২৫ মার্চ ২০২১, ১০:৫৪

বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার সবচেয়ে অবহেলিত

  © টিডিসি ফটো

বাংলাদেশের সরকারি স্কুল কলেজগুলো যতদিন মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকবে ততদিন শিক্ষার অধঃপতন চলতেই থাকবে। এদের কারণে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার সবচেয়ে অবহেলিত। এদের বদলি প্রমোশন ইত্যাদি সবকিছুই করে বিসিএসেরই আরেক ক্যাডার যারা তাদেরই হয়ত সহপাঠী এবং একই বিসিএসে হয়ত নিয়োগ পেয়েছে। বিসিএস প্রশাসনের মানুষগুলো নিজেদের বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারদের চেয়ে বেশি মেধাবী ভাবেন আর সমস্যার মূল এখানেই। অথচ শিক্ষা ক্যাডারই হওয়া উচিত বেশি মেধাবীদের জায়গা।

বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারকে অন্যান্য ক্যাডার থেকে আলাদা করে এর নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ ভিন্ন করতে হবে। কেবল মাস্টার্স পাশ দিয়ে ৩০ বছরের বয়স সীমা বেঁধে দিয়ে প্রভাষক নিয়োগ দিলেই হবে না। কারণ আমাদের কলেজগুলো এখন আর শুধুই উচ্চ মাধ্যমিক পড়ায় না। প্রায় সব কলেজেই অনার্স মাস্টার্স আছে। তাই সেখানে পিএইচডি ডিগ্রীধারীদের নিয়োগের পথও সুগম করতে হবে। তার জন্য পিএইচডি ডিগ্রীধারীদের সহকারী অধ্যাপক এবং উচ্চতর অভিজ্ঞতা যাদের আছে তাদের সরাসরি সহযোগী অধ্যাপক বা অধ্যাপক পদে নিয়োগেরও সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। সেই জন্য ডিগ্রী ও অভিজ্ঞতার আলোকে বয়স সীমা নতুন করে নির্ধারণ করে আলাদা পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। এখন আমাদের অনেক ছেলেমেয়ে দেশের বাহিরে পিএইচডি করতে যায়। পিএইচডি শেষে যখন তারা ফিরে আসে তাদের বয়স নিশ্চই ৩০-এ আটকে থাকবে না। এইরকম উচ্চ শিক্ষিত ছেলেমেরা ফিরে আসলে তাদের নিয়োগের কোন ব্যবস্থা আমাদের সরকারি কলেজগুলো রাখছে না। তাহলে পিএইচডি ডিগ্রীধারীরা কোথায় চাকুরী করবে? এদের কথা আমাদের সরকার কেন ভাবছে না?

যারা বিদেশে ভালো পিএইচডি করছে তাদের অনেকেরই অনার্স মাস্টার্সে সিজিপিএ ৩.৫ এর নিচে। ফলে এরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার জন্য আবেদনই করতে পারে না। তাদেরকে অন্তত কলেজগুলোতে চাকুরী করার সুযোগ দিন। নাহলে তারা কি করবে? এদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা প্রচন্ড মেধাবী। রাষ্ট্রের উচিত এদের নিয়ে সিরিয়াসলি ভাবা। এইভাবে মেধার অপচয় হতে দেওয়া যায় না। এর মাধ্যমে মানসম্পন্ন শিক্ষকের অভাবটা অনেকটাই দূর হবে।

আমি প্রায়ই বিদেশ থেকে পিএইচডি শেষে দেশে ফিরে চাকুরী না পাওয়াদের কাছ থেকে ইমেইল বা ম্যাসেন্জারে মেসেজ পাই। বড়ই কষ্টের সেইসব মেসেজ। সম্প্রতি পাওয়া একজনের মেসেজের একটু অংশ এখানে কাট & পেস্ট করছি।

“Recently I back from Japan after my Ph.D. and Postdoc, facing the trouble of getting opportunities in the job field though I have several publications in ACS, Nature, Angewandte. My perception- this is a common and very big problem for this kind of higher educated people of Bangladesh, who did Ph.D. in abroad universities and the age limit (30 years) is over for government entry-level job. There is no reliable job and people are afraid of coming back to Bangladesh. Consequently, the country losing meritorious manpower.”

একদিকে সরকার প্রধানমন্ত্রী ফেলোশিপের নামে শত শত কোটি টাকার প্রজেক্ট খুলে সরকারি কর্মকর্তাদের পিএইচডি করতে বিদেশে পাঠাচ্ছে। আর এইদিকে পিএইচডি ডিগ্রীধারীরা চাকুরী পাচ্ছে না। বীণে পুঁজিতে পিএইচডি ডিগ্রীধারীদের পাওয়াদের কেন সরকার নিচ্ছে না?

ভারত একটা নিয়ম করেছে। সেটা হলো ওয়ার্ল্ড র‌্যাংকিংয়ে ৫০০-এর মধ্যে থাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি থাকলে তাদের সরাসরি সহকারী অধ্যাপক হিসাবে নিয়োগের ব্যবস্থা করেছে। এইটা করলেই দেশের শিক্ষার মানের আমূল পরিবর্তন আসবে বলে আমি বিশ্বাস করি। এর মাধ্যমে যেইসব ছেলেমেয়েরা দেশের বাহিরে পিএইচডি করছে তারা দেশে ফিরে আসতে অনুপ্রাণিত হবে। একই সাথে যদি পোস্ট-ডক্টরাল অভিজ্ঞতা থাকলে সহযোগী অধ্যাপক হিসাবে নিয়োগ দেই তাহলেও আমাদের কলেজগুলো মানসম্পন্ন এবং অভিজ্ঞতা অনেক শিক্ষক পাবে যারা অনার্স এবং মার্স্টাস লেভেলে পড়াতে পারবে। এই কাজটি কিন্তু আমাদের পিএসসি সহজেই করতে পারে।

তাছাড়া আরেকটি কাজ করতে হবে। শিক্ষা ক্যাডারের শিক্ষকদের প্রমোশনটা মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে আলাদা একটা শিক্ষা কমিশন করে তাদের হাতে দেওয়া উচিত। শিক্ষকদের মূল্যায়ন করতে হলে যেই যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতা দরকার তা মন্ত্রণালয়ের নেই। এই কাজটি না করলে শিক্ষকরা অবহেলিত ও নিষ্পেষিত হতে থাকবেই। যার কারণে অনেকে এই ক্যাডারে আসতে উৎসাহ বোধ নাও করতে পারে। আশা করি এই পদক্ষেপগুলো নিলে বাংলাদেশের শিক্ষায় এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে।

লেখক: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়