ধর্ষকসহ সকল অপরাধীর কঠিনতম শাস্তি হোক
সারাদেশে যেন ধর্ষণের উৎসব চলছে! সিলেট, চট্টগ্রাম, নোয়াখালীর ধর্ষণকান্ড ও নারী নির্যাতনের বিভৎস দৃশ্যগুলো মানুষকে ক্ষুব্ধ করে তুলছে। একের পর এক ঘটে চলা এসব দুষ্কর্মের কারণে আতংক ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে সাধারণ মানুষ।
বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা ও প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থাকার কারণে অপরাধ করেও অপরাধীর কোন অনুশোচনা নেই। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানুষ এসব ধর্ষকদের প্রকাশ্যে ফাঁসির দাবি জানাচ্ছে। দেশজুড়ে প্রতিবাদ, বিক্ষোভে নেমেছে সাধারণ মানুষসহ নানা সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন।
এর আগে দেশজুড়ে এক সময়ের চৌকস আর্মি অফিসার মেজর (অব:) সিনহাকে মর্মান্তিকভাবে হত্যার ঘটনা নিয়ে তোলপাড় চলেছে। স্বাস্থ্যখাতেও দুর্নীতির অভিযোগে অনেককে গ্রেফতার ও বরখাস্ত করা হয়েছে। এভাবে ঘটনাগুলো ঘটছে।
গ্রেফতার বা সাসপেন্ড এর আগে বহাল তবিয়তে থাকে অপরাধীরা। ভালো মানুষের মুখোশ পড়ে কর্ম সম্পাদনে ব্যস্ত থাকে। তখন ওদের টিকিটিও কেউ ছুঁতে পারেনা। সাহস থাকেনা কারো ওদের বিরুদ্ধে বলার। অথচ ধরার পর একে একে বের হয় থলের বেড়াল। ধরার আগে তারা অধরাই থেকে যায়। তাদের প্রভাবপ্রতিপত্তির সামনে কেউ দাঁড়াতে পারেনা।
ততদিনে অনেক ক্ষতি হয়ে যায় রাষ্ট্রের, সরকারের সর্বোপরি সাধারণ মানুষের। জানিনা আরো কত অপরাধী এভাবে ঘাপটি মেরে বসে আছে স্তরে স্তরে। হয়তো ওঁত পেতে বসে আছে নতুন কোন অপরাধ সংঘটিত করতে! কেন এমন হবে?
দেশে যারা সাধারণ মানুষের ক্ষতি করে, নষ্ট করে দেশের ভাবমূর্তি কিংবা মানুষের যথাযথ অধিকার নিশ্চিত করেনা তাদের সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে।
অপরাধ করে ধরা পড়ার পর অপরাধীকে বাঁচানোর চেষ্টা করা অথবা আগে নিজেদের লোক ছিল এখন অস্বীকার করা বা বহিষ্কার করে দায় এড়ানোর চেষ্টা করা আমাদের সংষ্কৃতি হয়ে গেছে। এসব বাদ দিয়ে অপরাধ করার আগেই অপরাধীকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করতে হবে।
ধরা পড়ুক ক্ষতির আগেই। আ„র যদি ইচ্ছে করেই অপরাধীকে অপরাধ করার সুযোগ দেওয়া হয় তাহলে দিনশেষে দেখা যাবে নিজের ঘাড়েই এসে পড়েছে তার অপরাধের বোঝা। তখন আর শেষ রক্ষা হবেনা।
আমাদের মানসিকতা বদলাতে হবে। নিজেদের স্বার্থের জন্য যেকোন অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়ার যে ট্রাডিশন চলে আসছে তা থেকে অবশ্যই বের হয়ে আসতে হবে দেশের মানুষের স্বার্থেই। বছরের পর বছর এমন ধারা চলতে থাকলে উন্নয়নের যে স্বপ্ন আমাদের চোখেমুখে সেটা ধূসর হবে। কবে আমাদের মাঝে সৎ ও ন্য্যয়নিষ্ট মনোভাব গড়ে উঠবে কে জানে!
এই দেশটা আমাদের। বহু ত্যাগ, তিতিক্ষার মাধ্যমে স্বাধীনতা পেয়েছি। দেশটাকে মনের মতো করে গড়বো বলে কত আশা আমাদের বুকে। অথচ এসব অপরাধীর জন্য সব অর্জন ধূলোয় মিশছে। বিদেশে ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে।
এজন্য ধরার আগেই যেন কালপ্রিটরা অধরা না থাকে সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে। সাধারণ মানুষকেও সাহসী হয়ে অপরাধীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে। ধর্ষকসহ সকল অপরাধীর শাস্তি হোক দ্রুত। অপরাধীর মনোবল ভেঙ্গে চুরমার করে দিতে হবে।
মানুষ যেভাবে স্বস্তি পায় সেভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে। সাধু সাজার চেষ্টা না করে নিজে থেকেই সংশোধন হতে হবে। শাস্তি দিয়ে তো আর সবকিছু হয়না। অপরাধ থেকে মুক্ত থাকতে চেষ্টা করাটাও কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। একটু চিন্তা করা উচিত নয় কি আমি কাকে ঠকাচ্ছি, কার ক্ষতি করছি, কেন ক্ষতি করছি? দু'নম্বরী করে, অবৈধ উপায়ে পয়সা কামানোতে কোন তৃপ্তি নেই। নেই প্রশান্তি। একদিন তো এসবকিছুর হিসাব দিতে হবে। সে ভয় কি আমাদের আছে? কবে আমাদের মাঝে অপরাধবোধ জাগবে? কবে আমরা হুঁশ হবো?
কীভাবে মানুষের উপকার করা যায়, সহযোগিতা করা যায় সে চিন্তা করাই তো একজন সুনাগরিকের উচিত, একজন ভালো মানুষের বৈশিষ্ট্য। সৎভাবে জীবন গঠন করতে পারাটাও মনুষ্যত্বের বড় পরিচয়। সংখ্যায় কম হলেও বহু মানুষ এখনো আছেন যাঁরা বড় বড় পদে থেকেও সৎভাবে জীবনযাপন করেন। ছাড় দেননা কোন অন্যায় ও অনিয়মকে। এদের জন্যই হয়তো এদেশটা এখনো টিকে আছে। 'লোভ আর হিংসার বশবর্তী না হয়ে দেশ ও দেশের কল্যাণে জীবন বিলিয়ে দেবো'- এই হোক আমার আপনার অঙ্গীকার।
লেখক: শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক