‘বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ’— মামলাটি অদ্ভুত ও হাস্যকর
দণ্ডবিধির ৩৭৫ ধারায় ধর্ষণের সংজ্ঞা দেয়া আছে। সংজ্ঞানুযায়ী পাঁচটি অবস্থায় ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বলা যায়। সেগুলো হলো—
১. নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে
২. নারীর সম্মতি ছাড়া
৩. মৃত্যু বা জখমের ভয় দেখিয়ে
৪. নারীর সম্মতি নিয়েই, কিন্তু পুরুষটি জানে যে সে ওই নারীর স্বামী নয় এবং পুরুষটি তাও জানে, নারীটি তাকে এমন একজন পুরুষ বলে ভুল করেছে যে পুরুষটির সঙ্গে তার আইনসঙ্গতভাবে বিয়ে হয়েছে বা বিবাহিত বলে সে বিশ্বাস করে।
৫. নারীর সম্মতিসহ কিংবা সম্মতি ছাড়া যদি সে নারীর বয়স ১৪ বছরের কম হয়। অর্থাৎ ১৪ বছরের চেয়ে কম বয়সী
মেয়ের সঙ্গে তার মতে বা অমতে যেকোনো ভাবে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করলে তা ধর্ষণ বলে গণ্য হবে। এই আইনের কোথাও নেই- কাউকে কোনো কিছুর প্রলোভন দেখিয়ে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করলে, পরে সেটা পূর্ণ না হলে সেটাকে ধর্ষণ বলা যাবে।
কিন্তু নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০(সংশোধনী২০০৩) এর ৯ ধারায় বলা হয়েছে যদি কোন পুরুষ বিবাহ বন্ধন ব্যতীত ষোল বৎসরের অধিক বয়সের কোন নারীর সাথে তার সম্মতি ছাড়া বা ভীতি প্রদর্শন বা প্রতারণামূলকভাবে তার সম্মতি আদায় করে, অথবা ষোল বৎসরের কম বয়সের কোন নারীর সাথে তার সম্মতিসহ বা সম্মতি ব্যতিরেকে যৌন সঙ্গম করে, তাহলে সে উক্ত নারীকে ধর্ষণ করেছে বলে গণ্য হবে।
কেবল এই আইনের ভিত্তিতেই আজকাল ‘বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ’ নামক অদ্ভুত ও হাস্যকর বিষয়ে মামলা হয়।
অথচ প্রাপ্ত বয়স্ক দু'জন যুবক-যুবতী স্বেচ্ছায় যৌন সঙ্গমে লিপ্ত হলে সেটা কোন অবস্থাতেই ধর্ষণ হতে পারে না। আধুনিক যুগে এই বর্বর আইনের সংস্কার অত্যন্ত জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আজকাল মানুষ বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ আর স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণকে সমপর্যায়ের অপরাধ ভাবা শুরু করেছে। কেবল ভাবা শুরু করেনি, রীতিমতো তর্ক শুরু করে দিয়েছে। জানিনা আমাদের বিবেকবোধ কখন জাগ্রত হবে।
লেখক: শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়