বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সংঘবদ্ধ দুর্নীতি: ধরণ, কারণ ও করণীয়’

মাহামুদুল হক
মাহামুদুল হক  © ফাইল ছবি

গত ১৩ মার্চ ২০২১ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সমন্বয়ে গঠিত সংগঠন অধিকার সুরক্ষা পরিষদ উপাচার্য ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ’র অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার ৭৯০ পৃষ্ঠার শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে যা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ইতিহাসে দুর্নীতির সবচেয়ে বড় প্রামাণিক দলিল।

অধিকার সুরক্ষা পরিষদের একজন সদস্য হিসেবে আমি শ্বেতপত্রে আনীত ১১১টি অভিযোগ, তথ্য ও দালিলিক প্রমাণ যাচাই-বাছাইসহ সম্পাদনার প্রধান দায়িত্বটি অলিখিতভাবেই পালন করি এবং এসব কাজ করতে গিয়ে কিছু পর্যবেক্ষণ ও অভিজ্ঞতা সংরক্ষণ করি যা ওই শ্বেতপত্রে উল্লেখ করা হয়নি বা করা যায়নি। জনস্বার্থে বা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে রক্ষার স্বার্থে আমার এসব অনুল্লেখিত পর্যবেক্ষণ প্রকাশ করা অনিবার্য বলে মনে করি। বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘবদ্ধ দুর্নীতি কীভাবে ঘটে, কীভাবে তা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যেতে পারে তা নিয়েও কর্মকৌশল নির্ধারণ করা প্রয়োজন।

কারণ, বর্তমানে ডজনখানেক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন ওইসব অভিযোগ তদন্ত করছে। ইতোমধ্যে ইউজিসি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে। সরকার বেশি বিব্রতকর অবস্থায় পড়ছে এসব উপাচার্যদের নিয়ে। আমার এসব পর্যবেক্ষণ ও প্রস্তাবিত কর্মকৌশল শুধু বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকারের নীতি নির্ধারণে নয়, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সহায়ক হবে বলেই তা প্রকাশ করা জরুরি। 

