বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ‘প্রভাবক শক্তি’ হেফাজত

  © টিডিসি ফটো

কেবল বাংলাদেশের রাজনীতি নয় বিশ্বের প্রায় সব দেশেই বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের নড়বড়ে গণতন্ত্রের দেশে ধর্ম ও জাতীয়তাবাদ রাজনীতির মাঠে প্রভাবকে ভূমিকা পালন করে থাকে। বাংলাদেশের রাজনীতিতেও ধর্ম ও জাতীয়তাবাদ দুটি বড় প্রভাবক। বাংলাদেশের রাজনীতিতে দুই প্রভাবক- ধর্ম ও জাতীয়তাবাদের প্রতিযোগিতায় জাতীয়তাবাদের জয়ের ফলে স্বাধীনতা লাভ সম্ভব হয়েছিল। এই জয়ের মানে এই নয় যে ধর্ম জাতীয়তাবাদের কাছে হেরে গেছে। এখানে বলা উদ্দেশ্য হচ্ছে পাকিস্তান আমলে ধর্মীয় যে রাজনীতি ছিল সেটার পরাজয় হয়েছে। ধর্ম ও ধর্মীয় রাজনীতি দুটা আলাদা বিষয় ধরেই আলোচনা করা হচ্ছে। স্বাধীনতার পর ধর্মকে রাজনীতি থেকে আলাদা করার চেষ্টা করা হয় কিন্তু সেই চেষ্টা সফল হয়নি। ধর্ম রাজনীতিতে আবারও ফিরে এসেছে। এই ফিরে আসা অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় বেশ শক্তিমত্তাসহ হয়েছে। যার ফলে ধর্ম বর্তমানে রাজনীতিতে প্রভাবক হিসেবে ভূমিকা রাখছে কি না বা বৃহৎ কোন ধর্মীয় শক্তি রাজনীতিতে প্রভাবক হয়ে উঠছে কি না সেই আলোচনা করতে হচ্ছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক হিসাবটাই এমন হতো না যদি ধর্ম এবং রাজনীতির পৃথকীকরণ সফল হতো। যদি না শাকসগোষ্ঠী অবৈধ পথে ক্ষমতারোহন করতো এবং সেই ক্ষমতাকে বৈধতা দানের জন্য ধর্মকে ব্যবহার না করতো।
 
বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রভাবক দুই ধরণের ধর্মীয় শক্তি রয়েছে। একটি হচ্ছে, রাজনৈতিক ধর্মীয় শক্তি অন্যটি হচ্ছে, অরাজনৈতিক শক্তি। হেফাজতে ইসলাম কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়। তথাপি এই সংগঠনটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে বড় ‘ফ্যাক্টর’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। হেফাজতে ইসলাম কোন প্রেক্ষিতে সেই শক্তি পেয়েছে এই আলোচনার মাধ্যমেই দেখতে হবে সে রাজনীতিতে কতটা ‘ফ্যাক্টর’ হিসেবে নিজের অস্তিত্ব প্রকাশ করতে পেরেছে। গোটা বিশ্বেই প্রগতিশীল উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক রাজনীতি ও রাজনৈতিক দলগুলো যখন নানা মুখী সংকটে পরেছে এবং জাতীয় ও নাগরিক সমস্যা সমাধানে উপযুক্ত ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে তখন রক্ষণশীল, উগ্রজাতীয়তাবাদী, ডানপন্থী ও ধর্মী রাজনৈতিক দলগুলো তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড জোরদার করতে পেরেছে এবং ‘জন-ম্যান্ডেট’ আদায় করে নিতে সফল হয়েছে। এর ফলে রাজনীতিতে তাদের অবস্থান ক্রমশ পোক্ত হয়েছে। সেই হিসেবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ধর্মীয় শক্তির দৃঢ় অবস্থান ও অধুনা হেফাজতে ইসলামের বাড়বাড়ন্ত প্রভাবের পিছনে মূল দায়ী হচ্ছে জাতীয়তাবাদী, উদার গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক শক্তি সমূহের ব্যর্থতা। এই ব্যর্থতার দায় কোনো একপেষে দায় নয়। বাংলাদেশে ধর্মীয় রাজনীতির পোক্ত অবস্থানের অন্য আরেকটি কারণ হলো স্বাধীনতার পর দেশে দেশপ্রেমিক বুর্জোয়া শ্রেণির সৃষ্টি হয়নি। যা হয়েছে সেটা হচ্ছে লুটেরা চরিত্রের। এরও কারণ আছে। সেটা হচ্ছে বাংলাদেমে উদার গণতান্ত্রিক ধারাটিই বিকশতি হয়নি। বিকশিত হওয়ার জন্য যে ধরণের শিক্ষা-সংস্কৃতিগত পরিবেশ দরকার সেটাও তৈরি করা সম্ভব হয়নি। যার ফলে জনগণের সামনে সেকুলার রাজনীতির যে প্রকৃত চিত্র সেটা ফুটে উঠেনি। বরং তারা সেকুলার, গণতান্ত্রিক নানাবিধ মতবাদের শাসনের নামে শোষণের শিকার হয়েছে। ফলে ধর্মীয় রাজনৈতিক ধারাটি ‘সৎ লোকের শাসনের’ বুলি তুলে খুব সহজেই তাদের দল ভারী করতে পেরেছে। এই সুযোগটাই নিয়েছে হেফাজতে ইসলাম।
 
বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদ নিয়ে জাতীয় ঐক্য এখনও হয়নি। যার ফলে দুই দলের মধ্যে অবিশ্বাসের পাহাড়া ভেদ করা সম্ভব হয়নি। গণতন্ত্রের ধারণায় যারা বিরোধী দলে থাকে তারা রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে থাকলেও দেশ পরিচালনায় নিজেদের রাজনৈতিক ব্যবস্থা থেকে বিযুক্ত মনে করে না। কিন্তু বাংলাদেশে রাষ্ট্র ক্ষমতা থাকার মানেই হচ্ছে রাষ্ট্র পরিচালনার রাজনীতিতে নিজেদের বিযুক্ত মনে করে। এক জাতীয়তাবাদী দল যখন ক্ষমতায় তখন অন্য জাতীয়তাবাদী দল যে কোনভাবেই হোক রাষ্ট্র পরিচালনায় ক্ষমতাসীনদের অসহযোগিতা করবে, ক্ষমতা চ্যুত করাই মূল এজেন্ডা হয়ে দাঁড়ায়। অন্যদিকে ক্ষমতাসীনরা বিরোধী দলকে যতটা সম্ভব রাষ্ট্র পরিচালনার কাজ থেকে বিযুক্ত রাখতে চেষ্টার ত্রুটি করে না। ফলে গণতান্ত্রিক রাজনীতির যে সৌন্দর্য সেটা বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রকাশিত হয়নি। যার ফলে মানুষ গণতান্ত্রিক রাজনীতি বলতে যে ‘হীন রাজনীতির প্রচলন’ রয়েছে সেটাকেই বুঝেছে এবং মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে। এই সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছে ধর্মীয় দলগুলো। হেফাজত সৃষ্টির পিছনেও এর রয়েছে বড় ভূমিকা।
 
