কাঞ্চনজঙ্ঘা ফেসবুক আর হুজুগ!
যখন থেকে বুঝতে শিখেছি তখন থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখি, পাহাড় সৃষ্টির সময় থেকেই পঞ্চগড় থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়, আশে পাশে আরো দুর পর্যন্ত দেখা যায়। ছোট বেলায় বাবার ভেসপার সামনে বসে দাদু বাড়ি যেতে যেতে দেখতাম, বাবা বলেছিল ওটা হিমালয় পর্বতমালা। খুব স্বাভাবিক ব্যাপার এটা।
তবে এটা দেখা পাওয়া ও না পাওয়ার জন্য সূর্যের অবস্থান ও আলোর প্রতিফলন দায়ী। শীতে সূর্য দক্ষিণ দিকে হেলে পড়ে। ফলে পাহাড়ে আলো তীর্যকভাবে পড়ে এবং প্রতিফল হয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘাসহ অন্যান্য শৃঙ্গগুলো দেখা যায়। আমি যখন থেকে ডিজিটাল ফটোগ্রাফি করি তখন থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার ছবি তুলি। ২০১০ থেকে ফেসবুকে ২০১২ সালের দিকে যখন দিলাম তখন এটা হুজুগ বলে উড়িয়ে দেয়া হলো। রীতিমতো যুদ্ধ চললো অবুঝদের সাথে তিন চার বছর প্রতি সিজনে। এটা বোঝানোর জন্য যে পঞ্চগড় থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়।
এখন এত দিন পর মোটামুটি ব্যাপারটা প্রতিষ্ঠিত। এখন প্রচুর পর্যটক আসে পঞ্চগড়ে পর্বত দেখা জন্য। আসলেই যে দেখা যায় এমন না। ওই যে বললাম সব আবহাওয়ার খেলা। ব্যাপারটা অনেক রোমাঞ্চকর। কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা গেলেই আমি ছুটে যাই তেতুলিয়া। উদ্দ্যেশ্য শুধু ছবি তোলা নয়। ব্যাপারটাকে অনুভব, করা উপভোগ করে। সমতল থেকে এমন একটা পর্বত দেখা যায় এটা অত্যন্ত দারুণ একটা ব্যাপার। ঘুরে বেড়াই মাঠে, বনে, জংগলে। মিশে যাই প্রকৃতি ও মানুষের সাথে। এমন সুবিশাল পর্বতশৃঙ্গগুলো দেখে মনের জায়গা চওড়া হয়। এটা একটা নেশা।
ইদানীং কয়েকদিন থেকে দেখা যাচ্ছে কাঞ্চনজঙ্ঘা। আমি চারদিন থেকে তেতুলিয়ায়। আমি প্রকৃতির সাথে মিতালি করতে ব্যস্ত। ফেসবুক তেমন ঘাটিনি। অনেকের সাথে দেখাও করতে পারিনি। সে জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। গত দু’দিন থেকে দেখছি পঞ্চগড় থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়- এটা নিয়ে ট্রল শুরু হয়েছে। ট্রল ব্যাপারটা নিতান্ত হালের, এটার শাব্দিক অর্থ কি জানি না। কিছু পোস্ট দেখলাম নোয়াখালী থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাচ্ছে, রাজশাহী থেকে নাকি দেখা যাচ্ছে। কেও টিএসসি থেকে চা খেতে খেতে দেখছেন। কয়েকটি ছবিতে আমার ছবি ম্যানুপুলেশন করে ব্যাকগ্রাউন্ড এ বসানো। কেন ভাই?
এমন অসাধারণ একটা নেচারাল ফেনোমেনন নিয়েও কেন ট্রল করতে হবে? কেন ছবি বিকৃত করতে হবে? সব বিষয় নিয়ে কেন হাসি ঠাট্টা? সব কিছু নিয়ে ট্রল করা এটা এক ধরনের অসুস্থতা।
মানুষ মরে গেলেও ট্রল করেন, রোগ নিয়ে ট্রল করেন, শোক নিয়েও ট্রল করেন। রিয়েল লাইফ থেকে সবাই কেন দূরে চলে যাচ্ছে? ফেসবুক কেন্দ্রীক ঘোরাফেরা খাওয়া-দাওয়া, ব্যাক্তিগত শো অফ করে কি মজা পান? বাস্তব জীবনে কি বৈচিত্রের অভাব? প্রকৃতি কি কৃপণতা করেছে কখনো?
আর একটা ব্যাপার উঠতি বয়সের ছোট ভাইয়েরা অতি উৎসাহী হয়ে রাত বিরাতে বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়ছে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে, তাতে সমস্যা নেই। কিন্তু মাঝেমধ্যে হই হই করে, জোরে বাইক চালিয়ে মানুষের গালি ছাড়া কিছু পাওয়া যায় না। আজকেও দুইজন গুরুতর এক্সিডেন্ট করেছে। ফেসবুকে লাইক না গুণে সম্পর্ক গুনুন, বাস্তব বন্ধু গুনুন, শিশির ভেজা ঘাষে পদচিহ্ন গুনুন। কয়টা পাখি দেখলেন তা গুনুন, শান্তি পাবেন।
কয়েকদিন থেকে এই ব্যাপারটা নিয়ে অতিরঞ্জিত কান্ডকারখানা করছে লোক জন। ভাই আসেন দেখেন, একটা গাছের নিচে বসে পড়েন, দেখেন কত সুন্দর সৃষ্টি, কত অদ্ভুদ এ পর্বত মালার সৌন্দর্য। ক্ষণে ক্ষণে বদলে যায় দৃশ্যপট। সাথে তেতুলিয়া অসাধারণ গ্রামীণ জীবনযাত্রা।
এটা ফিল করার ব্যাপার। তা না করে ফেসবুকে হাউকাউ। দশটা গল্প না বলা ছবি না দিয়ে একটা গল্প বলা ছবি দিন। এভাবে ব্যাপারটা খেলো করে দিয়েন না। নিজেকে জাহির করার চেষ্টা না করে কাজ করুন সাফল্য ধরা দেবেই। জীবন খুজে নিন। জীবন মাঠেই, জীবন ঘাটেই। ফেসবুক এ নয়।