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ উপাচার্য প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ ২০১৭ সালের ১৪ জুন যোগদান করার পর ক্যাম্পাসে ধারাবাহিক অনুপস্থিত থেকে ঢাকার লিয়াজোঁ অফিসে বসে ব্যাপকভাবে একাডেমিক, প্রশাসনিক, ও আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, জালিয়াতি, হয়রানি, আর স্বেচ্ছাচারিতা চালিয়ে যাচ্ছেন যার প্রামাণিক দলিল রয়েছে ওই শ্বেতপত্রে। উপাচার্য এসব দুর্নীতি করেছেন সংঘবদ্ধভাবে। সংঘবদ্ধ দুর্নীতির চক্রে যারা আছেন তারা উপাচার্যের দুর্নীতিতে সহায়তা করেন আর তারা উপাচার্যের নিকট থেকে বিভিন্ন সুবিধা নেন। উপাচার্যের সঙ্গে দুর্নীতির সুবিধাভোগীদের যোগসাজস, দীর্ঘসময় ধরে পদ্ধতিগত দুর্নীতির ব্যাপকতার দিক বিবেচনা করে আমি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. কলিমউল্লাহ’র দুর্নীতিকে “সংঘবদ্ধ দুর্নীতি” হিসেবে আখ্যায়িত করেছি এর আগে বিভিন্ন লেখায়।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মকর্তা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষককে নিয়ে এ সংঘবদ্ধ দুর্নীতির চক্র তৈরি করেছেন তিনি। এ পযর্ন্ত ক্যাম্পাসে উপস্থিত থেকেছেন ২৩৮ দিন। ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত থাকলেও ঢাকার লিয়াজোঁ অফিসে বসে দুর্নীতির সহযোগিদের নিয়ে প্রশাসন পরিচালনা করে থাকেন, অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা চালিয়ে যান। এসব শিক্ষক ও কর্মকর্তা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার সকল কমিটি, তদন্ত কমিটি, সিন্ডিকেটসহ কেনাকাটা সবকিছু করে থাকেন। এজন্য উপাচার্য দুর্নীতির সহযোগীদের বিভিন্নভাবে পদোন্নতি-পদ দিয়ে পুরষ্কৃত করে থাকেন। এমনকি, জাতীয় পতাকা অবমাননাকারী শিক্ষকদেরও অবৈধভাবে পদোন্নতি দেন শুধু দুর্নীতিতে সহযোগিতা করার পুরষ্কার হিসেবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্যগণও জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে সংঘবদ্ধ দুর্নীতির সহায়ক হয়ে ওঠেন। সিন্ডিকেটের উপাচার্যসহ ১৬জন সদস্যের মধ্যে অভ্যন্তরীণ আটজনের মধ্যে সাতজনই উপাচার্যের নিকট থেকে বিভিন্ন সুবিধা নেন, সকল অবৈধ কর্মকাণ্ডকে অনুমোদন দেন। আর বাকি আটজন সিন্ডিকেট সদস্য বহিরাগত হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বিষয় যাচাই-বাচাই ছাড়াই বা অনেক বিষয় বিস্তারিত না জেনে অনুমোদন দেন। অনেক সময় আসল বিষয় নজরে না এনে বা চেপে রেখে উপাচার্য অনুমোদন করিয়ে নেন। এসব কারণে সিন্ডিকেটে বৈধ-অবৈধ সবকিছুই উপাচার্যের ইচ্ছানুযায়ী অনুমোদন পেয়ে যায় এমন অনেক প্রামাণিক দলিল শ্বেতপত্রে রয়েছে। আমার নিকটও এ ধরণের অনেক প্রমাণ রয়েছে।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমান উপাচার্যসহ বিগত দুইজন উপাচার্যের আমলে একদল শিক্ষক-কর্মকর্তা থেকেছেন উপাচার্যের সঙ্গে এবং আরেকদল উপাচার্য বিরোধী। এ দ্বন্দ্ব বিরাজমান থাকে মূলত ব্যক্তিস্বার্থের কারণে। আসলে তারা স্বার্থের দিক থেকে এক ও অভিন্ন। সংঘবদ্ধ দুর্নীতির সুবিধা ভোগ করতে না পারলেই একদল শিক্ষক-কর্মকর্তা হয়ে যান দুর্নীতিবাজ উপাচার্য বিরোধী আর যারা সুবিধা ভোগ করেন তারা থাকেন ওই উপাচার্যের সঙ্গে। এজন্য উপাচার্যের দুর্নীতির বিরোধীরা সংঘবদ্ধ সহযোগীদের বিরুদ্ধে কোন কথা বলেন না, বা এড়িয়ে যান। এজন্যই আমি যখন গতবছর ১৭ ডিসেম্বর জাতীয় পতাকা অবমাননার মামলা করি উপাচার্য ড. কলিমউল্লাহ ও তার সহযোগী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে তখন আন্দোলনকারী বেশ কিছু শিক্ষক পতাকা অবমাননাকারী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মামলা না করার জন্য আমাকে অনুরোধ করেন। আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল থাকি এবং মামলা করি। ওইসব পতাকা অবমানকারীদের মধ্যে উপাচার্যের সংঘবদ্ধ দুর্নীতির কয়েকজন সহযোগীও রয়েছেন। তবে এবারের আন্দোলনকে কোনভাবেই উপচার্যের শুধু বিরোধিতা করার জন্য তা বলা যাবে না, আসলে আমরা অধিকার সুরক্ষা পরিষদ উপাচার্যের ব্যাপক দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে আন্দোলন করি। উপাচার্য ড. কলিমউল্লাহ’র ব্যাপক দুর্নীতি প্রতিরোধের প্রেক্ষিতে এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থী-কর্মকর্তা-কর্মচারিদের অধিকার সুরক্ষায় ‘অধিকার সুরক্ষা পরিষদ’ সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। তবে অধিকার সুরক্ষা পরিষদ-এর সঙ্গে যুক্ত বেশকিছু শিক্ষক-কর্মকর্তা রয়েছেন যারা আগের উপাচার্যগণের আমলে সুবিধাভোগী বা আন্দোলনকারীও। 

শ্বেতপত্র প্রকাশ করার সময় বা সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্যে লেখার সময় আমাকে ওইসব সংঘবদ্ধ দুর্নীতির সহযোগীদের অনেকের নাম প্রকাশ করতে দেওয়া হয়নি। কেন ওইসব দুর্নীতির সহযোগীদের নাম প্রকাশ করা হয়নি এমন যৌক্তিক প্রশ্ন সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরাও করেছেন। এমনকি, আন্দোলনকারীদের অনেকে শ্বেতপত্র প্রকাশিত না করার জন্য পদ্ধতিগত বাধা আরোপও করেছিলেন। হয়তো সংঘবদ্ধ দুর্নীতিবাজদের সঙ্গে তারা আঁতাত করেছিলেন বা উপাচার্য তাদের কোন দূর্বল দিক চিহ্নিত করে ভয়ের মধ্যে রেখেছিলেন বা ওইসব শিক্ষক পূর্বে তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে এর আগের উপাচার্যের সঙ্গে আন্দোলন করেছেন (আন্দোলন সহযোগী)। সংবাদ সম্মেলনে পূর্ব-নির্ধারিত বক্তা হিসেবে আমাকে উপাচার্য ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ’র ১/১১ এর সময়কার ভূমিকা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবজ্ঞারবিভিন্ন ঘটনাবলী, এবং ২০০৯ সালে ছাত্রলীগকে যেভাবে দুষেছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূতের নিকট ড. কলিমউল্লাহ (উঁইকিলিকস প্রকাশ করে সেই দলিল) এমন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংবাদ সম্মেলনে পাঠ করতে নিরুৎসাহিতও করা হয়েছে আমাকে।

