কতিপয় শিক্ষকের পদ ও সুবিধার আকর্ষণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে

  © টিডিসি ফটো

শিক্ষকতা অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ পেশা। যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন তারা অত্যন্ত মেধাবী এবং বিশেষ গুণে গুণান্বিত ও দক্ষ। তাই কোন ধরনের লোভ-লালসা বা অন্য কোন মোহের প্রতি আকৃষ্ট না হয়ে পেশার মর্যাদাকে সমুন্নত রাখবেন— এটি সকলেই প্রত্যাশা করেন। তাহলেই শিক্ষার্থীরাসহ দেশের আপামর জনতা শিক্ষকদের আদর্শ হিসেবে বিবেচনা করবে।

দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ ওঠায় তাদের সচেতন হতে বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তনের ভাষণে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘উপাচার্যগণ হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী। দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আপনাদেরকে সততা, নিষ্ঠা ও দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। আপনারা নিজেরাই যদি অনিয়মকে প্রশ্রয় দেন বা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন, তা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা কী হবে, তা ভেবে দেখবেন।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হিসেবে গত বছর ঢাকা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে দেয়া তার বক্তব্য বেশ আলোচিত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিরাজমান পরিস্থিতি নিয়ে তার উৎকণ্ঠার প্রকাশ ঘটেছে। সমাবর্তনে দেয়া বক্তব্যে শিক্ষকদের প্রতি কিছু অনুযোগ, কিছু অভিযোগ প্রকাশিত হয়েছে।

শিক্ষকতা পেশাকে ভিন্নমাত্রায় বিবেচনা করে মহামান্য রাষ্ট্রপতি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের উদ্দেশে সমাবর্তনে বলেছেন, ‘আপনারা চাইলে অন্য যে কোনো লোভনীয় চাকরি বা পদে যোগ দিতে পারতেন; কিন্তু তা না করে শিক্ষকতাকে আপনারা পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তাই, কোনো ধরনের লোভ বা প্রলোভনে না পড়ে এ পেশার মর্যাদা আপনাদের সমুন্নত রাখা উচিত। আর শিক্ষার্থীরা শুধু তখনই আপনাদের আদর্শ হিসেবে মনে করবে।’

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক বিএনপিপন্থী শিক্ষক (সকলে নয়) পদ ও সুবিধার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে আওয়ামীপন্থী শিক্ষক প্যানেলে যোগ দিয়েছেন। তারা "হাইব্রিড শিক্ষক" হিসেবে পরিচিত। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের হলুদ প্যানেলের স্টিয়ারিং কমিটির (দল পরিচালনা কমিটি) তথাকথিত রাবি প্রশাসন সমর্থিত প্যানেলে ২/১ জন "হাইব্রিড শিক্ষক" নির্বাচন করছেন। অধিকিন্তু, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে আন্দোলনকারী অন্যতম প্রধান নেতা তথাকথিত রাবি প্রশাসন সমর্থিত প্যানেলে "কনভেনর" পদে নির্বাচন করছেন।

এ বিষয়গুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে। রাবি প্রশাসন সমর্থিত প্যানেল হিসেবে পরিচিত হওয়ার মূল কারণ প্রশাসন কর্তৃক নিযুক্ত হলের প্রাধ্যক্ষ ও বিভিন্ন ইনস্টিউটের পরিচালকগণ এ প্যানেলে নির্বাচন করছেন এবং রাবি ভিসি ২০১৮ সালের স্টিয়ারিং কমিটির নির্বাচনে তাদের বেশ কয়েক জনের পক্ষে সিনেট ভবনে ভোট চেয়েছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা বিষয়ে দু’রকম মতামত পাওয়া যায়। শিক্ষকদের এক অংশ মনে করেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অন্যান্য বিভাগের মানুষজন বেতনের বাইরে অধিকতর আর্থিক সুবিধা পেয়ে থাকেন। শিক্ষকদের সে সুবিধা নেই। উদাহরণস্বরুপ, ‘গ্রেড-২’র একজন সরকারি কর্মকর্তা তার গাড়ি পরিচালন ব্যয় হিসেবে মাসে ৫০ হাজার টাকা পান, কেউ কেউ গৃহকর্মী ও বাবুর্চির সুবিধাও পান। এর কোনো একটিও একই গ্রেডের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পান না। এ যুক্তিকে একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। অপর অংশ মনে করেন, শিক্ষকদের আর্থিক বিবেচনার চেয়ে নৈতিক বিবেচনা অধিকতর গ্রহণীয়। তারা যুক্তি দেখান, যেসব শিক্ষক এখনও নৈতিক দিক বিবেচনায় সৎ আছেন, তারা কি না খেয়ে মরে গেছেন?

লেখক: প্রফেসর, ক্রপ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