আমি ভিসি হলে ভিসি বাসভবন ভেঙে লাইব্রেরি করতাম
সংবাদে দেখলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি নামে খ্যাত (যেই স্থাপনাটি বাংলাদেশের রাজনীতি ও সংস্কৃতির সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে) স্থাপনাটি ভেঙে ২০২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি উদযাপনের আগেই একটি আধুনিক ভবনে রূপান্তর করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
আচ্ছা প্রায়োরিটি নামক শব্দটির সাথে কি আমরা পরিচিত নই? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায়োরিটি কি? একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধানতম স্থাপনার অন্যতম হলো লাইব্রেরি ভবন। সাধারণত লাইব্রেরি ভবনটি সব বিশ্ববিদ্যালয়েই বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে এর স্থাপত্য নকশা তৈরি করে করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিটি দেখলে প্রথমত এটিকে কোন লাইব্রেরিই মনে হয় না। এর স্থাপত্য নকশাও দৃষ্টিনন্দন নয়। তাছাড়া এটি যখন নির্মিত হয়েছিল তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংখ্যা ছিল বড়জোর ৪ হাজার আর শিক্ষক সংখ্যা বড়জোর ২০০।
বর্তমানে এর ছাত্রসংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার ছুঁই ছুঁই আর শিক্ষক সংখ্যা প্রায় ২০০০। অর্থাৎ ছাত্র সংখ্যা বেড়েছে ৯ গুণেরও বেশি আর শিক্ষক সংখ্যা বেড়েছে ৮ গুণেরও বেশি। অথচ লাইব্রেরির আকার, বইয়ের সংখ্যা, জার্নালের সংখ্যা, পাঠকদের বসে পড়ার স্থান কিন্তু একটুও বৃদ্ধি পায়নি। অথচ আবাসিক হলগুলোতে গণরুম থাকায় হলে পড়ার পরিবেশ না থাকায় লাইব্রেরিতে পড়ার চাহিদা বেড়েছে অনেক যার স্বাক্ষর পাওয়া যায় সকালবেলা লাইব্রেরি খোলার অনেক আগেই ব্যাগ দিয়ে বিশাল লাইনে অপেক্ষা করা দেখে।
তাই এই ভবন ভেঙে বা নতুন কোন স্থানে নতুন একটি লাইব্রেরি ভবন করা অতি জরুরি। এত জরুরি বিষয় বাদ দিয়ে কেন টিএসসি ভবন ভেঙে অতি দ্রুততার সাথে একটি নতুন স্থাপনা তৈরি করা হবে আমার বলদ মাথায় ঢুকছে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রচুর অর্থ ব্যয় করে যা আমার দৃষ্টিতে অপচয়। নীলক্ষেতের মোড়ে বিশ্ববিদ্যালয় গেট করা কি প্রায়োরিটির মধ্যে পরে? ১৪টি জার্নাল প্রকাশ করে তাদের প্রিন্টেড ভার্সন শিক্ষকদের মাঝে বিনামূল্যে বিলি কি প্রায়োরিটির মধ্যে পরে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে যে বিশাল খরচে বাজেট করা হয়েছে সেখানে কেন একটি নতুন লাইব্রেরি ভবন নির্মাণ প্রায়োরিটি পেল না তা সত্যিই আশ্চর্যের বিষয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোথাও যদি এয়ার কন্ডিশনিং বসাতে হয় তাহলে সবচেয়ে বেশি প্রায়োরিটি পাওয়া উচিত বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি। এতে ছাত্রছাত্রীরা আরামে মনোযোগ দিয়ে পড়াশুনা করতে পারতো এবং বইগুলো যত্নে থাকতো। অথচ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে সেটি হয়নি। এখনো এটি সেন্ট্রাললি এয়ারকন্ডিশনড করা হয়েছে কিনা আমার জানা নাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিনির্ধারকরাই যদি প্রায়োরিটি নির্ধারণে ভুল করে তাহলে অন্য প্রতিষ্ঠানকে কি দোষ দেওয়া যায়?
আমি যদি ভিসি হতাম তাহলে উপাচার্যের বাসভবন ভেঙে ওখানেই করতাম লাইব্রেরির জন্য বিশাল স্থাপনা। উপাচার্যের থাকার জন্যতো প্রাসাদ লাগে না। উন্নত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকেতো খোদ ছাত্র শিক্ষকরাই চিনে না। আমি বরং একটি মনোরম বহুতল ভবন করতাম সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রো-ভিসি ও বিভিন্ন হলের প্রভোস্টদের থাকার ব্যবস্থা করতাম। বর্তমানে ভিসি, প্রো-ভিসি, কোষাধ্যক্ষ ও প্রভোস্টদের জন্য স্বাধীন বাংলো আছে। একি রাজকীয় ব্যবস্থা। শিক্ষকতার সাথে এইসব রাজকীয় ভাব যায় না।
লেখক: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়