পরীক্ষার কথা বলে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করা যাবে না
বাংলাদেশে করোনাভাইরাস বা কভিড-১৯ এর সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকেই সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীদের সেশনজট এড়াতে তথা চাকরির বাজারে সঠিক সময় পৌঁছে দিতেই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে তাদের শিক্ষাকার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, অনলাইনে সেমিস্টারের শেষ পর্যায়ে অর্থাৎ পরীক্ষার পড়াশোনা শেষ হওয়ার পথে।
এজন্য সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরো কিছু বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের পরীক্ষা নেয়ার সময়সূচি ঘোষণা করেছে, যা সময়োপযোগী। কিন্তু শিক্ষার্থীদের নিজ ব্যবস্থাপনায় থাকার কথা বলা হয়েছে, যেটা একেবারেই অযৌক্তিক। গত এক দেড় দশকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যবিদ্যালয়ে সেমিস্টার বা র্টাম পদ্ধতি চালু রয়েছে যার ফলে তেমন কোনো ধরনের সেশনজট নেই। একইসাথে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় চার বছরের অর্নাস চার বছরে হচ্ছে। এক বছরের মাস্টার্স এক বছরে হচ্ছে।
একদিকে যেমন চাকরির বাজারে তাদের বয়স থেমে থাকছে না, আবার অন্যদিকে বিভিন্ন প্রতিযোগীতামূলক চাকরির সার্কুলার হচ্ছে। যদিও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রেখেছে। তবে, মোদ্দাকথা হলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এখনো এত ভালো সক্ষমতা তৈরি হয়নি যে সব ধরনের অ্যাসেসমেন্ট ও ফাইনাল পরীক্ষাগুলো অনলাইনে নেবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ক্লাস টেস্ট, টার্ম পেপার ও অ্যাসাইনমেন্টগুলো অনলাইনে নিলেও ফাইনাল পরীক্ষাটা সশরীরে নেয়ার কথা ভেবে রেখেছে। কিন্তু বাংলাদেশে শীতের মৌসুম শুরু হওয়ায় করোনার সেকেন্ড ওয়েব বা দ্বিতীয় ধাক্কা চলছে।
এজন্য এখনই পরীক্ষা নেয়ার কথা বলে শিক্ষার্থীদের কোনোভাবেই জিম্মি করা যাবে না। আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে এবং অবশ্যই আবাসিক হল গুলো খুলে দিতে হবে। কারণ আবাসনটা জরুরি, এক মাসের জন্য মেস বা রুম ভাড়া অনেক বাড়িওয়ালাই দিতে চাইবে না। সেখানে একমাস অগ্রিম ভাড়াতো দেওয়ায় লাগে। এছাড়াও আর্থিক অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের এখন কোনভাবেই নতুন মেসে সিট নেওয়া সম্ভব না। কেননা এমনিতেই করোনার এই মহামারীতে অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন, কেউ বা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।
এমতাবস্থায় বলা যায়, এক ধরনের আর্থিক সংকটে প্রায় সব মধ্যবিত্ত নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার। আর এখনই যদি এসব পরিবারের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দেওয়ার জন্য আবাসন ব্যবস্থা ঠিক করতে হয় তাহলে তাদের পরিবারে বাড়তি চাপ পড়বে। সুতরাং শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি এবং আবাসনের সঠিক ব্যবস্থা না করে পরীক্ষা নেয়াটা কখনোই উপযুক্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে না। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) একটা উদ্যোগ নিতে পারে। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজ ব্যবস্থপনায় আরো ভালো কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে, জাতির ভবিষ্যৎ শিক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা ডিসিপ্লিন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়