এসএসসি পরীক্ষা: রাজপথ নয়, পড়ার টেবিলেই সমাধান
- শরীফুজ্জামান পিন্টু
- প্রকাশ: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১০:২৪ AM , আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১০:২৪ AM
এ বছরের মাধ্যমিক বা এসএসসি পরীক্ষা বাতিল চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একাধিক গ্রুপ এবং পেজ তৈরি হয়েছে। একই দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে ঢাকা, নরসিংদী, গাজীপুর, ময়মনসিংহসহ দেশের কয়েকটি এলাকায়।
পরীক্ষার্থীদের এই অংশের দাবি এসএসসি পরীক্ষা না নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার ভিত্তিতে ফল ঘোষণা করতে হবে।
এবার সব মিলিয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ২২ লাখ। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে জানিয়েছে, আগামী জুনে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষাগুলো অনুষ্ঠিত হবে।
পরীক্ষা না নেওয়ার দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করা হচ্ছে গণমাধ্যমসহ ফেসবুকের কয়েকটি গ্রুপে। তবে শিক্ষার্থীদের অনেকেই এই দাবির সঙ্গে ভিন্নমত প্রকাশ করে বলছে, তারা পরীক্ষা বাতিল নয় বরং পরীক্ষায় অংশ নিতে চায়।
এটা সত্য যে, করোনাভাইরাসের কারণে পুরো এক বছর স্কুল বন্ধ থাকায় ছেলেমেয়েরা ক্লাস করতে পারেনি। তবে ইতিমধ্যে মাধ্যমিক পরীক্ষার সিলেবাস কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার এই সিলেবাস ওয়েবসাইটে দেখে ছেলেমেয়েদের অনেকেই খুশি।
শিক্ষক ও পরীক্ষার্থীদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে ধারনা পেলাম, মূল সিলেবাসের প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ রাখা হয়েছে। সব বিষয় থেকে অনেকগুলো অধ্যায় বাদ দেওয়া হয়েছে, যাতে দুই মাসে প্রস্তুতি নিয়ে সিলেবাস শেষ করা যায়। একেকটি অধ্যায়ের জন্য কতটি ক্লাস লাগবে এবং কততম অধ্যায় কোন ক্লাসে পড়ানো হবে তাও সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড—এনসিটিবি। বাংলা প্রথম পত্র, সাধারণ গণিত ও উচ্চতর গণিতে সিলেবাস কমানোর বিষয়টি ছিল কঠিন, কারণ সেখানে বিভাগভিত্তিক প্রশ্নের উত্তর করতে হয়।
বাংলা প্রথম পত্রে গদ্য, পদ্য, নাটক ও উপন্যাস—এই চারটি বিভাগ থেকে গদ্য ও পদ্যে নূন্যতম দুটি করে চারটি এবং নাটক ও উপন্যাস থেকে একটি করে মোট সাতটি প্রশ্নের উত্তর করতে হয়। এখানে সিলেবাস এমনভাবে কমাতে হয়েছে যাতে বিভাগ ও নম্বর ঠিক থাকে। বাংলা প্রথম পত্রে মোট ৩০টি গদ্য ও পদ্যের মধ্যে পরীক্ষা নেওয়া হবে ১৫টি থেকে।
আবার ইংরেজি প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রে কিছু বর্ণনামূলক টপিক বাদ দিয়ে অন্যান্য কিছু টপিকের নম্বর বাড়ানো হয়েছে ১০০ নম্বর ঠিক রাখার জন্য। ইংরেজি প্রথম পত্রের বেশ কিছু অধ্যায় বাদ দেওয়া হয়েছে। বাংলা দ্বিতীয় পত্রের ব্যাকরণ অংশের সিলেবাস অনেকটাই কমেছে।
বিজ্ঞান বিভাগের বিষয়গুলো থেকে অনেক অধ্যায় বাদ দেওয়া হয়েছে। পদার্থবিজ্ঞানে ১৪টি অধ্যায়ের মধ্যে সিলেবাসে রাখা হয়েছে পাঁচটি অধ্যায়। রসায়নে ১২টি অধ্যায়ের মধ্যে চারটি অধ্যায় থেকে পরীক্ষা নেওয়া হবে, বাকি আটটি বাদ রাখা হয়েছে।
মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের বিষয়গুলোর সিলেবাসও অনেকটা কমিয়ে আনা হয়েছে। এ ছাড়া আইসিটি এবং ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার সিলেবাস বেশ কমেছে।
গত জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে প্রথম দফায় প্রায় ৩০ শতাংশ সিলেবাস কমানো হয়েছিল, তারপরও দাবি উঠেছিল এটা যথেষ্ট নয়, কিছু বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছিল। এবার প্রায় দুই তৃতীয়াংশ সিলেবাস কমানো হয়েছে। এটুকু সিলেবাস পড়ে পরীক্ষা দেওয়াটা খুবই যুক্তিযুক্ত।
ফেব্রুয়ারি চলছে, এখনও প্রায় চার মাস পরে পরীক্ষা। তারপরও যারা পরীক্ষা ছাড়াই মাধ্যমিকের গণ্ডি পার হওয়ার স্বপ্ন দেখছে, তাদের প্রতি অনুরোধ—প্লিজ পড়ার টেবিলে ফিরে যাও। উচ্চ মাধ্যমিক বা এইচএসসির বেলায় যেটা করা হয়েছে সেটি মাধ্যমিকের বেলায় প্রযোজ্য নয়।
অনেক যুক্তি থাকার পরও উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ‘অটোপাশ’ বলে ট্রল করা হচ্ছে। ছেলেমেয়েদের অনেকেই বিষয়টি নিয়ে বিব্রত, যদিও তারা এই পরিস্থিতির জন্য মোটেও দায়ী নয়।
এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের উত্তীর্ণ ঘোষণা করা হলেও তারা দুই বছর পড়াশোনা করে পরীক্ষার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিল। নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। দুই সপ্তাহ পর গত বছরের ১ এপ্রিল তাদের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে সেই পরীক্ষা নেওয়াটা আর সম্ভব হয়নি।
তবে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এটি চিন্তাও করা যায় না। এবার যারা এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিবে, তারা নবম শ্রেণিতে অর্ধ–বার্ষিক ও বার্ষিক পরীক্ষা দিয়ে ২০২০ সালে দশম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছিল। এরপর তারা বছরের প্রথম আড়াই মাস ক্লাস করেছে।
এর পরপরই করোনার কারণে সবকিছু থেমে গেলেও শহরকেন্দ্রিক অনেক স্কুল অনলাইনে ক্লাস নিয়েছে। তবে সবাই কিন্তু যে, যার মতো বাসায় প্রস্তুতি নিয়েছে। সিলেবাস কমিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সীমিত আকারে খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তের ফলে যারা অনলাইন ক্লাসের সুবিধা থেকে নানা কারণে বঞ্চিত হয়েছে, তাদেরও আর কোনো অভিযোগ করার সুযোগ থাকছে না।
বিতর্ক থাকলেও পরীক্ষা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের অন্যতম সবর্জনস্বীকৃত পদ্ধতি। তাই এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য তোমরা প্রস্তুত হও। শুভ কামনা তোমাদের জন্য।
লেখক: প্রাক্তন হেড অব নিউজ, দৈনিক প্রথম আলো