শিক্ষার্থী আত্মহত্যার শেষ কোথায়?

লেখক সজীব ওয়াফি (বায়ে) আত্মহত্যা করা রাবি ছাত্র দেবজ্যোতি বসাক পার্থ (ডানে)
লেখক সজীব ওয়াফি (বায়ে) আত্মহত্যা করা রাবি ছাত্র দেবজ্যোতি বসাক পার্থ (ডানে)  © সংগৃহীত

কিছুদিন পরপরই পত্রিকার পাতায় ভেসে আসে শিক্ষার্থী আত্মহত্যার সংবাদ। কখনো মাধ্যমিক পর্যায়ের খারাপ ফল করা কিশোর-কিশোরী, কখনো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন। রাগে দুঃখে নিরবে চলে যাচ্ছে স্বপ্নভরা প্রাণগুলো। বর্তমান আপদকালীন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার পরিমাণ বেড়েছে বহুগুণে। উদ্বেগজনক! আত্মহত্যার এ সারিতে যুক্ত হয়েছে ঢাবি, রাবি, ইবিসহ দেশের বেশকিছু খ্যাতনামা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

করোনায় মার্চ মাস থেকে দীর্ঘদিন শিক্ষার্থীরা বাড়িতে থাকায় পারিবারিক চাপ স্বাভাবিক। অর্থনৈতিক সমস্যা যার প্রধান কারণগুলোর অন্যমত। নারী শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক মানসিকতা ভেঙ্গে দিচ্ছে বিয়ের তোড়জোড়। চেপে ধরেছে নানান দিকের হতাশা। কোভিড-১৯ আক্রান্ত পূর্বের বছরগুলোয় মাধ্যমিক পর্যায়ের অসংখ্য শিক্ষার্থী খারাপ ফলাফলের জন্য আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। কিন্তু মহামারী কালীন ছুটিতে থাকা উচ্চশিক্ষা অর্জনে পড়ুয়ারা এ পথে যাচ্ছেন কেন! আমাদের পরিবারগুলো কি দায়িত্বশীল আচরণ করছেন না?

অতিমারী সময়গুলোতে সারাবিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা। গ্রাম বাংলার গরিব পরিবারগুলোয় অর্থনৈতিক সংকট মারাত্মক। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা উঠে আসে গরিব-প্রান্তিক পরিবারগুলো থেকে। ভরসার সেই জায়গা নিরবে চলে গেলে ভবিষ্যৎ পারিবারিক অর্থনীতি ঘুরে দাড়াবার উপায় থাকলো কই! এমনিতেই আমাদের দেশে কর্মসংস্থানের সংকীর্ণ অবস্থা। উপরন্তু করোনা মহামারীর বেহাল দশা তরুণ প্রজন্মকে আরও হতাশায় নিমজ্জিত করেছে। বাবা-মা ও ছেলেমেয়ের সাথে মনোমালিন্য তৈরী করেছে পারিবারিক অশান্তি। অনেক ক্ষেত্রে প্রভাবিত করেছে বন্ধুত্বের সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়া।

করোনায় সামাজিক সংহতির পরিবর্তে দূরত্ব রক্ষা করতে গিয়ে যোগাযোগ সম্ভব হচ্ছে না। কাউন্সেলিং দূরে থাক, ভার্চুয়াল জগতে শিক্ষক-বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করাও কঠিন। বরং ভার্চুয়াল জগতেই হতাশা তৈরি করতে সহায়ক হয়। এ পর্যায়ে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে শিক্ষার্থীদের জীবন। ফলাফলে আশঙ্কাজনক পরিস্থিতির দিকে আগাচ্ছি আমরা। পরিবারের সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব আত্মহত্যা ঠেকাতে সবচেয়ে বড় সমাধান। এমতাবস্থায় বিরূপ আচরণ করা বিরত থেকে মুক্ত আলোচনা করা জরুরি।

সৃজনশীল বিকাশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দিতে হবে উৎসাহ। গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তৈরি করতে হবে সচেতনতামূলক প্রচারণা। বৈশ্বিক বিপদের সময়ে শিক্ষার্থীর বেতন মওকুফ না করা, হল না খুলে পরীক্ষা নেয়ার মত চাপ থেকে শিক্ষার্থীকে নিস্তার দিতে হবে। শিক্ষার্থীকেও ভাবতে হবে জীবন এখানেই শেষ নয়। পরিবারের সাথে সৌজন্যমূলক আচরণের পাশাপাশি মেনে চলতে হবে নিজের সাচ্ছন্দতা। নির্দিষ্ট একটা বিষয়ে হেরে গেলেও ভবিষ্যৎ ভালোকিছুর হাতছানি দিয়ে ডাকছে। স্থায়ী সমাধানে আত্মহত্যা রোধ করতে ব্যক্তি কেন্দ্রীক পুঁজিবাদের ছোবল গুড়িয়ে দিতে রাষ্ট্রকেই দায়িত্ব নিতে হবে।

ভবিষ্যৎ অর্থনীতি টিকিয়ে রাখতে তরুণ প্রজন্ম গুরুত্বপূর্ণ। পারিবারের দায়িত্বশীল আচরণের সাথে সাথে সকলেই যেন পরিচিতজনদের সাথে সর্বোচ্চ যোগাযোগ রক্ষা করেন। অংশগ্রহণ করেন তরুণদের না বলতে পারা কথাগুলোয়। আত্মহত্যা আত্মসমর্পণের সামিল, চিরতরে হেরে যাওয়া। জন্ম থেকে লড়াই শুরু হয় হেরে যাওয়ায় জন্য নয়।

লেখক: রাজনৈতিক কর্মী ও বিশ্লেষক


সর্বশেষ সংবাদ