শতবর্ষে পা দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এই হাল

  © টিডিসি ফটো

স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে প্রথম স্থান অধিকারী একজন ও পিএইচডি ডিগ্রিধারী পাঁচ প্রার্থীকে বাদ দিয়ে অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের একাডেমিক ফলাফলে চতুর্থ ও দশম স্থানে থাকা দুজনকে নিয়োগের সুপারিশ চূড়ান্ত করা হয়েছে। Would you believe? Such a shame!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক নিয়োগের জন্য গত ফেব্রুয়ারীতে নিয়োগ বোর্ডের সভা হয়। প্রভাষক/সহকারী অধ্যাপক পদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত পূর্ণ করে এমন অনেকেই দরখাস্ত করে। তৎকালীন পত্রিকার রিপোর্ট অনুসারে যারা দরখাস্ত করেছিলেন তাদের অনেকেরই পিএইচডি ছিল।

যেমন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস থেকে পিএইচডি করা একজন যার প্রকাশনা সংখ্যা ৪, যুক্তরাজ্যের কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করা একজন যার প্রকাশনা সংখ্যা ৯, ডেনমার্কের কোপেন হেগেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করা একজনের প্রকাশনা সংখ্যা ৬ আর অন্যজনের প্রকাশনা সংখ্যা ৪!

এদের কাউকে না নিয়ে নিয়েছে যাদের তাদের কারো পিএইচডি নেই। এমনকি এছাড়া অনার্স-মাস্টার্সে ফার্স্টক্লাস ফার্স্ট হওয়া প্রার্থীকেও বাদ দিয়ে অপেক্ষাকৃত কম ভালো ফলাফল করাদের নিয়োগ বোর্ড নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছিল। এইটা নিয়ে পত্রিকায় রিপোর্ট হলে এই নিয়োগ সিন্ডিকেটে তখনি পাশ না করে পুনঃমূল্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়। শুনলাম সেই পুনঃমূল্যায়ন নাকি সম্প্রতি শেষ হয়েছে এবং পূর্বের নিয়োগ বোর্ডের সুপারিশ বহাল রেখেছে এবং তা সিন্ডিকেটে নাকি পাশও হয়ে গেছে। মাঝখান থেকে যারা নিয়োগ পেল তাদের ৮টি মাস খোয়া গেল।

কল্পনা করুন ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস, কার্ডিফ, কোপেন হেগেনের মত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করে এসেও চাকুরী পেল না। পিএইচডি ব্যতীত ভারতের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন শিক্ষক হওয়া সম্ভব না। আর আমরা পিএইচডি ওয়ালা পেয়েও নিলাম না। পিএইচডিবিহীন যাদের নেওয়া হলো পরবর্তীতে তাদের পিএইচডির জন্য পূর্ণ বেতনে ছুটি দিতে হবে। এর ফলে কেউ যদি ফিরে না আসে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকা গচ্চা যাওয়ার রিস্ক আছে। আবার কারো কারো কোনদিন পিএইচডি না হওয়ারও রিস্ক থাকে। কারণ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স পাশ করেই প্রভাষক হিসাবে নিয়োগ পেলে অন্তত ১ বছরের মধ্যে পিএইচডি করতে বিদেশে যেতে পারবে না।

এই ১ বছরের মধ্যে তাকে এত এত কোর্স পড়ানোর লোড দেওয়া হবে যে সে জিআরই/টোয়েফল ইত্যাদি দিয়ে পিএইচডি করতে যাওয়ার সময় পাবে না। আবার এর মধ্যে রাজীনীতিতে ঢুকে দলান্ধ হয়ে যাওয়ার রিস্ক থাকে।

কত বড় অন্যায় যে বিশ্বের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করে এসেও চাকুরী পেল না। এই না পাওয়ার কারণে এখন যারা দেশের বাহিরে পিএইচডি করছে তাদের কাছে একটা বার্তা যায় যে পিএইচডি করে দেশে ফিরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরী পাওয়া দুরূহ হবে। সেই জন্যই আমাদের অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী পিএইচডি করার পর আর দেশে ফিরতে চায় না। এইভাবেই আমরা জোর করে ব্রেইন ড্রেইনের ব্যবস্থা করেছি। এমনি এমনিই কি আর বিশ্ব রেঙ্কিং-এ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান নিচে নামছে?

আগামী ৩০-৩৫ বছর যত ছাত্রছাত্রী আসবে তাদেরকে ভালো শিক্ষক পাওয়া থেকে বঞ্চিত যারা করল তাদের কি বিচার হবে? শতবর্ষে পা দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এই হাল।

লেখক: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়