সমালোচনা আর মিথ্যাচার এক নয়
শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কেন যে কোন মানুষই বিএনপি করতে পারেন, সেটা তার ব্যক্তি স্বাধীনতা। কেউ চাইলে জ্যোতির্ময় জিয়া নামে লেখা লিখতে পারেন, সেটাও তার স্বাধীনতা। কেউ চাইলে আওয়ামী লীগের সমালোচনাও করতে পারেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বা বঙ্গবন্ধুর শাসন আমলের সত্যিকারের সমালোচনাকেও দোষের মনে করি না।
কিন্তু আপনি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করবেন, আপনি বলবেন বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার সময় পালিয়ে গেছে, সেটা তো ভয়াবহ মিথ্যাচার! এই মিথ্যাচার কোনভাবেই মানা যায় না।
একজন অধ্যাপক যদি বলেন, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার সময় পালিয়ে গেছে সেই অধ্যাপকের শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যাল নয়, কোন বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষকতা করার নৈতিক অধিকার আছে বলে আমি মনে করি না। কারণ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যিনি এমন মিথ্যাচার করেন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে-মেয়েদের সত্যিকারের শিক্ষা দিতে পারবেন বলে আমি বিশ্বাস করি না।
আপনাদের কারও কারও কাছে খারাপ লাগতে পারে, কিন্তু আমি মনে করি বঙ্গবন্ধু এবং মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে যে কোন মিথ্যা বা অবমাননাকর বক্তব্য বন্ধে দেশে আইন থাকা দরকার। অবশ্যই তার মানে এই নিয়ে যে কারও সত্যিকারের সমালোচনা করা যাবে না বা করলেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করতে হবে। শুধু মনে রাখতে হবে, সমালোচনা আর মিথ্যাচার এক না।
আপনারা যারা সেই অধ্যাপকের পক্ষে লিখছেন, বলেন তো স্বাধীনতার সময় বঙ্গবন্ধু পালিয়ে গেছেন এর চেয়ে বড় মিথ্যাচার আর কী হতে পারে? আপনারা যতোই জ্ঞানী হন, মনে রাখবেন মত প্রকাশের স্বাধীনতা আর দেশের অস্তিত্ব নিয়ে মিথ্যাচার কোনভাবেই এক নয়।
একটু খেয়াল করলে দেখবেন, এই দেশে একদল লোক বঙ্গবন্ধু বা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রায়ই অবমামননাকর কথা বলেন। ৭৫’র পর থেকেই তারা এটা করে আসছে। আরেকদল আছেন যারা ইনিয়ে বিনিয়ে একাত্তরের গণহত্যাকারী বা রাজাকারদের পক্ষে কথা বলেন। খোঁজ নিয়ে দেখেন তো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের গণহত্যাকারীদের পক্ষে ইউরোপে বসে কিছু বলা যায় কি না?
মনে রাখবেন, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গণহত্যাকে অস্বীকৃতি জানানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। একইভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মান নাৎসিদের ইহুদি নিধনের ঘটনা অস্বীকারও (হলোকাস্ট ডিনায়াল ল) শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এমনকি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত ইহুদিদের সংখ্যা নিয়ে কোনো সন্দেহ প্রকাশও ‘হলোকাস্ট ডিনায়াল ল’তে শাস্তির আওতায় পড়ে। আমি মনে করি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, শহীদের সংখ্যা, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব নিয়ে একই রকম আইন হওয়া উচিত।
লেখক: সাংবাদিক, উন্নয়নকর্মী