উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে হসপিটাল ফার্মাসিস্ট নিয়োগ সময়ের দাবি
ফার্মাসিস্ট হলেন একজন নিবন্ধিত পেশাদার ব্যক্তি যিনি ওষুধ প্রস্তুত, বিতরণ এবং ওষুধ সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য প্রদান করে থাকেন। এছাড়া হাসপাতালগুলোতে কোন রোগের জন্য কোন ওষুধ প্রয়োজন, ঔষধের ডোজের পরিমান, খাবারের সঙ্গে ওষুধের প্রতিক্রিয়া, কোন ঔষধ খেলে কী ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া প্রভৃতি বিষয়গুলো নির্ণয় করে থাকেন।
বয়স, ওজন, লিঙ্গ ও শারীরিক পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রত্যেক রোগীর জন্য উপযুক্ত ডোজে ওষুধ ব্যবহার ও নিশ্চিতকরণ করতে পারেন কেবল হসপিটাল ফার্মাসিস্টরাই।
একজন ফার্মাসিস্ট ওষুধ শিল্পে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকেন। যেমন: গুণগত মান নিশ্চিত করা, গবেষণা করা, উৎপাদন ও সুষ্ঠু বিতরণ প্রভৃতি। অর্থাৎ ওষুধশিল্পে আমূল পরিবর্তন হয়েছে এই ফার্মাসিস্টদের হাত ধরেই।
দেশের চাহিদা মিটিয়ে ১৮২টি ওষুধ কোম্পানি এখন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ওষুধ রপ্তানি করছে। শুধু ২০১৮-১৯ অর্থবছরেই ঔষধশিল্প থেকে ১৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছে।
দেশের এই বিশাল অর্থনৈতিক মেরুদণ্ডের কারিগর হলেন আমাদের ফার্মাসিস্টরা। কিন্তু দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে নিয়োগের ব্যবস্থা না থাকায় স্বাস্থ্যখাত নিয়ে নানাবিধ প্রশ্নের কমতি থাকছে না।
প্রেসক্রিপশন হল ডাক্তার কর্তৃক ফার্মাসিস্টের প্রতি ওষুধ তৈরি এবং ব্যবহারের একটি লিখিত নির্দেশনা। তার মানে ডাক্তার প্রেসক্রিপশন লিখবেন ফার্মাসিস্টকে উদ্দেশ্য করে। ফার্মাসিস্ট প্রেসক্রিপশন পড়ে সে ওষুধের সকল প্রয়োজনীয় তথ্য রোগীকে বুঝিয়ে দিবেন। প্রেসক্রিপশন বিহীন ওষুধ ক্রয়-বিক্রয় রহিতকরন, এন্টিবায়োটিকের অপ্রয়োজনীয় ও অপরিকল্পিত ব্যাবহার, অপরিমিত ও মাত্রাতিরিক্ত ওষুধ সেবনে ওষুধের কার্যকারীতা হ্রাস, ওষুধের কোর্স পূরণের প্রয়োজনীয়তাসহ ওষুধ গ্রহণ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিকরণে “হসপিটাল ফার্মাসিস্ট” এর বিকল্প নেই।
দেশের হাসপাতালগুলোতে ডাক্তার, নার্সদের পাশাপাশি ফার্মাসিস্ট থাকার কথা থাকলেও স্বাধীনতার ৪৯ বছর পরও আমরা এ সংস্কৃতিটা চালু করতে পারিনি। ডাক্তার আর নার্সদের মাধ্যমে জোড়াতালি দিয়ে ফার্মাসিস্টদের কাজ খুবই অল্প পরিসরে চালিয়ে নেয়ার ফলে রোগীরা সঠিক, যথার্থ ও সময়োপযোগী চিকিৎসা থেকে বরাবরই বঞ্চিত হচ্ছেন।
উন্নত বিশ্বের স্বাস্থ্যসেবা সম্পাদন করেন ডাক্তার, ফার্মাসিস্ট ও নার্সদের সমন্বয়ে। তাই তাদের স্বাস্থ্যসেবার মান অতি উচ্চতায় পৌছাতে পেরেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসারে, বিশ্বের ফার্মাসিস্টদের ৫৫% কাজ করবেন 'কমিউনিটি ফার্মাসিস্ট' হিসেবে, ৩০% ফার্মাসিস্ট কাজ করবেন হাসপাতালের চিকিৎসাসেবায়, ৫% কাজ করবেন সরকারি সংস্থায়, ৫% শিক্ষা কার্যক্রমে এবং ৫% কাজ করবেন কোম্পানির ওষুধ প্রস্তুতিতে।
অথচ বাংলাদেশের ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ ফার্মাসিস্টরা কাজ করছেন ওষুধ কোম্পানিতেই! নেই কোনো হাসপাতাল বা কমিউনিটি ফার্মাসিস্ট! ফলে রোগীর স্বাস্থ্যসেবা আজও অবহেলিত।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসারে প্রতি ১ হাজার মানুষের জন্য চাই ১ জন করে ডাক্তার ও ফার্মাসিস্ট। দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে এখন ৭০ হাজারেরও বেশি ডাক্তার কর্মরত রয়েছেন। অথচ একজনও ফার্মাসিস্ট নেই।
দেশের দক্ষ ফার্মাসিস্টদের উন্নত দেশগুলোর মতো সরাসরি স্বাস্থ্যসেবায় যুক্ত করা গেলে চিকিৎসাসেবার মানকে উন্নত ও কার্যকর করার পাশাপাশি উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব। তাই উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হসপিটাল ফার্মাসিস্ট নিয়োগ সময়ের দাবি।
লেখক: শিক্ষার্থী, ফার্মেসী বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।