অন্যদিকে ‘সেকুলার’ শব্দটি নিয়ে আমাদের দেশ চরম নৈরাজ্য দশা সৃষ্টি হয়েছে। সেকুলার মানে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ এই পরিভাষা চালু হওয়ার ফলে সাধারণ মানুষের কাছে সেকুলার মতবাদটি নিয়ে দারুণ বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। আসলে রাষ্ট্র সেকুলার মানে ধর্মনিরপেক্ষ হয় না কি ‘ধর্ম সহিষ্ণু’ হয়? এ নিয়েও যথেষ্ট বিতর্কের সুযোগ রয়েছে।  এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ডানপন্থী দলগুলো সেকুলারইজম’কে নাস্তিক্যবাদ বলে প্রচার করেছে। ফলে সাধারণ মানুষ এখন সেকুলার শব্দের প্রতি এক ধরণের অনিহাবোধ নিয়ে তাকায়। এই সুযোগ পুরোটাই কাজে লাগাতে পেরেছে হেফাজতে ইসলাম। এবং তারা সেটাকে কাজে লাগিয়েই ২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকায় নিজেদের অবস্থান জানান দিয়েছে। ৫ মে হেফাজতে ইসলাম যে আন্দোলন করেছে সেটাকে কেবল একটি ধর্মীয় গোষ্ঠীর আন্দোলন বলে মূল্যায়ন করলে সেটা ভুল হবে। হেফাজতের সেই আন্দোলন ছিল শহুরে শিক্ষিত প্রগতিশীল মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর বিপরীতে গ্রামের নব্যসৃষ্ট মধ্যবিত্ত শ্রেণির কাউন্টার। এই মূল্যায়নটা এখনও খুবই প্রাসঙ্গিক ও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। হেফাজতের সেই উত্থানকে অবশ্যই দ্বান্দ্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে মূল্যায়ন করতে হবে। কেবল একপেষে মূল্যায়নে ভ্রান্তির সৃষ্টি হবে। হেফাজতে ইসলাম যে মতাদর্শগত দিক থেকে কাউন্টার হিসেবে দাঁড়িয়েছে সেটা মূলত ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার। সেই ব্যবহার এখনও অব্যাহত রয়েছে। বরং ক্রমে অধিকতর শক্তি সঞ্চয় করে আগের তুলনায় অনেক বেশি পোক্ত হয়েছে। সেই প্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠে যে হেফাজত কী রাজনীতিতে ‘প্রভাবক’ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করে করতে পেরেছে বা পারবে?
 
বাংলাদেশে ভোটের রাজনীতিতে ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলো প্রভাবকের ভূমিকা পালন করতে পারে কি না সেটা নিয়ে বির্তক থাকতে পারে তবে স্বাধীনতাত্তোর নির্বাচনী দৃষ্টান্ত সাক্ষ্য দেয় যে, ধর্মী নেতাদের সমাজের উপর নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাব থাকলেও তারা ভোটের রাজনীতিতে কখনই সুবিধা করে উঠতে পারেনি। বাংলাদেশে ভোটের রাজনীতিতে জামায়াতের ভোট ৮ শতাংশ বা তার কিছু বেশি। তার মানে এই নয় যে তারা এই ৮ শতাংশ ভোট সব সময়ই পায় বা পাবে। বরং আমরা দেখেছি ২০০৮ সালের নির্বাচনে জামায়াত কোনো আসন পায়নি। জামায়াত নেতাদের নানাভাবে সমাজের উপর প্রভাব থাকলেও তারা ভোটের রাজনীতিতে সেই প্রভাবকে বেশি কাজে লাগাতে পারে না। অন্যদিকে হেফাজতে ইসলাম কোনো রাজনৈতিক দল নয়। রাজনৈতিক দল না হলেও ২০১৩ সালের পর থেকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তারা নীতি নির্ধারণী ভূমিকা পালন করছে। কীভাবে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের রাজনীতিতে নীতি নির্ধারণী ভূমিকায় অবতীর্ণ হলো সেটা? নীতি আদর্শ হীনতার রাজনীতি হেফাজতকে সেই ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি করে দিয়েছে। হেফাজতে বিশাল ভোট ব্যাংক রয়েছে আর এই ভোট ব্যাংখ খুব সহজেই রাজনৈতিক সমীকরণ পাল্টে দিতে পারবে- এই চিন্তা বাংলাদেশের প্রধান দুই দলের মধ্যে সব সময়ই কাজ করেছে- আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। যা তাদের নানাবিধ কার্যক্রম থেকেই প্রমাণিত। ২০১৩ সালে হেফাজতের উত্থানকে স্বাগত জানিয়েছিল বিএনপি এবং তাদেরকে ঢাকায় সমাবেশ করতে নানা ধরনের সহযোগিতাও করেছিল। কিন্তু হেফাজত বিএনপির সখ্যতা গড়ে উঠেনি। সখ্যতা হয়েছে হেফাজত-আওয়ামী লীগের। ক্ষমতাসীন দলের সাথে সখ্যতা ও সেটাকে কাজে লাগিয়ে নানাবিধ সুবিধা ভাগিয়ে নেয়ার মতো পরিস্থিতি ও শক্তি অর্জন করেই বর্তমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রভাবকের স্থান দখল করতে পেরেছে।
 
