দল পরিবর্তনে রেকর্ডধারী গয়া লালদের মতাদর্শটা কি ?
- সাকিব এ চৌধুরী
- প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২০২১, ০৯:১৯ AM , আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০২১, ০৯:১৯ AM
মানুষটি বিশ্বের যেই প্রান্তের মানুষই হোক না কেন তার নিজস্ব একটা রাজনৈতিক চিন্তা ও মতাদর্শ রয়েছে। যে কোনো ব্যক্তির প্রচেষ্ঠা থাকে তার মতাদর্শটাকে প্রতিষ্ঠিত করতে। দার্শনিক অ্যারিস্টটলও বলেছেন, `মানুষ প্রকৃতিগত ভাবেই রাজনীতি প্রিয় প্রাণী’। আর এজন্য কেউ কেউ সারা জীবন নিজেকে বিলিয়ে দেয় কেউবা জীবন দিতেও দ্বিধা বোধ করে না। আর এসব করতে না পারলে অন্তত নিরবে প্রার্থনা করে হলেও নিজের বিশ্বাসের মতাদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় একজন মানুষ ।
আর তা যদি হয় আমাদের এই অঞ্চলে তাহলে তো কোনো কথাই নেই। সকল শ্রেণী পেশার মানুষ রাজনৈতিক সচেতন ও রাজনীতি যেখানেই হোক চর্চা প্রিয় সেটা হোক চায়ের কাপে কিংবা অফিসের টেবিলে। বিশাল একটা অংশ আমাদের বাংলাদেশে সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িত। তাই অন্য অনেক দেশের থেকে এদেশে রাজনীতি চর্চাও বেশী। একবারে মফস্বল পর্যন্ত রমরমা রাজনীতি চর্চা বেশ লক্ষণীয় ।
এদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি নিয়েও রয়েছে নানান কথা। নীতি নৈতিকতা দিয়ে বুঝে-শুনে-পড়ে বিচার বিশ্লেষণ করে নিজের রাজনৈতিক মতাদর্শকে ক’জন ঠিক করছে সেটা নিয়েও তোলা যায় প্রশ্ন। সিংহভাগ রাজনৈতিক দলেরই নেই তাদের মতাদর্শ কি এবং কেন সেটা নেতা কর্মীদের বোঝানোর কর্মসূচী। ফলে কর্মীর সংখ্যা বাড়লেও সেই অর্থে বাড়ছে না দলগুলোর গুণগত কর্মীসংখ্যা। যেভাবে হোক একত্রিত হচ্ছে নানান মতের ও আদর্শের নানান গোষ্ঠী।
কিন্তু একজন মানুষ যেই রাজনৈতিক দলকে মনে প্রাণে বিশ্বাস ও ধারণ করছে সেই দলের একজন কর্মী হিসেবে কি তার জানার আগ্রহ কখনই জাগে না তার এই মতাদর্শ তার জন্য সঠিক না বেঠিক? খুব কম সংখ্যক মানুষ দেখা মিলবে যে তার রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে ভাল জ্ঞান রাখেন ।
রাজনৈতিক মতাদর্শ কি এমনই বিষয় যেটা না বুঝে ও না জেনেই চর্চা করা যায়? অধিকাংশের মতামত হবে মানসম্মত রাজনীতি চর্চা মোটেও এরকমটা নয়। এর নিশ্চয়ই একটা ভিত্তি ও লক্ষ্য আছে। কিন্তু শুনতে খারাপ লাগলেও বাস্তবতা হচ্ছে আমাদের দেশের সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মীরা তাদের নিজ দলের আদর্শ দিয়ে রয়েছে একেবারেই অন্ধকারে।
