নারী-পুরুষ প্রতিযোগী নন সহযোগী হউন
বিশ্বের যা কিছু আছে কল্যাণকর, অর্ধেক করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর। সভত্য বিনির্মানে নারী-পুরুষের সহযোগিতাপূর্ণ সহাবস্থান উপহার দিয়েছে আজকের এই পৃথিবীকে। আজকের এই ইতিহাসকে। কিন্তু আমরা যদি একজন নারীকে একজন পুরুষের মুখোমুখি এবং একজন পুরুষ একজন নারীর মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিই তাহলে আমরা সেখানে যা ফলাফল পাবো সেটা মোটেও সুন্দর হবে না। কেননা, তাঁরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ স্থান থেকে সুন্দর নিজের স্থান থেকে তারা সমাজকে এগিয়ে নিতে ভূমিকা পালন করবে।
ভিন্ন ধরনের বস্তু যেমন, পাঁচটি আপেলের সাথে তিনটি কমলার যোগ বিয়োগ কিংবা তুলনা গাণিতিক এবং বাস্তবিকভাবে সম্ভব নয়, তেমনি একজন নারী আর পুরুষের তুলনায় কোনো সার্থক ফলাফল আশা করা নিতান্তই বোকামি। স্বাদ, পুষ্টিগত মান এবং বাহ্যিক আকারে আপেলের সাথে যেমন কমলার পার্থক্য এবং দুটিরই প্রয়োজন আছে তেমনিভাবে নারী-পুরুষ প্রত্যেকেই নিজ নিজ দিক থেকে সেরা। মুখোমুখি দাঁড় করানোর কোনো যৌক্তিকতা নাই।
প্রতিযোগিতার কথা যদি বলতে হয় তাহলে একজন নারী এবং একজন পুরুষ যদি একই ক্যাটাগরিতে বা একই ক্ষেত্রে কাজ করে সেক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা হতে পারে। তবে সেই প্রতিযোগিতা হতে হবে অবশ্যই সুস্থধারার প্রতিযোগিতা।
কেননা, কুরআনে বলা আছে-وَتَعَاوَنُواْ عَلَى الْبرِّ وَالتَّقْوَى'তোমরা সৎকর্ম ও তাকওয়ার কাজে একে অন্যকে সাহায্য-সহযোগিতা কর।' (সুরা মায়েদা : আয়াত ২)
হতে পারে সেটা মেধাবৃত্তি কোন প্রতিযোগিতা কিংবা কোন ব্যবসাভিত্তিক বা কোন উন্নয়নের কোন চিন্তা ভাবনা যেখানে দেশের উন্নয়ন হবে পৃথিবীর উন্নয়ন হবে পৃথিবীর সুন্দর হবে। কিন্তু আমরা যদি অন্যায়ের দিক থেকে হিসেব করতে চাই তাহলে আমরা দেখতে পাব পুরুষরা পৃথিবীতে বেশি অন্যায় করে। সৃষ্টির শুরু থেকেই সকল পুরুষ জাতিই নারী জাতি অপেক্ষা কিছুটা হিংস্র হয়ে থাকে। তারা আত্মরক্ষা, নিজের সম্পদ ও কাছের মানুষকে রক্ষা করার জন্য এটা করে থাকে। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না সকল পুরুষ জাতিই কালে কালে নারী ও শিশু রক্ষার জন্য হিংস্রতার প্রকাশ ঘটিয়েছে। বিপরীতভাবে অন্য একদল পুরুষ এগুলো হরণ করারও পরিকল্পনা করেছে। কিন্তু আমরা বর্বরতা থেকে অনেকটা পথ পারি দিয়ে আধুনিক ও সভ্য প্রাণীতে পরিণত হয়েছি। তাই এই বর্বরতা এই যুগে এসে কাম্য নয়। আর অপরদিকে পাল্লা দিতে গিয়ে যদি নারীরা অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয় তাহলে পৃথিবী আবার নতুন করে অন্যভাবে হয়ে উঠবে অসুন্দর, আমরা ফিরে যাবো সেই বর্বরতার মাঝে এবং দুর্নীতির পরিসর বেড়ে হবে দ্বিগুন।
একজন নারী একজন মা। জাতি গড়ার কারিগর যদি আদর্শবান হয় তাহলে এই জাতির পৃথিবী হবে আরে অনেক সুন্দর। তাইতো নেপোলিয়ন বোনাপার্ট বলেছেন, তুমি আমাকে শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাকে শিক্ষিত জাতি দিবো! শিক্ষিত, সভ্য জাতি গড়ার কারিগরকে যদি অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত করা হয় তবে দিনদিন আরো অসুস্থ হয়ে যাবে সমাজ।