বিগত দুই উপাচার্যের আমলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সংঘবদ্ধ দুর্নীতি’ কমবেশি ঘটেছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতির সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছেন বর্তমান উপাচার্য ড. কলিমউল্লাহ। একদল শিক্ষক-কর্মকর্তা সব উপাচার্যের সময় সরব থেকেছেন কখনো উপাচার্যের পক্ষে, কখনো বিপক্ষে। তাদের পরিচয় একটাই তারা হলেন‘সংঘবদ্ধ দুর্নীতি’র সহযোগী। এজন্য উপাচার্য পরিবর্তিত হলেও দুর্নীতি বন্ধ হয় না। এই দুই দলের বাইরে আরেক দল শিক্ষক রয়েছেন তারা নিরব থাকেন, পড়াশুনা-গবেষণায় নিমগ্ন থাকেন, কোন উচ্চবাচ্য করেন না। এ শ্রেণির শিক্ষকরা নিজেরা দুর্নীতি করেন না বটে, তবে কখনো কখনো দুর্র্নীতিবাজদের ভোট দেন, সমর্থন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে এরাও নীতিহীন ক্ষতিকর জনগোষ্ঠী। আর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদকতো উপাচার্যের মুখপাত্র হিসেবে বিবৃতি দেয়, হল-এর প্রভোস্ট, জনসংযোগ বিভাগের সহকারি প্রশাসকসহ অনেকগুলি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য, বা আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করে। শিক্ষক সমিতি একজন নেতা যদি প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করে ও মুখপাত্র হয় তাহলে শিক্ষকদের অধিকার আদায়ে দরকষাকষির জায়গাটি আর থকে না। নীতিহীনভাবে এসব কর্ম যদি ওই শিক্ষক নেতা করে এবং শিক্ষকরা তাকে ভোট দিয়ে নেতা নির্বাচিত করে বারবার তাহলে ওই শিক্ষক নেতার সঙ্গে যারা তাকে ভোট দিচ্ছে তাদের নৈতিকতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। এসব নৈতিকতা বিবর্জিত শিক্ষকরাই মূলত সংঘবদ্ধ দুর্নীতির সহযোগী। এদের কারো নিয়োগ হয়েছে পা ধরে, কেউ নিয়োগ পেয়েছে অবৈধভাবে এমনকি জালিয়াতি করেও শিক্ষক হয়েছে তার প্রমাণিক দলিল আমার নিকট রয়েছে। আবার বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে জন্মলগ্নে কলেজের কিছু শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়েছেন। এসব শিক্ষকরাই পরবর্তীতে সহযোগী অধ্যাপকও অধ্যাপক হয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের অংশীজন হয়েছেন কিন্তু দু/একজন ছাড়া বেশিরভাগই জ্ঞান-চিন্তায় বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে উত্তীর্ণ হতে পারেননি, কলেজ স্তরেই রয়ে গেছে তাদের মন-মানসিকতা, চিন্তা-ভাবনা। এদের বেশিরভাগই সংঘবদ্ধ দুর্নীতির অংশীজন হয়েছেন বিভিন্ন উপাচার্যের আমলে। 

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়টিকে ভয়াবহ অনিয়ম, দুর্নীতি, একাডেমিক এবং প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলাসহ বিদ্যমান সমস্যার আবর্ত থেকে রক্ষ করা জরুরি। ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ ও তাঁর সংঘবদ্ধ সহযোগীরা উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংসের প্রান্তে নিয়ে এসেছেন। উপাচার্যের একের পর এক দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মকান্ডে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষা পরিষেবা স্তিমিত হয়ে পড়ায় ভয়াবহ সেশন জটের কবলেও শিক্ষার্থীরা। কোভিড-১৯ প্রার্দূভাব সেশনজট আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। সেশনজট নিরসনে ব্যাপক পরিকল্পিত কর্মসূচি হাতে নেওয়া উচিত।

