০৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১৬:৫৯

লাখ লাখ বেকার তরুণের মনের কথা বলছেন পরিকল্পনামন্ত্রী 

কার্টুন: পঙ্কজ রায়  © টিডিসি ফটো

একটি জাতির অমূল্য সম্পদ ও উন্নয়নের অন্যতম ভিত্তি হচ্ছে দেশটির যুব সমাজ। একটি শক্তিশালী ও উন্নত দেশ গড়তে  প্রয়োজন একটি শিক্ষিত, সুসংগঠিত কর্মঠ যুব সমাজ। অথচ আমাদের শিক্ষিত যুব সমাজকে বয়সের সীমা রেখা দিয়ে রাষ্ট্রীয় ভাবে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশে মেধা প্রমাণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত  করা হচ্ছে।

গড় আয়ু বেড়ে ৭২ বছর হলো, যুবনীতি অনুযায়ী ১৮-৩৫ বয়সীরা যুব, চাকরি থেকে অবসরের বয়স বৃদ্ধি পেল,সরকারি চাকরির বেতন বৃদ্ধিতে দেশ ইতিহাস গড়ল। কিন্তু দীর্ঘ ৮-৯ বছর ধরে ছাত্র সমাজ দাবি করলেও সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়স রহস্যজনকভাবে থাকল সেই ৩০ বছরে সীমাবদ্ধ। বেসরকারি নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোও  নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারি নীতি অনুসরণ করছে।

লাখো যুবকের চিৎকার 'চাকরি নয়, মেধা প্রমাণের সুযোগ চাই'। সুযোগ দিতে বাঁধা কোথায়? এদেশে ৬০ বছর বয়সে একজন চাকরিজীবী কাজ করেন, রাজনৈতিক নেতা নেতৃত্ব দেন আজীবন আর ত্রিশোর্ধ্ব চাকরি প্রার্থীদেরকে কর্মক্ষমতাহীনের তকমা দেওয়া হয়। বিষয়টি যেমন একপেশে তেমনি হাস্যকরও বটে।

আমাদের মহামান্য রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ স্পিকার থাকাকালীন ২০১২ সালে ৩১ জানুয়ারি মহান জাতীয় সংসদে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সময় ৩০-এর পরিবর্তে ৩৫ বছর করার পক্ষে মত দিয়েছিলেন। সংসদীয় স্থায়ী কমিটি একাধিকবার সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর এবং অবসরের বয়সসীমা কমপক্ষে ৬৫ বছর করার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। দেশের শীর্ষ সারির জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোর জনমত জরিপে শতকরা ৮০ থেকে ৯০ ভাগ পাঠক চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বৃদ্ধির পক্ষে মতামত প্রকাশ করেছেন ।  

তাছাড়া দেশের শীর্ষ সারির শিক্ষাবিদ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, অসংখ্য সাংসদ, যুবনেতাসহ অনেক গুণীজন শিক্ষিত তরুণদের এই দাবির পক্ষে  বিভিন্ন সময়ে রাজপথ, পত্রিকা, টিভিসহ নানা মাধ্যমে নির্দিষ্ট যুক্তি দেখিয়ে কথা বলছেন।  

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরাও পিছিয়ে নেই এ ব্যাপারে। তারাও বাস্তব রুপগুলো তুলে ধরে নিয়মিত লিখছেন চিঠি-কলাম। এই আন্দোলনের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বছরের পর বছর। প্রচার-প্রচারণাতো চলছেই শিক্ষার্থীদের অসংখ্য ফেসবুক গ্রুপ পেজে। আন্দোলনকারীরাও ছুটেই চলছেন সংশ্লিষ্ট বিষয়ের দপ্তর, কর্তাব্যক্তিসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।

সম্প্রতি সরকারি চাকরিতে প্রবেশ ও অবসরের বয়সসীমা পুর্নবিন্যাসের সময় এসেছে বলে জানিয়েছেন আমাদের পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি মনে করেন, চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়িয়ে ৩৫ কিংবা ৪০ বছর করা যেতে পারে। এছাড়া অবসরের বয়সও ৬৫ করা যেতে পারে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

গত ৪ সেপ্টেম্বর ডয়েচে ভেলেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মাননীয় পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে গেলে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয় চিন্তা করতে হয়। উন্নত দেশে বাংলাদেশের মতো ক্যাডার, বয়স বা নিয়মকানুন নেই। ব্রিটিশরা যে মানসিকতা থেকে এটা করেছিল, তা আর খাটে না। আমাদের বয়স, স্বাধীনতা, সক্ষমতা, বিদ্যাবুদ্ধি বেড়েছে। সুতরাং এটার পুনর্বিন্যাস প্রয়োজন। 

মাননীয় পরিকল্পনামন্ত্রী মহোদয় যথার্থই বলেছেন, তিনি ত্রিশোর্ধ্ব উচ্চ শিক্ষিত লাখ লাখ বেকার তরুণের মনের কথাই বলেছেন। তারপরও বারবার উপেক্ষিত হচ্ছে এসব পরামর্শ, মতামত।

বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বৃদ্ধির কথা বলেছে।প্রতিশ্রুতি দেওয়া আওয়ামীলীগ সরকার এখন  ক্ষমতায়। তবু যুব সমাজের এই কাঙ্খিত ন্যায্য দাবিটি এখনও অমীমাংসিত ।

অবশ্য হাতে গোনা কিছু বুদ্ধিজীবী, রাজনৈতিক নেতা ও আমলা সেশনজট কিংবা বেকারত্বের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়াসহ নানান অজুহাতে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির বিপক্ষে বলছেন। কিন্তু তাঁরা হাজার হাজার সরকারি শূন্য পদ পূরণে তাগাদা ,জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে  কর্মসংস্থান বৃদ্ধির কথা বলছেন না। প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা দিয়ে কিভাবে শিক্ষিত যুবদের উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা যায়, কিভাবে বেকার যুবদের ভাতার আওতায় আনা যায় তা অদৃশ্যমান। তাঁরা সব কিছুতেই উন্নত দেশের উদাহরণ দিচ্ছেন, কিন্তু বিশ্বের দেড় শতাধিক দেশের চাকরিতে প্রবেশের বয়স বিবেচনায় আনছেন না। তাঁদের অনেকের দৃষ্টিভঙ্গি এমন যে, হয় তাঁরা এদেশের উচ্চ শিক্ষিত কর্মক্ষম লাখ লাখ বেকার যুবকের মধ্যে সরকার বিদ্বেষী মনোভাব বৃদ্ধিতে তৃপ্ত নয়তো যুবদের প্রত্যাশা বুঝতে ব্যর্থ।

স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপ্ন দেখতেন তরুণ-যুবরাই একদিন তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে রাখবে অসামান্য আবদান। অথচ আজ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষিত যুবদের ন্যায্য দাবিসমূহ পূরণে বর্তমান সরকারও যেন নীরব দর্শক!

লেখক: ফ্রিল্যান্সার