১১ ডিসেম্বর ২০২০, ১০:০১

শিক্ষার্থীদের আবাসিক সুবিধা দেওয়াই ঢাবি শতবর্ষের মূলমন্ত্র হওয়া উচিত

  © টিডিসি ফটো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার জন্মশতবর্ষ পালন করতে যাচ্ছে আর মাত্র কয়েকদিন পর। এটিকে উপলক্ষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রচুর কর্মকান্ড শুরু করেছে। অনেক কাজ, অনেক টাকা খরচ চলছে। এই বিশাল কর্মযজ্ঞের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল আক্রমণ ছাত্ররাই নেই। সঙ্গত কারণেই ক্যাম্পাসে কোন প্রাণচাঞ্চল্য নেই। প্রশ্ন হচ্ছে এই যে বিশাল অর্থ খরচ হচ্ছে তা কি কি খাতে হচ্ছে?

এর একটি খাত হলো গবেষণা প্রজেক্ট আহবান করে শিক্ষকদের মাঝে গবেষণা বরাদ্দ দেওয়া। প্রশ্ন হলো এই বরাদ্দ কাদের দেওয়া হবে? এটাও কি আমাদের ইউজিসির পোস্ট-ডক্টরাল ফেলোশিপ দেওয়ার মত হবে? সম্প্রতি আমাদের ইউজিসি ১০ জন অধ্যাপককে পোস্ট-ডক্টরাল ফেলোশিপ দিয়েছে যার সবাই অধ্যাপক এবং উনাদের দুইজন নাকি খুব শিগগির অবসরে যাবেন। কি আশ্চর্য! যাদের অধীনে জুনিয়র শিক্ষকরা (সহকারী অধ্যাপক বা জুনিয়র সহযোগী অধ্যাপক) পোস্ট-ডক করবে তারা নিজেরাই এখন পোস্ট-ডক ফেলো।

আমাদের দেশের একটা বড় সমস্যা হলো বয়সে বড়রাই সকল কিছু পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পায়। সব কিছুই হয় বয়সে সিনিয়রিটি ভিত্তিতে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের মত প্রতিষ্ঠানে মেধা এবং একমাত্র মেধাই হওয়ার কথা অগ্রাধিকার পাওয়ার শ্রেষ্ট ভিত্তি। আমাদের প্রমোশন নীতিমালা এমনভাবে করা হয়েছে যে কেউ কেবল আগে যোগদান করার কারণে মেধা দিয়ে তাকে ডিঙানো কঠিন। তবে রাজনীতি দিয়ে অতি সহজেই সম্ভব।

শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষে আরেকটি খাতে বিপুল পরিমানে বরাদ্দ চলছে সেটা হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান জার্নালগুলোর বিশেষ সংখ্যা বের করা আর প্রতিটা বিভাগ থেকে বই প্রকাশ করা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রায় ১৬টি জার্নাল প্রকাশিত হয়। এইসব জার্নালের প্রতিটি ইস্যু সংশ্লিষ্ট বিভাগসমূহের শিক্ষকদের বিনামূল্যে দেওয়া হয়। এটাইতো টাকার অপচয়। এই ইস্যুগুলো কেন সবাইকে বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে? এইগুলো লাইব্রেরিতে দেওয়া যেতে পারে। যেই শিক্ষকের প্রয়োজন সে লাইব্রেরিতে গিয়ে পড়ে নিবে।

আর বিশেষ প্রয়োজন হলে টাকা দিয়ে কিনে নিবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো এইসব রাবিশ জার্নাল প্রকাশ করা শিক্ষকদের গবেষণা মানের উন্নয়নের অন্তরায়। কারণ এইসব গার্বেজ জার্নালে আর্টিকেল প্রকাশ করে প্রয়োজনীয় প্রমোশন হয়ে শিক্ষকরা কেন ভালো গবেষণা করে আন্তর্জাতিক মানের পিয়ার রিভিউড জার্নালে প্রকাশ করবে? সেগুলো এখন আবার বিশেষ সংখ্যা বের করবে। মানে বিশেষভাবে অর্থ অপচয় করবে। এইসব জার্নালের পেছনে অর্থ ব্যয় না করে সেই টাকাটা গবেষণা খাতে, বিদেশী পোস্ট-ডক নিয়োগ খাতে, পিএইচডি ফেলোশিপ দেওয়ার খাতে ব্যয় করলে ঢের বেশি ভালো হতো।

তাছাড়া যেই দেশের ছাত্রছাত্রীরা তাদের ছাত্রাবাসে মানবেতর জীবন যাপন করে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে শতবর্ষের নামে এইসব অপচয় কি মানায়? এই শতবর্ষ উদযাপনে আমাদের মূলমন্ত্র হওয়া উচিত ছিল আমাদের ছাত্রছাত্রীদের একটি মোটামুটি উন্নত আবাসিক সুবিধা দেওয়া। আমাদের ছাত্রদের ভালো একটা জিমনাসিয়াম নাই, উন্নত সেন্ট্রাললি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত লাইব্রেরি ও ক্লাসরুম নাই, ভালো মানের ব্ল্যাক বোর্ড নাই, ভালো মানের টয়লেট ফ্যাসিলিটি নাই, ক্যাফেটেরিয়া নাই। এইসবের দিকে তেমন মনোযোগ দেখছি না।

বিশ্ববিদ্যালয় এখন বন্ধ। অনেকের কোর্স শেষ বা প্রায় শেষ। কিভাবে বিশেষ বিবেচনায় শুধু নির্দিষ্ট একটি বর্ষের ছাত্রদের জন্য আবাসিক হলে খুলে দিয়ে পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ দেখছি না।

লেখক: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়