শ্বেতপত্রে উল্লেখিত ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ’র দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার সংঘবদ্ধ ঘটনাসমূহের বাইরেও আরো অনেক দুর্নীতি ও অনিয়মের ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটেছে এমনকি প্রতিনিয়তই ঘটছে যা গভীরতর অনুসন্ধান করাও প্রয়োজন। উপাচার্য ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহসহ সংঘবদ্ধ দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। দুর্নীতিবাজদের শিক্ষক বা কর্মকর্তা বলে সম্বোধন না করে দুর্নীতিবাজই বলতে হবে। প্রয়োজনে তাদের স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে বারবার দুর্নীতির ছোবল থেকে বাঁচাতে হলে। শিক্ষার্থীদের দুর্নীতিবাজ শিক্ষকদের মনে মেনে ঘৃণা করতে হবে, নিজেদের বলিয়ান করে তুলতে হবে নৈতিক শিক্ষায়। অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের নৈতিকতা কখনোই মানদণ্ড স্পর্শ করতে পারে না। সাধারণ শিক্ষাসহ মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর নৈতিক শিক্ষাও দিতে পারে না তারা শিক্ষার্থীদের। এই উপাচার্যের আমলের সকল নিয়োগ, আর্থিক অনিয়ম-দুর্নীতির ঘটনা উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। চলমান নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করাও প্রয়োজন।

আমারা জানি একজন উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক, তিনি নিজেও শিক্ষক। তিনিই যদি দুর্নীতি-অনিয়মে নিমজ্জিত হন তাহলে তা জাতির মেরুদণ্ডতেই আঘাত হানে। এজন্যই মহামান্য হাইর্কোট সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ বাতিল সংক্রান্ত রায়ে (রীট পিটিশন নং ৮৯৮৬/২০১৯) বলেন: “সর্বোচ্চ বিদ্যালয় তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক উচু মানের হবেন। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরসহ সকল কার্যক্রমের পরিচালনাকারী উপাচার্য হবেন আরও উচু মানের। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা জাতীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্মানজনক পেশা।  এ পেশায় কোন ব্যক্তি আইন এবং আদালতের আদেশ ভংগ করতে পারে এটা সাধারণ মানুষ চিন্তাও করতে পারে না।”

সর্বোপরি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উপাচার্য নিয়োগে সরকারকে আরো সতর্ক থাকতে হবে। উপাচার্য নিয়োগের পদ্ধতিগত শর্তের  পরিবর্তন আনতে হবে। বঙ্গবন্ধু যখন প্রথম জাতীয় শিক্ষা কমিশন গঠন করেন তখন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ ড. খুদরাত-এ-খুদাকে এর চেয়ারম্যান নিয়োগ করেছিলেন। আর এর সদস্যগণও ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনা তিনি করেননি। এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘রাজনীতি সর্বক্ষেত্রেই বিরাজমান কিন্তু আমি এখানে কোন রাজনীতি চাই না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে রাজনীতি লালন না করাই অনেক বেশি ভাল।’উপাচার্যগণ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে শিক্ষক সমিতিসহ অভ্যান্তরীণ ভোট বাড়াতে পারেন কিন্ত জাতীয় নির্বাচনে ভোট বাড়ানোর ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব তাদের নেই বরং সরকারকে সবচেয়ে বেশি বিব্রতকর অবস্থায় ফেলছেন, ভাবমূর্তি নষ্ট করছেন। আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অযোগ্য ও নৈতিকতা বিবর্জিত শিক্ষক দিয়ে ভরে দিচ্ছেন দুর্নীতিবাজ উপার্চাগণ।  এ অবস্থা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে রক্ষা করা জরুরি নতুবা জাতির মেরুদণ্ডই ভেঙ্গে পড়বে। উপাচার্য হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক। আমরা সত্যিকারের একজন অভিভাবক বিশ্ববিদ্যালয়ে চাই যিনি অস্থির আন্দোলনের ক্ষেত্র তৈরি না করে জ্ঞান উৎপাদন, বিতরণ ও বিচ্ছুরণের পরিবেশ বজায় রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করবেন। সংঘবদ্ধ দুর্নীতির চক্র ভেঙ্গে দিয়ে বিশ্ববিদ্যলয়কে নিয়ে যাবেন আর্ন্তজাতিক পরিমণ্ডলে।

লেখক: শিক্ষক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।


সর্বশেষ সংবাদ