‘মনছবি’: মানুষের মস্তিষ্কের কর্মগঠন বদলে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ

  © টিডিসি ফটো

আসলে মানুষের শরীরের চেয়ে মন অনেক বেশি শক্তিশালী। আমাদের মস্তিষ্কে যে কোটি কোটি নিউরোন (স্নায়ু কোষ) রয়েছে, তার অধিকাংশ আমরা হতাশা এবং আলস্যের কারণে ব্যবহার করিনা। আমাদের মস্তিষ্কে নিউরোনের সংখ্যা প্রায় ১০০ বিলিয়ন, মানে ১০ হাজার কোটিরও বেশি।

মানুষের মস্তিষ্কের ক্ষমতা একটা সুপার কম্পিউটারের চেয়েও অনেক অনেক বেশি। আমাদের কল্পনা ও বিশ্বাস অর্থাৎ ‘মনছবি’ তো এই নিউরোনগুলো পর্যায়ক্রমে আস্থা স্থাপন করে কাজের মাধ্যমে আমাদেরকে লক্ষ্যে পৌঁছায়।

জীবনের লক্ষ্য সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট হলেই আত্মবিশ্বাস আসবে। সে কারণে নিজের মধ্যে ১০০% আস্থা তৈরিতে লক্ষ্য সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট করাটা জরুরি। প্রশান্ত মনের স্থির পর্দায় সফলতার ব্লু প্রিন্ট (নীল নকশা) অর্থাৎ ‘মনছবি’ আঁকতে হবে।

‘মনছবি’ হচ্ছে মনের পর্দায় শুভ গভীর বিশ্বাস, একাগ্র চিত্তে ও গভীর মনোযোগে লালিত সাফল্যের ছবি। অর্থাৎ আপনি ভালো যা পেতে চান তা একাগ্রভাবে প্রথমে চাওয়া, চাওয়াটা ‘পাবোই’ বলে বিশ্বাস করা ও কাজ করা।

‘মনছবি’ হলো শুভ চাওয়া, বিশ্বাস ও পরিশ্রমে লালিত ভবিষ্যতের বাস্তবতা (Future Reality)। ‘মনছবি’ যে কোন সাফল্যের ভ্রুণ। মায়ের গর্ভে যে প্রক্রিয়ায় ভ্রূণ ধীরে ধীরে পূর্ণাঙ্গতা পেয়ে শিশুতে রুপান্তরিত হয়, মনের গর্ভে বিশ্বাস ও কর্মে লালিত হয়ে মনছবিও তেমনই উদ্দেশ্যের বাস্তবতা প্রস্রব করে। 

মনছবির এ প্রক্রিয়ার জন্য ফলপ্রসূ কার্যকারিতার জন্য নিম্নোক্ত কয়েকটি শর্ত আছে-

১) স্থির লক্ষ্য 

২) লক্ষ্যে আস্থা ও একাত্মতা

৩) লক্ষ্যে আকাঙ্ক্ষা ও আনন্দ

৪) লক্ষ্য পূরণে নীরবে কাজ

স্থির ও সুস্পষ্ট লক্ষ্যের ছবি (মনছবি) যখন মনে গেথে যায় তখন মানুষের মস্তিষ্কের কর্মগঠন বদলে যায় এবং তখন আপনার মস্তিষ্ক স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নির্মাণের লক্ষ্য বাস্তবায়নের কাজে লেগে যায়।

We were born to win! সাফল্য ও জয় পেতে আমরা জন্মেছি। সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে বাস্তব প্রক্রিয়া জেনে কাজ শুরু করলে বদলে যাওয়া মস্তিষ্কের কর্মগঠন পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে তথ্য ও অনুপ্রেরণা প্রেরণ করবে। এটি বিজ্ঞানসম্মত। মনে রাখবেন, বারবার লক্ষ্য পরিবর্তন করলে আপনার মস্তিষ্ক কর্মপন্থা ঠিক করতে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়বে। সেকারণে লক্ষ্যে ও লক্ষ্য পূরণে কাজে সংকল্পবদ্ধ থাকুন। লক্ষ্য পূরণে নীরবে নিরলসভাবে কাজ করুন। তাড়াতাড়ি পাওয়ার প্রবণতা ত্যাগ করুন।

ভারতের খ্যাতিমান বিজ্ঞানী ও সবচেয়ে জনপ্রিয় (প্রাক্তন) রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালাম এর একটি বিখ্যাত উক্তি আছে, ‘স্বপ্ন সেটা নয় যা তুমি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখো, স্বপ্ন হলো সেটাই যা তোমাকে ঘুমোতে দেয় না।’ বস্তুত, আকাঙ্ক্ষার তীব্রতা কখনও আপনাকে ক্লান্ত করবে না। ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালাম এর ক্যারিয়ারের শুরুতে বড় ব্যর্থতা ছিলো।   

বিশ্বের সকল নিজ গুণে সফল মানুষ বিশ্বাস করেন, ব্যর্থতা সফলতার পথে ধাপ বিশেষ। বিশ্বের সকল বিজ্ঞানী তাদের আবিস্কারে অসংখ্য বার ব্যর্থ হয়েছেন। প্রকৃত পক্ষে, সফলতার মূল মন্ত্র হচ্ছে -‘হতাশ না হয়ে সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট লক্ষ্যে নীরবে ও একাগ্রচিত্তে কাজে লেগে থাকা।’

ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালাম এর মানুষকে অনুপ্রেরণা যোগানোর দুটি বিখ্যাত উক্তি নিম্নে প্রদত্ত হলো-

১) ‘যদি তুমি পরাজিত হও, তাহলে হাল ছেড়ো না, কারণ সেটাই তোমার শেখার প্রথম পদক্ষপ।

২) ‘স্বপ্ন, স্বপ্ন, স্বপ্ন। স্বপ্নই চিন্তার রূপ পায়, আর সেই চিন্তা কাজে পরিণত হয়।’

লেখক: ক্রপ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