সম্প্রীতি রাজশাহীর শহরে একজন তরুণীর প্রকাশ্যে সিগারেট খাওয়ার বিষয়টি ভাইরাল হয়েছে যা আমাদের সমাজের দৃষ্টিকোণ থেকেও দৃষ্টিকটু। যেখানে একজন যুবক তাকে বাধা দিয়েছিলেন৷ বিষয়টা নিয়ে মেতে উঠেছিল যুব সমাজ। বরাবরের মতোই তারা আলোচনা-সমালোচনায় ভরপুর রেখেছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। অনেকেই এর পক্ষে এবং বিপক্ষে তাদের নিজেদের মন্তব্য জানিয়েছেন। কিন্তু দৃষ্টিকটু দিকটা হল যখন কিছু তরুণী সিগারেট খাওয়ার বিষয়টার প্রতিবাদের নাম করে প্রকাশে মাদকদ্রব্যের বিজ্ঞাপন করেছে। পরে যার দ্বারা তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেমে ব্যাপকভাবে নিন্দার শিকার হয়েছে।
সিগারেট খাওয়া নারী-পুরুষ সবার জন্যই "না"। কেননা একজন লোক ধূপমান করলে পাশ্ববর্তী লোককে পরোক্ষ ধূমপানের স্বীকার হতে হয়, যা বিরক্তিকর।
পুরুষরা রাস্তায় কিংবা পার্কে সিগারেট খায় সেটা অবশ্যই নিন্দনীয় কিন্তু তাই বলে আপনিও নিন্দনীয় কাজে প্রতিযোগীতা করবেন সেটা নিশ্চয়ই মানানসই নয়। আপনি প্রতিবাদ হিসেবে অন্যায়ের আশ্রয় নিতে পারেন না। অন্যায় কখনও প্রতিবাদ হতে পারে না। আর পাবলিক প্লেসে তো একদমই নয়। আহত সমাজকে নিহত করার পায়তারা আছে এটা আর কিছুই হতে পারে না। ধুমপান নিজের জন্য যেমন ক্ষতি অন্যের জন্যও কমবেশী সমান ক্ষতি। পরোক্ষ্য ধূমপানেও স্বাস্থ্যঝুকি নেহাত কম নয়। আর তারপর যদি আইনের কথায় আসি তাহলে পাবলিক প্লেসে ধূমপান বেআইনি।
আইন অনুযায়ী, "জনপরিসরে বা উন্মুক্ত স্থানে ধূমপান নিষিদ্ধ। কেউ এমন স্থানে ধূমপান করলে অনধিক ৩০০ টাকা জরিমানা করার বিধান আছে। একই ব্যক্তি দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করলে তিনি দ্বিগুণ হারে দণ্ডিত হবেন।"
(ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫–এর ২(চ) ধারা অনুসারে পাবলিক প্লেস বলতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান; সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস; গ্রন্থাগার, লিফট, হাসপাতাল ও ক্লিনিক, আদালত, বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর, নৌবন্দর, রেলওয়ে স্টেশন, বাস টার্মিনাল, প্রেক্ষাগৃহ, প্রদর্শনী কেন্দ্র, থিয়েটার হল, বিপণিবিতান, রেস্টুরেন্ট, পাবলিক টয়লেট, শিশুপার্ক, মেলা বা পাবলিক পরিবহনে আরোহণের জন্য যাত্রীদের অপেক্ষার জন্য নির্দিষ্ট সারি, জনসাধারণের সম্মিলিত ব্যবহারের স্থান বোঝায়।)
পুরুষদেরকেও প্রকাশ্যে ধূমপান করা থেকে বিরত থাকার জন্য সচেতন করতে হবে। নারীরা যেহেতু সচরাচর ধূমপান করেনা সেক্ষেত্রে তাঁরা যাতে ভবিষ্যতে এই পথে পা না বাড়ায় সেই দিকে দেশের সচেতন মহলকে অবশ্যই ভূমিকা রাখতে হবে।
নারীরা পুরুষদের সাথে অবশ্যই প্রতিযোগিতা করবে। সেটা হবে সৎকর্মের প্রতিযোগিতা। বাঙলার নারীরা যেটা করেছিলো ৭১ এ। নারীদের সহায়তা আর অনুপ্রেরণা বিরাট ভূমিকা রেখেছিলো আমাদের মুক্তিযুদ্ধে। আর সৎকর্মের প্রতিযোগিতা-কে প্রতিযোগিতা না বলে সমাজ বিনির্মানে সহযোগিতা বলা-ই শ্রেয়।
লেখক: যন্ত্রপ্রকৌশল বিভাগ, হাবিপ্রবি