‘একসময় তো মেয়েকে বিয়ে দিতেই হবে’— এমন চিন্তা থেকেও বাল্যবিবাহ হচ্ছে
করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটি চলমান আছে। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় কয়েক দফা ছুটি বাড়িয়েছে সরকার। সর্বশেষ ঘোষণায় আগামী ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি রয়েছে। এর ফলে একটানা ১০ মাস বন্ধই রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
করোনাভাইরাসের বিস্তারের এ সময় দেশে বাল্যবিবাহের সংখ্যা আগের চেয়ে বেড়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় গ্রামীণ পরিবারগুলোতে একধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। তাই ঘরবন্দি সময়ে বিয়ে দিয়ে ফেলার চেষ্টা করছেন অভিভাবকেরা। এ নিয়ে বেসরকারি সংগঠনগুলোও উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল।
চলতি বছরের শুরু থেকেও ঘরবন্দি শিক্ষার্থীরা। আগামী মার্চের আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে না, সরকারের নীতিনির্ধারকরা এমনটাই ইঙ্গিত দিয়েছেন। এ অবস্থায় বাল্যবিবাহ রোধে অভিভাবকদের পাশাপাশি জনসাধারণকে সচেতনতা হতে বললেন সংশ্লিষ্টরা। তাছাড়া প্রশাসনকে আইনের সঠিক প্রয়োগের তাগিদও দেন তারা।
এক সাক্ষাৎকারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. তানিয়া হক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমাদের দেশে করোনার পূর্বেও বাল্যবিবাহ চোখে পড়ার মতো ছিলো। যেহেতু এখন করোনার সংকট চলছে তাই বাল্যবিবাহ বাড়বে এটাই স্বাভাবিক।
তিনি বলেন, বর্তমানে সামাজিক অবক্ষয় যদি বলি, দেশে প্রতিনিয়ত ধর্ষণের মতো জঘন্য ঘটনা ঘটেছে। ফলে নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেও অনেক বাবা-মা তার সন্তানকে বাল্যবিয়ে দেওয়ার কারণ হতে পারে। এছাড়া করোনাকালে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে দরিদ্র পরিবারের অর্থনৈতিক সংকটতো তৈরি হয়েছে। তাই ‘একসময় তো মেয়েকে বিয়ে দিতেই হবে’ এমন চিন্তা থেকেও অনেক বাল্যবিবাহ হচ্ছে।
অধ্যাপক ড. তানিয়া হক বলেন, এভাবে বাল্যবিবাহ বাড়তে থাকলে পরবর্তী প্রজন্মে এটার গভীর প্রভাব পড়বে। যেহেতু এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ তাই প্রত্যেক বাবা-মায়ের উচিত সন্তানকে বাল্যবিবাহ দেওয়ার চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসা। এই কঠিন মূহুর্তে বাল্যবিবাহ রোধে প্রশাসনের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে ব্যাপক আকারে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। তাহলেই বাল্যবিবাহ দেওয়ার প্রবণতা ধীরে ধীরে কমে আসবে।