আত্মহত্যা কখনোই জীবন যুদ্ধের সমাধান নয়
খবর, পত্রিকা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সব জায়গায় একটাই শব্দ বড় বড় করে লেখা থাকে 'আত্মহত্যা'। চারিদিকে শুধু হতাশার মিছিল যেন। চেনা পরিবেশ মুহূর্তেই কেমন অচেনা হয়ে ওঠে। আত্মহত্যাই কি সব সমস্যার সমাধান? কি দেয়নি সমাজ আমাদের? কি বা এতো অপ্রাপ্তি? এতো হতাশা কেনো? এতো মানুষের ভিড়েও কেনো আমরা এতো নিঃস্ব?
আত্মহত্যা কখনোই জীবন যুদ্ধের সমাধান নয়। বেঁচে থাকতে হলে যুদ্ধ করতে হবে। হাজারো হতাশার গ্লানি নিয়ে হারিয়ে যাওয়া কখনোই সমস্যা থেকে বাঁচার উপায় হতে পারেনা।
সমাজকে আমি কখনোই বুঝতে চাইনি,আসলে বুঝতে পারিনি! একটা পরিবার থেকে যখন আস্তে আস্তে জীবনের বৃদ্ধি ঘটতে থাকে বৃদ্ধি ঘটতে থাকে হাজারো প্রতিকূলতার। একটা শিশু যখন প্রথম অক্ষরজ্ঞান শিখতে শুরু করে তখন থেকেই তাকে শিখানো হয় বড় হয়ে তাকে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে। যখন সে শিশুটি বিদ্যাপীঠে যাওয়া শুরু করে তাকে বুঝিয়ে দেওয়া হয় তোমাকে ক্লাসে প্রথম আসতে হবে। শিশুটি যখন কৈশোর এ পা রাখে তখন তাকে পানির মতো পান করতে হয় এখন সে বড়ো হয়ে গেছে, মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক সকল ক্ষেত্রেই তাকে গোল্ডেন এ প্লাস পেতে হবে। তারপর শুরু হয় জীবনের বড়ো যুদ্ধ ভর্তি যুদ্ধ। কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এ সুযোগ না পেলে তো জীবনটাই শেষ। কিসের ছাত্র তুমি যে কোনো পাবলিকে পড়ার সুযোগই পেলে না! কি পড়াশুনা করেছো যে জাতীয় তে পড়তে হবে, ওমা! বাবার টাকা ধ্বংস করে বেসরকারিতে পড়ছো? নিশ্চই মাথায় কিছু নেই!
আমার পড়া আত্মহত্যার খবরগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই ছিল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর। কেন তারাতো সমাজ কথিত নিতান্তই মেধাবী যোগ্য ছিল, দেশের রত্ন ছিলো তাহলে এই সমাজ কেন তাদের বাঁচতে দিলোনা? তাহলে কি তারা সমাজ, পরিবারের চোখে যোগ্য ছিলনা? নাকি তাদের প্রাপ্তি যথেষ্ঠ ছিলোনা?
আগেই বলেছি আমি বরাবরই সমাজকে বুঝিনা। কারণ সমাজ আমাদের বলবে উপরে ওঠো জীবনকে উপভোগ করতে পারবে, উপড়ে ওঠার নেশায় এতই আকৃষ্ট তারা কখন পা মাটি থেকে এতটাই উপরে উঠিয়ে দেয় যে একবার হোচট খেলে বাঁচার সম্ভাবনাই থাকে না। হয়ত সেজন্যই জীবনে এতো প্রাপ্তি লাভের মাঝেও মনের অপ্রাপ্তি রয়েই যায়।
পরিবার কখনোই সন্তানের অমঙ্গল চায়না কথাটি যেমন ঠিক তেমনি পরিবার এর কারণেই হাজারো সন্তান আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। আপনার সন্তানকে সময় থাকতে বোঝার চেষ্টা করুন। আপনার সন্তান নাই বা হলো ডাক্তার নাই বা হলো উচ্চ পদস্থ কেও সে শিক্ষিত হলে কি খুব আত্মসম্মানের খোরাক যাবে? কেন আপনার সন্তানকে সমাজে বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করতে নিজের প্রাণ দিতে হবে কখনো কি ভেবে দেখেছেন? হাজারো ব্যস্ততার মাঝে কিছুটা সময় আপনার সন্তানকে দিন, তাকে বোঝার চেষ্টা করুন। সব সময় অতিরিক্ত শাসন সন্তানের মনে বিরূপ প্রভাব ফেলে। আপনার সন্তানকে তার হতাশার কথা বলার সুযোগ দিন। দিন শেষে আপনি অনাহারে থাকলে সমাজ আপনাকে অন্ন তুলে দেবে না, অন্নের জোগাড় আপনাকেই করতে হবে।
সহজ সাধারণ এবং স্বাভাবিক ভাবেই জীবনকে উপভোগ করুন, জীবন একটাই তাই ধোয়াশার পর্দা সরিয়ে দেখুন সম্ভাবনার দরজা না থাকলেও প্রিয়জনের ভালোবাসার দরজা খোলা৷ জীবনে প্রতিষ্ঠিত হাওয়াই একমাত্র লক্ষ্য হতে পারেনা, জীবনকে উপভোগ ও লক্ষ্য হওয়া উচিত।