১৪ নভেম্বর ২০২০, ০০:৪০

সাদ্দামের এক্সট্রাঅর্ডিনারি সবাই বুঝবে না

সাদ্দাম হোসেন  © ফাইল ফটো

সময়টা ২০০৫ সাল। আমরা তখন ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের মুসলিম ছাত্রাবাসে থাকি। অষ্টম শ্রেণিতে উঠার পর আমরা যখন নতুন বই পেলাম তখন সাদ্দাম (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক) কোথায় থেকে জানি একটা হিন্দু ধর্মের বই পেল এবং বই পাওয়ার সেই রাতেই সে বইটি পড়ে শেষ করল।

পরদিন সকালে ওর রুমে বসে আমরা কয়েকজন আড্ডা দিচ্ছিলাম। সেসময় আমি তাকে সেই বই থেকে কিছু প্রশ্ন করলাম। সকল প্রশ্নের উত্তর সে খুব সুন্দর ভাবেই দিল। বইটা থেকে অনেক কঠিন প্রশ্ন খোঁজার চেষ্টা করেও আমি তাকে থামাতে পারলাম না। বুঝলাম তার স্মরণশক্তি কতটা প্রখর। এরপর তাকে জিজ্ঞাসা করলাম এতোগুলা অন্য নতুন বই থাকতে তুই এই পাঠ্যক্রমের বাইরের বইটা পড়তে গেলি কেন? তার সহজ উত্তর জানার জন্য। আসলে সে যা পড়ত ছোট বেলা থেকেই সে সেটা জানার জন্য পড়তো।

একাডেমিক পড়াশুনা তাকে কখনো টানতো না। একাডেমিক পড়াশুনা করার ক্ষেত্রে তার বিশাল একটা অনীহা ছিল। সেটা নবম দশম শ্রেণিতে থাকা অবস্থায় আরও ভাল ভাবে বুঝতে পেরেছিলাম। সে মাঝে মাঝেই আমাকে বলতো এসএসসির পর হয়তো আমার আর পড়াশুনা করা হবে না।

বই চুরির ঘটনা আমাদের অনেকের জীবনেই হয়তো কমবেশি আছে। কবি লেখকদের আত্মজীবনীতেও বিষয়টির খুব সাক্ষাৎ মিলে। চিলিয়ান কবি ও কথাসাহিত্যিক রবের্তো বোলাইয়োঁ একগ্রন্থে বই চুরির সরল স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। সুকুমার রায়ের গল্পেও চিত্রায়িত হয়েছে বই চুরির আখ্যান।

সাদ্দাম হয়তো এখান থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই মাঝে মাঝে বই চুরি করতো। আমিও তার সঙ্গে থেকে মাঝে মাঝে ঠাকুরগাঁও হাজীপাড়ার পাবলিক লাইব্রেরিতে গিয়ে বই চুরি করি। অবশ্য ও যতটা নিয়মিত যায়তো আমার ওতটা যাওয়া হয়তো না। ও তখনি অনেক কঠিন কঠিন ভাষার বই পড়তো। যেগুলা আমরা হয়তো এখনো অনেকে পড়ে বুঝতে পারব না। মাইকেল, বঙ্কিম, রবীন্দ্রনাথের অনেক বই সে স্কুল লাইফেই পড়ে ফেলে। তাই তার ভাষাগত জ্ঞানের পরিধিটা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে। এর একটা ঝলক আমরা আমাদের স্কুলের বিদায় অনুষ্ঠানে দেখতে পেয়েছিলাম।

বাংলা এবং ইংরেজি দুই ভাষাতেই সাদ্দামের কবিতা লেখার স্বভাব ছিল এবং ও যা লিখতো অনেক দিন পরেও সে সেগুলো মুখস্থ বলতে পারতো। খুব বেশি অবাক হোতাম ওর কর্মকান্ড দেখে। মাঝে মাঝে খুব বেশি পাগলামি করতো। ওর পাগলামির ধরণ গুলা ছিল একটু ভিন্ন রকম। এই যেমন- কথা শেষ না করেই কল কেটে দেওয়া, এক কাপ চা খাওয়ার জন্য আরেক জেলা শহরে চলা যাওয়া আরো অনেক......।

যাইহোক তার মধ্যে একটা এক্সট্রাঅর্ডিনারি ব্যাপার আছে যেটা সবাই হয়তো বুঝবে না। রাজনীতি তাকে জীবনে কি দিবে না কোন কিছু কেড়ে নিবে সেটা সময়েই বলে দিবে। আমরা তার মেধার ঝলক অনেক জায়গায় দেখতে পেয়েছি। সামনে আরো পাব এই কামনা করি। শুভ জন্মদিন বন্ধু। শুভ কামনা নিরন্তর।

লেখক: সাদ্দামের স্কুল জীবনের সহপাঠী