাদ্দ, কত ঘাটতি, দেশের কততম বাজেট ইত্যাদি। অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০২০ বা সর্বশেষ অর্থনৈতিক সমীক্ষা থেকে বাছাই করে বেশ কিছু তথ্য জেনে নেবেন। জিডিপিতে বিভিন্ন খাতের অবদান সহ  বিদ্যুৎ, গ্যাস, পরিবেশ, অবকাঠামোগত তথ্যাবলী ইত্যাদি।

৮ ) বাংলাদেশ সংবিধান সম্পর্কে এ লেখায় পূর্বে আলোচিত বিষয়গুলো বিসিএস ভাইভায় বেশি জিজ্ঞাসা করা হয়।

৯) ফরমাল রুচিশীল পোশাক পরে ভাইভা বোর্ডে যাবেন। পুরুষ প্রার্থীদের ক্ষেত্রে চুল আদর্শ মান পর্যন্ত ছেঁটে রাখা উচিত। মেয়েদের ক্ষেত্রেও আদর্শ মান বজায় রাখা উচিত। সকলের জন্য পরিচ্ছন্নতা খুব গুরুত্বপূর্ণ। 

১০) ভাইভা কক্ষে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় যথেষ্ট সচেতন থাকবেন। সাধারণ ভদ্রতাগুলো মেনে চলবেন। যেমন, অনুমতি নেওয়া, সালাম দেওয়া, বিনয়ী থাকা, ইত্যাদি। তবে অতিবিনয়ী হয়ে কাঁচুমাচু করবেন না। কক্ষে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় সালাম সকলকে দেবেন না। শুধুমাত্র বোর্ডের সভাপতিকে লক্ষ্য করে একবার দেবেন। গলার স্বর অধিক উচ্চ বা অধিক নিম্ন না করে স্টান্ডার্ড মান বজায় রেখে প্রশ্নের উত্তর দিবেন। মাথা প্রয়োজন অনুযায়ী মুভ করে প্রশ্নের উত্তর দিবেন। কথোপকথনের সময় হাত নাড়াবেন না এবং পা ঝাঁকাবেন না। চেয়ারে হেলান দিয়ে আরাম করে বসতে যাবেন না ও  লেখা ছাড়া টেবিলে হাত হেলান দিয়ে বসবেন না।

বিঃদ্রঃ ভাইভায় ফেল বা কম নম্বর পাওয়ার মুখ্য কারণগুলো হলো— বেয়াদবি করা, নার্ভাস থাকা, অস্বাভাবিক আচরণ করা, বেশি জানার ভাব করা, উচ্চারণে আঞ্চলিকতা থাকা, ব্যর্থতা স্বীকার না করে একগুয়ে থাকা, না পারলেও উত্তর দেওয়া, সঠিক উত্তর কম দেওয়া ইত্যাদি।

লেখক: অধ্যাপক, ক্রপ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি বিভাগ ও সাবেক প্রাধ্যক্ষ, মতিহার হল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