০১ জানুয়ারি ২০২১, ০৯:৫৯

নতুন বছরে করোনামুক্ত পৃথিবীর প্রত্যাশা

লেখক  © টিডিসি ফটো

নতুন বছর ২০২১। কিন্তু বিদায়ী বছর ২০২০ সাল সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে বেশি দু:খের বছর। বিশ্ববাসী কখনোই এই বছরটিকে ভুলবেনা, ভুলতে পারবেনা। ভোলা সম্ভব হবেনা। কেমন ছিল বিদায়ী বছর? ভাবতেই আঁতকে উঠি! বিশ্বজুড়ে দুর্যোগের শুরু বছরের শুরুতেই। প্রাণসংহারি ভাইরাস করোনায় গোটা বিশ্ব লণ্ডভণ্ড হয় বছরজুড়ে। এমন দুর্যোগকাল কেউ কখনো দেখেনি।

চীন থেকে শুরু হয়ে গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস। চোখের পলকেই যেন সবকিছু তছনছ হয়ে পড়ে! মানুষের সব পরিকল্পনা, স্বপ্ন ভেস্তে যায়। গৃহবন্দী হতে হয় বিশ্বের প্রায় সকল মানুষকে। এখনো থামেনি করোনার ঝড়। ভ্যাকসিন আবিষ্কারের দোরগোড়ায় পৌঁছালেও শতভাগ নিশ্চয়তা এখনো দিতে পারছেনা কেউ। কোন কোন দেশে ভ্যাকসিন নেওয়াও শুরু হয়েছে। নতুন বছরে যা আরো বাড়তে পারে।

ভ্যাকসিন গ্রহণের পাশাপাশি মাস্ক পরিধানসহ কঠোর স্বাস্থবিধি মানার কথা বলছেন বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এবং চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা। এরপরও এখনো প্রায় প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বাড়ছে মৃত্যুহার। কোটি কোটি মানুষ আক্রান্ত হয় এই করোনায় (কোভিড-১৯)। ২০ লাখের কাছাকাছি মৃত্যুর সংখ্যা। বিশ্ব পরিণত হয় মৃত্যুপুরীতে! এতবড় একটা সংকট পৃথিবীতে যে আসবে সেটা কেউ আঁচই করতে পারেনি। পারেনি ধারণাও করতে।

পৃথিবী সময়ে সময়ে বহু ক্রান্তিকাল অতিক্রম করেছে। উৎরেও গেছে মানুষ। কিন্তু এবারের কঠিন সময় পার করা সত্যিই দু:সাধ্য ও কষ্টকর। এক করোনা মানুষের জীবনধারা পাল্টে দিয়েছে। ধর্মীয় আচার, অনুষ্ঠান এমনকি পবিত্র কাবা ও মসজিদে নববীতে নামাজ আদায় বন্ধ ছিল অনেকদিন। মুহূর্তেই শাটডাউন পৃথিবী! বিশ্বের প্রায় সব পর্যটন স্পট, নামীদামী হোটেল-মোটেল, শপিংমল বন্ধ থেকেছে। কখন স্বাভাবিক অবস্থায় পৃথিবী ফিরবে তা আদৌ কেউ বলতে পারেনা।

করোনার কঠিন সময়ে বিশ্বের অনেক দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থার করুণ অবস্থা দেখা গেছে। ছিলনা চিকিৎসকের পর্যাপ্ত সুরক্ষা সামগ্রী, হাসপাতাল কিংবা প্রয়োজনীয় পথ্য। এমনকি করোনার বাইরে অন্য রোগের চিকিৎসা পেতেও মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। উন্নত দেশগুলোতেও সংকট পরিলক্ষিত হয়। ফলে চিকিৎসকসহ বহু মানুষের প্রাণ গেছে। বলতে গেলে আধুনিক সকল চিকিৎসা ব্যবস্থা করোনার কাছে প্রচণ্ড রকমের মার খেয়েছে। দিয়েছে বড় ধরণের ঝাঁকুনি। অতি উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা গড়ে তোলা ছাড়া কোন উপায় নেই।

করোনায় বিপর্যস্ত হয়েছে তাবৎ বিশ্বের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। জাতিসংঘ বিশ্বব্যাপী খাদ্যসংকটের আশংকা প্রকাশ করেছে। চাকরি ও অর্থ উপার্জনের পথ রুদ্ধ হতে পারে বহু মানুষের। বাড়তে পারে বেকারত্বের হার। অর্থ ও খাদ্যসংকটের কারণে বিশ্বের দরিদ্র রাষ্ট্রগুলোতে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে- এমন আশংকাও করা হচ্ছে।

এই করোনার কারণে বিশ্বজুড়ে ভেঙ্গে পড়েছে শিক্ষাব্যবস্থা। দীর্ঘসময় ধরে বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। শিক্ষাবর্ষ পাল্টাচ্ছে, সব ধরণের পরীক্ষা বাতিল করতে হয়েছে। যেন এক অনিশ্চিত গন্তব্যে যাত্রা! যদিও ফেসবুক, অনলাইনে ক্লাস নিয়েছেন শিক্ষকরা।
করোনার কারণে শিশু-কিশোররা সবচেয়ে বিষাদের সময় পার করেছে। খেলতে, ঘুরতে পারেনি তারা। স্কুল বন্ধ, তার উপর ঘরে থাকতে থাকতে জীবন তাদের একেবারে পানসে হয়ে যায়! দম বন্ধ হয়ে আসার মতো পরিস্থিতি। টিভি, স্মার্ট মোবাইলেও তাদের আর মন ভরেনি। বাইরে যাওয়ার জন্য আকুতি ছিল সর্বদা। যদিও বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা হচ্ছে।

করোনাভাইরাস বিস্তারের পেছনে পরিবেশ ধ্বংসকে দায়ী মনে করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে বনভূমি নষ্ট, পাহাড় কাটাসহ সবুজ অরণ্য উজাড় করার কারণে করোনা তার উপযোগি পরিবেশ পেয়েছে। যেখানে তার বিচরণ খুব সহজ হয়েছে। বিশ্বের ধনীদেশসহ সব দেশকে সবুজ প্রকৃতি রক্ষার ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে- এমন তাগিদ দিয়েছে করোনা।

কঠিন এই দু:সময় কখনোই যেন আর না আসে। না আসে যেন বিষাদে ভরা কোন বছর। হয়তো আমাদের অবিচার, অনাচার আর নীতি-নৈতিকতাহীন কর্মকাণ্ডের ফলও হতে পারে করোনার এমন ছোবল। অনেক হয়েছে আর না, সংশোধন আমাদের হতেই হবে। ফিরে আসতে হবে সব ধরণের জোর, জুলুম থেকে। মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্ববোধের প্রসার ঘটাতে হবে। নিরীহ ও অসহায় মানুষের ব্যাপারে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। বাড়িয়ে দিতে হবে সহযোগিতার হাত। রণসজ্জা নয়, পৃথিবীকে সুরক্ষার সরঞ্জাম তৈরি করতে হবে। পরাশক্তিগুলোকে যে কোন আতংক ও যুদ্ধাবস্থা তৈরি করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

ইতিহাসের এই কঠিন সময়টি যেন আমরা দ্রুতই পার করে আবারো আগের পৃথিবীতে ফিরতে পারি সেজন্য নববর্ষে প্রভূর কাছে প্রার্থনা করছি। নতুন বছরে করোনামুক্ত পৃথিবীর প্রত্যাশা সব মানুষের।

 

লেখক: শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক