০৯ জানুয়ারি ২০২১, ০৯:১১

বঙ্গবন্ধুর নামের প্রতিষ্ঠান মডেল বিশ্ববিদ্যালয় হওয়া উচিত

  © ফাইল ফটো

যেই বিশ্ববিদ্যালয় জাতির পিতার নামে হবে অথবা জাতির পিতার কন্যা এবং একই সাথে প্রধানমন্ত্রীর নামে হবে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতি, অপরাজনীতি ইত্যাদি কিভাবে চলে আমি এইটা বুঝতে পারিনা। জাতির পিতার নামে যেই প্রতিষ্ঠান হবে সেইটা হওয়া উচিত দেশের মডেল বিশ্ববিদ্যালয়।

সরকার ওখানে কি করে স্বল্প বাজেট বরাদ্দ দেয়? কিভাবে দলীয় ভিত্তিতে অযোগ্যদের প্রশাসনে নিয়োগ দিয়ে তাদের মাধ্যমে অযোগ্যদের শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দেয়? সরকারই বা জাতির পিতাকে কেমন সম্মান দেখায় আর যারা নিয়োগ পেয়ে ওখানে গিয়ে দুর্নীতির আখড়া বানায় তারা কিভাবে মুজিব সৈনিক হয়?

আমরাতো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, কম্পিউটার চুরিসহ নানা অপকর্মের কথা জানি এখন আবার শুনছি শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে আরো ভয়াবহ দুর্নীতির কাহিনী। এমনিতেই এইগুলো উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তার উপর জাতির পিতা অথবা শেখ হাসিনার নামে হওয়ার পরেও যদি ভয়াবহ দুর্নীতি হয় তাহলে বুঝুন দেশে ভালো মানুষের জন্ম কোথা থেকে হবে?

আজকের যুগান্তরের একটি রিপোর্টের মাধ্যমে নেত্রকোনায় শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন মামুলি রেজিস্ট্রারের দুর্নীতি করার ক্ষমতা দেখে বিস্মিত। সাধারণত বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি রেজিস্ট্রারের তেমন কোন ক্ষমতা নেই। কিন্তু বাংলাদেশের বাস্তবতায় দেশের সকল ক্ষমতা যেমন প্রধানমন্ত্রীর কাছে কেন্দ্রীভূত তেমনি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ক্ষমতা ভিসির কাছে কেন্দ্রীভূত।

কিন্তু শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখি ব্যতিক্রম। সেখানে রেজিস্ট্রারেরও বিপুল ক্ষমতা। সে শিক্ষক নিয়োগেও তার ক্ষমতা প্রয়োগ করে তার বোন কাজী ইসমত জাহান শুভ্রাকে অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ দেন। কল্পনা করা যে এ পদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অধিকতর যোগ্য প্রার্থী থাকার পরও ইডেন কলেজ থেকে পাস করা কাউকে নিয়োগ দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন একজন রেজিস্ট্রার।

এছাড়া তার রিরুদ্ধে নিয়োগ ও টেন্ডার বাণিজ্যের অভিযোগ আছে। তার উপর বোন শুভ্রার স্বামী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আনিসুর রহমানকে বদলি করে নেত্রকোনা জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়ে আসেন তিনি। এত ক্ষমতা কোথা থেকে আসে?

আমার ধারণা বঙ্গবন্ধুর নামে কিংবা শেখ হাসিনার নামে গঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা সরকারি কৃপায় প্রশাসনে নিয়োগ পায় তারা নিজেদের সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে টিকা দেওয়া আছে মনে করে। তারা ভাবে তাদের উপর সরকারের ছায়া আছে। তারা ধরা ছোয়ার বাহিরে। এতকিছুর পরেও গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে সরাতে ওখানকার শিক্ষক ছাত্রদের অনেক আন্দোলন করতে হয়েছে। এখানেও একই অবস্থা।

সরকার কেন এইসব অন্যায় বরদাস্ত করে? কারণ বাংলাদেশের শিক্ষা নিয়ে সরকারের কোন ভাবনা নাই। শিক্ষায় সরকারের বরাদ্দ এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অযোগ্যদের ভিসি নিয়োগই প্রমান করে সরকার চায় না দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মান উন্নত হউক।

লেখক: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়