অনেকে এক্ষেত্রে বলার চেষ্ঠা করবে যেখানে রাজনৈতিক দলের একটা বড় অংশের কর্তা ব্যক্তিদের নীতি নৈতিকতা নিয়েই প্রশ্ন আছে সেখানে আদর্শের চর্চা কোথায় থেকে পাবেন। কিন্তু একজন রাজনৈতিক কর্মীর যদি তার মতাদর্শ নিয়ে ভালো জ্ঞান থাকে তাহলে কিন্তু তার পক্ষে অসৎ হওয়া সম্ভবনা কমই। কারণ, কোনো দলেরই তো আদর্শ অসৎ নয়। মানুষ ও রাষ্ট্রের কল্যাণ সাধনাই তো রাজনৈতিক দলগুলোর মূল লক্ষ্য। দলের নেতৃত্ব যদি তাদের নেতা কর্মীদের নার্সিং করে নিয়মিত তাহলে অসৎ হওয়ার মানসিকতা নিশ্চয়ই দূর করা সম্ভব।
গবেষণা থেকে জানা যায়, বেশীরভাগ মানুষ রাজনৈতিক মতাদর্শ পরিবার থেকে উত্তারাধিকার সূত্রে পেয়ে থাকে। যদিও এর ব্যাতিক্রম চিত্রেরও দেখা মিলে আশেপাশে অসংখ্য। কিন্তু মতাদর্শ কি এতই হালকা বিষয় যে এটা যখন তখন সহজেই পরিবর্তন করা যায়? নিশ্চয়ই না। এটার অবশ্যই একটা ভিত্তি আছে কিন্তু আমাদের দেশে যারা বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক দল করছেন তারা কি রাতারাতি মতাদর্শ পরিবর্তন করতে পেরেছেন?
নির্বাচনের আগ মুহূর্তে দেখা যায় অনেকেই একটি বিশেষ স্বার্থ নিয়ে দল পরিবর্তন করছেন। আবার এই ব্যক্তির সামাজিক ও রাজনৈতিক একটা অবস্থান থাকার কারণে তাকে গ্রহণও করছে দলগুলো এবং তাৎক্ষণিকভাবে মূল্যায়িতও হচ্ছেন নানান উপায়ে। আবার কেউবা ব্যক্তি স্বার্থে আঘাত লাগায় দীর্ঘ দিনের দল থেকে বেড়িয়ে এসে অন্য মতাদর্শের দলের সাথেও যোগ দিয়ে রাজনীতির ময়দানে কাজ করছে। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনকে কেন্দ্র করেও দল পরিবর্তনের ধুম পড়েছে। এদিকে সম্প্রতি গত মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) যশোরের চৌগাছা উপজেলার স্বরুপদাহ ইউনিয়ন বিএনপির পাঁচ নেতা জামায়াতে ইসলামে যোগ দিয়েছেন। আর দেশের ইতিহাসে চরম বিপরীতমুখী দল ও ব্যক্তি হয়েও নিজেদের প্রয়োজনে এক টেবিলে বসে রাজনীতি কারা কিভাবে করছে তা তো সকলেরই জানা।
কিন্তু কথা হচ্ছে, তারা সময়ের ব্যবধানে রাজনৈতিক দল পরিবর্তন করলেও সহজেই কি তাদের রাজনৈতিক মতাদর্শ পরিবর্তন করতে পারছে ?
ধারণ করা মতাদর্শ বুঝতে ও জানতে গিয়ে নতুন ধারণা জন্মায় দল পরিবর্তন করে নতুন মতাদর্শের প্রতি আগ্রহী হওয়ার মতো মানুষ খুব সম্ভব কমই রয়েছে এই জনপদে। হয়তোবা অনেকেই স্বার্থের জন্য দল পরিবর্তন করেও একটা সময় মিশতে মিশতে সেই দলের মতাদর্শের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন।
কিন্তু ১৯৬৭ সালে ভারতের হরিয়ানা রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে গয়া লালের মতো ১৫ দিনে ৩ বার দল পরিবর্তন কংগ্রেস থেকে জনতা পার্টি, ফের কংগ্রেস আবার ৯ ঘন্টার মধ্যে আবারও জনতা পার্টিতে ফিরে আসার মতো করে যারা দল পরিবর্তন করে তাদের আসলে মতাদর্শটা কি ?