সখ্যতার পর থেকে হেফাজতে ইসলাম চাইনি বা তারা নাখোশ হয় এমন কাজ করা থেকে সরকার পারত পক্ষে বিরত থেকেছে। সেটা স্বাধীনতার মৌল চেতনাকে পায়ে মাড়িয়ে হলেও। যার অন্যতম দৃষ্টান্ত দেখি হেফাজতের প্রতিবাদের মুখে সরকার সেকুলার ধারার পাঠ্য পুস্তক থেকে প্রগতিশীল লেখকদের লেখা বাদ দিয়েছে। কওমী মাদ্রাসার সনদের যেনতেন স্বীকৃতি, সুপ্রিম কোর্ট চত্বর থেকে ন্যায় বিচারের প্রতীক লেডি জাস্টিসের ভাস্কর্য অপসারণসহ ইত্যাদি কাজগুলোও করা হয়েছে হেফাজতের খুশির জন্য। হেফাজত সরাসরি তার আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করাতে পেরেছে। সম্প্রতি আমরা দেখলাম রাজধানীর ধোলাই খাল পাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন নিয়ে হেফাজত ও অন্যান্য ইসলামপন্থী দলগুলোর বিরোধিতার মুখে সরকার সেখানে ভাস্কর্য নির্মাণ থেকে সরে এসেছে। (বার্তাবাজার.কম, ৪ এপ্রিল, ২০২১) এই যে নমনীয়তা প্রদর্শন এ থেকে স্পষ্ট হয় যে বাংলাদেশের রাজনীতিতে হেফাজতের ভূমিকা স্পষ্ট হয়েছে এবং তারা প্রভাবকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।
 
তাদের প্রভাবকের ভূমিকার সীমা কতটা সে নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তারা কী কাউকে ক্ষমতায় রাখা কিম্বা না রাখার ক্ষেত্রে সরাসরি ভূমিকা পালন করছে? এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। তবে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে দৃশ্যত সরকার ও হেফাজতের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়ন দেখা গেলেও তাদের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে নানা ইস্যুতে আলোচনা হচ্ছে। যার প্রমাণ হচ্ছে ধোলাইখাল পাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ বন্ধ করে দেয়া। এর মাধ্যমে ক্ষমতাসীন দল এটা স্পষ্ট করেছে যে ক্ষমতার পথটা নির্বিঘ্ন রাখতে হলে হেফাজতকে হাতে রেখে দেশ চালাতে হবে। এটাকে সারাদেশের মানুষের মনোভাব হিসেবে ধরার অবকাশ নেই। আওয়ামী লীগের মধ্যে এই ধরণের মানসিকতার দুটি কারণ রয়েছে। এক হচ্ছে, তারা পরপর দুটি নির্বাচনের জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে দেয়নি এবং বিনাভোটে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আছে। যার ফলে আওয়ামী লীগ এখন অনেকটাই জন-বিচ্ছিন্ন দলে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে হেফাজতের ইসলামের রয়েছে বিশাল কর্মী বাহিনী। এরাও সরকারের প্রতি নানা কারণে ক্ষুব্ধ। যার ফলে হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের হাতে রাখার মাধ্যমে এই কর্মী বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণে রাখাটাও জরুরী। কারণ এই বিশাল কর্মী বাহিনীর রয়েছে পরিবার। তারা খুব সহজেই আওয়ামী বিরোধী প্রভাবে প্রভাবিত হবে পারে। ফলে হেফাজত ও আওয়ামী লীগের মধ্যে অলিখিত ঐক্য এখন সবার জানা।
 
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের ক্ষমতার তিন মেয়াদে বাংলাদেশে অতীতের যে কোন সময়ের তুলনা বেশি ইসলামাইজেশন হয়েছে। যা মূলত হেফাজতসহ অন্যান্য ইসলামপন্থী দলগুলোর খুশির বড় কারণ। যার ফলে হেফাজতে ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী প্রকাশ্যেই ঘোষণা দিয়েছেন যে, ‘আমরা চাই আমাদের সরকার আরও ১’শ বছর ক্ষমতায় থাকুক।’ (দৈনিক দেশ রূপান্ত, ২ নভেম্বর, ২০২০)  তিনি অন্য আরেক ভাষণে স্পষ্টই বলেছেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমরা আপনার শত্রু নই। আমরা আপনাকে সবসময় সৎ পরামর্শ দিই এবং নসিহত করি।’ (দৈনিক যুগান্তর, ২ এপ্রিল, ২০২১) এসব বক্তব্য থেকে হেফাজত ও আওয়ামী লীগের মৈত্রীর বিষয়টি বুঝতে কষ্ট হওয়া কথা না। আওয়ামী লীগ হেফাজতকে ব্যবহার করে যে রাজনীতিটা করছে সেটা খুবই বিপজ্জনক। একদিকে তারা হেফাজতকে এটা বুঝাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে বামপন্থীদের প্রভাব বেড়ে যাবে এর ফলে ক্ষতি হবে হেফাজতের তথা এই দেশের ধর্মের ক্ষতি করবে। এটা স্রেফ মিথ্যা প্রোপাগাণ্ডা। এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ প্রগতিশীল বাম ধারার রাজনীতিকে ধর্মীর রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক দলগুলোর মুখোমুখী অবস্থানে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। আর বাংলাদেশে একবার কেউ ইসলাম বিরোধী কিম্বা মুসলিম বিরোধী ট্যাগ খুব ভয়াবহ নৈতিবাচক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ প্রগতিশীল উদারপন্থী মহলকে এটা বুঝাচ্ছে যে, দেশে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে এই মূহুর্তে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হলে হেফাজতের সহায়তায় বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসবে। এবং দেশকে পাকিস্তান বানিয়ে ফেলবে। যে প্রচারণা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী দেশে-বিদেশে হামেশাই করছেন (দ্রষ্টব্য : আনন্দবাজার ২৬ মে, ২০১৮)। আওয়ামী লীগ হেফাজতকে ব্যবহার করে দুই মুখো এই রাজনীতি করছে।
 
এই রাজনীতি ফলটা কী হয়েছে? এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা থেকে শুরু করে থানায় হামলা, আগুন ধরিয়ে দেয়ার মতো ঘটনা হরহামেশাই ঘটাচ্ছে। তাদের সেই শক্তি অর্জন সম্ভব হয়েছে ক্ষমতার ছত্রছায়ায় থেকেই। হেফাজত তার কাজের মধ্যেমে এটা স্পষ্ট প্রমাণ করেছে যে, তারা বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন গুরুত্বপূর্ণ ‘ফ্যাক্টর’। তারা ক্ষমতাকে প্রভাবিত করার সামর্থ রাখে। তথা রাজনীতিতে তারা নতুন ‘প্রভাবক শক্তি’।
 
লেখক: সাংবাদিক ও কলাম লেখক
ই-মেইল : sadikiu099@gmail.com


সর্বশেষ সংবাদ